ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৩ কোটি রুপির বেশি মূল্যের ৪৫টি স্বর্ণের বার জব্দ
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
স্বর্ণের বার ও আটককৃত চোরাকারবারি

ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তের পেট্রাপোল স্থলবন্দরে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের বার জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। 

শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোলে এই সাফল্য পেয়েছে বিএসএফ। বিএসএফ’এর দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের অধীন ১৪৫ ব্যাটালিয়নের আইসিপি পেট্রাপোলে দায়িত্বপ্রাপ্ত জওয়ানরা ৪৫টি স্বর্ণের বারসহ একজন চোরাকারবারিকে গ্রেফতার করে। জব্দকৃত স্বর্ণের ওজন ৫২৪২. ৯১০ গ্রাম এবং যার মূল্য আনুমানিক ৩,০৭,৪৪,৪২৪ রুপি। 

জানা গেছে, বিএসএফ জওয়ানদের নজরদারি ফাঁকি দিয়ে চোরাকারবারিরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে ফেরত আসা একটি খালি ট্রাকের হোস পাইপের কাছে তৈরি গর্তের ভেতর ওই স্বর্ণের বারগুলিকে লুকিয়ে আনার চেষ্টা করছিল।

শনিবার বিএসএফের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, শুক্রবার ভোর ৪.১৫ নাগাদ প্রাপ্ত সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে, আইসিপি পেট্রাপোলের কর্মীরা যানবাহন চেকিংয়ের সময় আইসিপি বেনাপোল থেকে আসা একটি সন্দেহজনক ট্রাক (রেজি নং WB–৪১E ৯৫৯৫)কে অনুসন্ধানের জন্য আটকায়। তল্লাশির সময় জওয়ানরা ট্রাকের হোস পাইপের কাছে তৈরি একটি গর্ত থেকে টেপ দিয়ে মোড়ানো এবং কাপড়ে বাঁধা ২১টি স্বর্ণের বড় উদ্ধার করে। এরপরই ওই মালামাল জব্দ করে বিএসএফ। জব্দ করা হয় ট্রাকটিকেও। সেই সাথে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ট্রাক চালককে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নেওয়া হয়। সম্রাট বিশ্বাস নামে অভিযুক্ত ট্রাকচালক উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পিরোজপুর গ্রামের বাসিন্দা।  

এরপর, সমস্ত নথিপত্রের আনুষ্ঠানিকতা শেষে জব্দ করা ২১টি স্বর্ণের বার ও ট্রাক চালককে পেট্রাপোল কাস্টম অফিসের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছিল, তখন সেই ট্রাকে আরও স্বর্ণের বার লুকিয়ে থাকার বিষয়ে জানতে পারে বিএসএফ। বাহিনীর সন্দেহ হওয়ায় কোম্পানি কমান্ডার তৎক্ষণাত এক সিভিল মেকানিককে ডেকে ট্রাকের ইঞ্জিন খুলে তল্লাশি করেন, যেখানে আলাদাভাবে স্বর্ণের বার লুকিয়ে রাখার খবর জানা যায়। দুপুর প্রায় ২.৪০ মিনিট নাগাদ ট্রাকের ইঞ্জিন খুললে আরও ২৪টি স্বর্ণের বার টেপে মোড়ানো অবস্থায় পাওয়া যায়। এভাবে ট্রাক থেকে মোট ৪৫টি স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট বিশ্বাস জানায়, তিনি ট্রাকচালক হিসেবে কাজ করেন এবং নিয়মিত রপ্তানি পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে যান। তিনি আরও জানান, গত ২১ আগস্ট একটি ট্রাকে স্পঞ্জ আয়রন বোঝাই করে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। ২৫ আগস্ট ভারতে ফেরার সময় বেনাপোল আইসিপি'এর বাংলাদেশ পার্কিং এলাকায় বেনাপোলের বাসিন্দা সুমন মন্ডল তার সাথে যোগাযোগ করে এবং তাকে ওই ৪৫টি স্বর্ণের বার দেয়।'

সম্রাট আরও জানান, সুমন মণ্ডলের নির্দেশে ভারতে এসে ওই স্বর্ণের বারগুলো গোপালনগর গ্রামের সালাম মণ্ডলের হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ভারতে প্রবেশের সময় পেট্রাপোল আইসিপির প্রধান ফটকের কাছে পৌঁছে যানবাহন তল্লাশির সময় বিএসএফ ৪৫টি স্বর্ণের বারসহ তাকে ধরে ফেলে।    

আটক চোরাকারবারীকে জব্দকৃত স্বর্ণের বারসহ পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পিএন্ডআই, কাস্টম অফিস, কলকাতার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

বিএসএফ-এর গোয়েন্দারা এটাও জানতে পেরেছে যে, গোপালনগরের বাসিন্দা সালাম মণ্ডল, পেট্রাপোলের বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন কারিকর বা সামাদ মণ্ডল- তারা প্রত্যেকেই সোনা চোরাকারবারের সাথে যুক্ত। আর এই চক্রের প্রধান মাথা জয়ন্তীপুর গ্রামের বাসিন্দা আজগর শেখ।

এদিকে সীমান্তে বাহিনীর এই সাফল্যে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ডিআইজি (জনসংযোগ) এ.কে আর্য। তিনি বলেন 'বিএসএফ চোরাকারবারিদের প্রতিটি কাজের বিরুদ্ধে তাদের নজরদারি আরও শক্ত করেছে। চোরাকারবারিদের প্রতি তার হুঁশিয়ারি ‘চোরাকারবারিরা যেন চোরাচালানের পথ ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে যোগ দেয়। অন্যথায় ঘৃণ্য উদ্দেশ্য পোষণ করে রাখা কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না।’ 

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল



এই পাতার আরো খবর