ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পিকে হালদারের জামিন খারিজ, পরবর্তী হাজিরা ১৭ নভেম্বর
দীপক দেবনাথ, কলকাতা প্রতিনিধি
পিকে হালদার

গুরুতর অসুস্থ মা লীলাবতী হালদার। শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত একাধিক সমস্যা নিয়ে কলকাতার বাগুইহাটির ভিএআইপি অ্যাপেক্স মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি ৭৯ বছর বয়সী এই নারী। সেই অসুস্থ মাকে দেখতে চেয়ে কলকাতার নগর দায়রা আদালতে জামিনের আরজি জানিয়েছিলেন দুই ছেলে পিকে হালদার ও প্রাণেশ হালদার। কিন্তু আদালত সেই জামিনের আরজি খারিজ করে দিয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে খবর গত ২১ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ ভর্তি করা হয় কলকাতার এই হাসপাতালে। লীলাবতী দেবীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি ফেসিয়াল ডেভিয়েশন এবং ডিসরিয়েন্টেশন সমস্যায় ভুগছেন তিনি। 

বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত পি.কে হালদার, ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার- এই ছয় অভিযুক্তকে সোমবার নগর দায়রা আদালতে (ব্যাংকশাল) এর স্পেশাল সিবিআই কোর্ট-৩ বিচারক শুভেন্দু সাহার এজলাসে তোলা হয়। পিকে হালদার ও প্রাণেশ কুমার হালদারের জামিনের আরজি জানিয়ে আদালতে সওয়াল করেন অভিযুক্তদের আইনজীবী শ্যামল ঘোষ। শ্যামল ঘোষ জানান লীলা দেবী বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন, তিনি তার ছেলেদের দেখতে চেয়েছেন। আমরা আদালতের কাছে ১০ দিনের জামিনের আবেদন জানিয়েছি কিন্তু ১০ দিন না হলেও অন্তত একদিন হলেও তারা যাতে তাদের মায়ের সাথে থাকতে পারেন। সেক্ষেত্রে কড়া নিরাপত্তায় অসুস্থ মা'কে দেখাতে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেন আইনজীবী।

একই সাথে এই মামলায় আরেক অভিযুক্ত আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদারের শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তার জামিনের আরজি জানান আইনজীবী। তিনি বলেন আমানা সুলতানা নানা রকম শারিরীক সমস্যায় ভুগছেন। ব্যক্তিগত খরচে তিনি বাইরে চিকিৎসা করাতে চান।

যদিও এই জামিনের প্রবল বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী। তার দাবি পিকে হালদার বহু কোটি টাকা তছরুপের দায়ে অভিযুক্ত, তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। বাইরে বেরোলে তথ্য লোপাট হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এমনকি বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। তাছাড়া তাদের আরেক ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার এখনও পলাতক। তবে পুলিশি নিরাপত্তা দিয়ে যদি আদালত হাই প্রোফাইল মামলার প্রধান অভিযুক্তকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে, তাতে তার কোন আপত্তি নেই বলেও জানান অরিজিৎ চক্রবর্তী।    অন্যদিকে আমানা সুলতানেরও জামিনের বিরোধিতা করেন অরিজিৎ চক্রবর্তী। তার দাবি জেল কর্তৃপক্ষের তরফে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আমানা সুলতানকে তাদের তরফে সেরা স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। তিনি যতবার চেয়েছেন, ততবারই কলকাতার সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল এসএসকেএম'এ চিকিৎসা করানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। যদিও এর আগে আমানা সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক জানতে চান 'আপনি কেমন আছেন?'। উত্তরে আমানত সুলতানা জানান 'আগে থেকে অনেকটাই ভালো'। এই বিষয়টি উত্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানায় 'এক্ষেত্রে তার শারীরিক অবস্থার কথা বলে জামিনের আরজি জানানোর কোন অর্থই হয় না।' 

উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক জানান ১৭ নভেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। সেক্ষেত্রে ওইদিন মোট ছয় অভিযুক্তকে ফের কলকাতার আদালতে তোলা হবে। 

সেই সাথে দুই পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে উভয়েরই জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। যদিও বিচারক এও জানান আদালতের তরফে জামিনের খারিজ করে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে এ ব্যাপারে প্রেসিডেন্সি জেল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। পি.কে হালদার ও তার ভাইকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে তারা উভয়েই যেন কারাগার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি অবগত করে জামিনের আরজি জানাতে পারেন। তাদের উভয়কে পুলিশ এসকর্ট করে নিয়ে গিয়ে তাদের অসুস্থ মা'কে দেখানোর ব্যবস্থা করার বিষয়টি কারাগার কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করে দেখবে। 

উল্লেখ্য বর্তমানে অভিযুক্ত পিকে হালদার সহ ৫ পুরুষ অভিযুক্ত রয়েছে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কারাগারে, অন্যদিকে একমাত্র নারী অভিযুক্ত রয়েছেন আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। 

বহু আলোচিত এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা 'এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট' (ইডি) সূত্রে খবর, ২০২২ সালের ১৪ মে পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাটের বৈদিক ভিলেজ, বোর্ড হাউস ১৫, গ্রিনটেক সিটি থেকে গ্রেফতার করা হয় পিকে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে শিবশঙ্কর হালদারকে। 

এছাড়াও রাজ্যটির বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে পিকে হালদারের আরও ৫ সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন তার ভাই প্রাণেশ হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র, ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদার এবং আমানা সুলতানা ওরফে শর্মী হালদার। 

এরপর ওই বছরের ২১ মে 'অর্থ পাচার সংক্রান্ত আইন-২০০২' (পিএমএলএ)-এ তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। 

এদিকে এই মামলার তদন্তকারী সংস্থা ইডি সূত্রে খবর রাজ্যের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর ছত্রছায়ায় ছিলেন এই পি কে হালদার। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে বিশাল সম্পত্তি তৈরি করা থেকে ভারতীয় পরিচয় পত্র ও যাবতীয় নথিপত্র তৈরিতে সহায়তা করেছিলেন ওই দুই প্রভাবশালী মন্ত্রী। শুধু তাই নয় নিজের ব্যবসায়িক প্রতিবন্ধকতা এড়াতে, সমস্ত ধরনের ঝুট-ঝামেলা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে রাজ্যটির ওই দুই মন্ত্রীর একজনকে পিকে হালদার নিয়মিত মাসোহারাও দিতেন বলেও জানা গেছে।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর