ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালু হবেই। এটাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। এই আইনকে দেশে চালু করেই ছাড়বো।আগামী বছরের গোড়ায় ভারতে লোকসভার নির্বাচন। আর সেই নির্বাচনের আগে ফের অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি।
বুধবার কলকাতার ধর্মতলায় বিজেপির সমাবেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ ইস্যুতে তৃণমূল পরিচালিত সরকারকে নিশানা করেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ ইস্যু এ রাজ্যে চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। প্রতিবেশি রাজ্য আসামের মানুষ বিজেপি সরকারকে ক্ষমতায় আনার পর সেখান থেকে অনুপ্রবেশ কমে গেছে, এমনকি একটা পাখি পর্যন্ত ঢুকতে পারে না। অথচ সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের ভোটার কার্ড কিংবা আধার কার্ড দরকার হলে এই নাম্বারে যোগাযোগ করুন। রাজ্যের পুলিশ একেবারে চুপ। আপনারাই আমাদের বলুন যে রাজ্যে এত অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে সেখানে কখনো উন্নয়ন হতে পারে? আর এই কারণেই মমতা ব্যানার্জি 'সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন' (সিএএ)'এর বিরোধিতা করছে। তিনি এটা চালু করতে দিচ্ছেন না। কিন্তু আমি এই সভা থেকে পরিষ্কার করে বলে দিতে চাই মমতা দিদি সিএএ দেশের একটা আইন। এটাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না। আর আমরা এই আইনকে কার্যকর করেই ছাড়বো।
অতীতের একটি ঘটনা স্মরণ করে অমিত শাহ বলেন, একটা সময় অনুপ্রবেশ ইস্যুতে এই মমতা ব্যানার্জিই সংসদের অধিবেশন চলতে দেয়নি। অথচ আজ এই অনুপ্রবেশকারীদের জন্য ভোটার কার্ড আধার কার্ড তৈরি করে দিচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা ওপার থেকে (বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান) থেকে এসেছে তাদের সকলেরই এই দেশের উপর অধিকার আছে ঠিক যতটা অধিকার আমার আপনার রয়েছে। সেইসব মানুষদের তাদের অধিকার থেকে কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না।
এদিনের সভাতে থেকে রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি, সিন্ডিকেট, তোষণের রাজনীতিসহ একাধিক ইস্যুতেও তৃণমূলকে নিশানা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, মা-মাটি-মানুষের সরকারের স্লোগান দিয়ে, পরিবর্তনের কথা বলে এক দশক আগে এরাজ্যে তৃণমূল সরকার এসেছিল। কিন্তু আমরা আপনাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই বাংলায় কি পরিবর্তন হয়েছে? তোষণ নীতি বন্ধ হয়েছে? দুর্নীতি বন্ধ করা গেছে? কিছুই হয়নি। মোদীজি কয়েক কোটি রুপি বাংলার উন্নয়নের জন্য পাঠায় কিন্তু তৃণমূল সরকার বাংলার গরীব মানুষদের কাছে সেই রুপি পৌঁছে দেয় না। গোটা দেশে নির্বাচন কেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনা সবচেয়ে বেশি হয় এই বাংলাতে। গোটা দেশে গরীব কম হচ্ছে, কিন্তু বাংলা থেকে দরিদ্রতা ঘোচার কোন লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। যে বাংলা একসময় সাহিত্য, সংস্কৃতি, কলা, স্বাধীনতা আন্দোলন, উদ্যোগপতি তৈরি সব ক্ষেত্রেই গোটা দেশকে নেতৃত্ব দিত, সেই বাংলা এখন সবচেয়ে পিছে গেছে। দিদির সরকারই এই বাংলাকে বরবাদ করে দিয়েছে।
এদিনের এই সভা থেকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদিকে ফের একবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করার আহ্বান রাখেন তিনি। পাশাপাশি আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজেপিকে জয়ী করে রাজ্যে বিজেপির সরকার গঠনের ডাক দিয়েছেন অমিত শাহ।
সবাই উপস্থিত বিজেপি কর্মী সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি রুখতে ও উন্নয়ন করতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে মমতা সরকারকে উৎখাত করুন এবং এখানে বিজেপি সরকারকে নিয়ে আসুন। কারণ আমরা এমন সরকার চাই যে সরকার উন্নয়ন করবে। ২০২৪ সালে মোদীজিকে ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করুন এবং ২০২৬ দলের বিধানসভা নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জিতিয়ে বিজেপিকে সরকারে আনুন।
তার অভিমত 'সিপিএম, কংগ্রেস বা তৃণমূল কেউই পারবেনা। মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকারই একমাত্র বাংলাকে আগে নিয়ে যেতে পারে এবং সোনার বাংলা গড়তে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মোদি সরকারই গোটা দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদী নির্মূল করেছে, জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করেছে, নতুন সংসদ বানিয়েছে, ভারতের তিরঙ্গাকে চাঁদে পাঠানো হয়েছে, ভারতের অর্থনীতিকে পঞ্চম স্থানে নিয়ে এসেছে।
বিডি প্রতিদিন/এএ