উত্তর পূর্ব ভারতের পাহাড়ী রাজ্য সিকিমে আকস্মিক মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে এখনও পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ প্রায় ১০২ জন, যার মধ্যে ২২ জনই সেনা জওয়ান। তাদের খোঁজে বুধবার থেকেই নিরবিচ্ছিন্ন অভিযান চলছে।
বুধবার সকালে উত্তর সিকিমের লোনাক লেকে মেঘ বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীতে আচমকা পানির স্তর বৃদ্ধি পায়। আর তাতেই দেখা দেয় বিপত্তি। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অন্তত বিশ হাজার মানুষ। নিখোঁজ ২৩ জন সেনা জওয়ানের মধ্যে বৃহস্পতিবার সকালে ১ জওয়ানকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।
সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর নিহত ১৪ জনই সাধারণ মানুষ। সিকিমের বিভিন্ন অংশে আটক পড়েছে প্রায় ৩ হাজার পর্যটক। আটকে পড়া পর্যটকদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বিদেশি নাগরিকরাও আছেন বলেও জানা গেছে। দুর্ঘটনার সময় চুংথাং এলাকায় তিস্তা নদীতে স্টেজ-৩ এ বাঁধে কর্মরত প্রায় ১২ থেকে ১৪ জন শ্রমিক এখনো আটকে রয়েছেন।
সিকিমের মুখ্য সচিব ভি.বি পাঠক জানিয়েছেন, হড়পা বানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোটা রাজ্যে ১৪টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৯ সড়ক বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন (বিআরও) এ অধীন, বাকিগুলি রাজ্য সরকারের অধীনে। ডিখু, সিংটাম, রঙ্গপো সহ তিস্তা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত একাধিক শহর ক্ষতিগ্রস্ত। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত গ্যাংটক, মাঙ্গান, প্যাকিয়ং এবং নামছি জেলার স্কুল কলেজসহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত সিংটাম ঘুরে দেখেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিএস তামাং। সিংটাম সম্প্রদায়ের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সেরেছেন এবং রাজ্যের মানুষকে সতর্ক এবং নিরাপদে থাকতে বলেছেন। পাশাপাশি ফোনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে কথা বলে সহায়তা চেয়েছেন, যাবতীয় আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীও।
যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ত্রাণ বন্টন ও উদ্ধারকার্যে হাত লাগিয়েছে ফায়ার সার্ভিস, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলা বাহিনী। যদিও ইতিমধ্যেই দুই হাজার মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিকিম স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি (এসএসডিএমএ)। দুর্গতদের সাহায্যার্থে ডিখু, সিংটাম, রঙ্গপো, আদর্শ গাঁও এলাকায় ২৬টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সিকিমের সাথে ভারতের বাকি অংশের সংযোগকারী জাতীয় সড়ক এনএইচ-১০ এর একটি অংশ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের মধ্যেও রেশন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য সেনাবাহিনী এবং ন্যাশনাল হাইওয়েজ এন্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এর সহযোগিতায় বেইলি ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তিস্তার এই ভয়াল রূপের কারণে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ এবং বাংলাদেশেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ