ঢাকা, রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সীমান্ত হত্যা নিয়ে নিয়ে বিএসএফকে তোপ মমতা ব্যানার্জীর
দীপক দেবনাথ, কলকাতা
বক্তব্য রাখেন মমতা ব্যানার্জি

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মানুষ হত্যা নিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর বিরুদ্ধে ফের সরব হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।  তার প্রশ্ন রাজ্য পুলিশ আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখে। সেক্ষেত্রে বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশের অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলে কেন রাজ্য পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয় না? কেন তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়? 

শুক্রবার রাজ্যের আলিপুরদুয়ার জেলার তুফানগঞ্জে এক নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিএসএফকে নিশানা করে এই মন্তব্য করেন মমতা। 

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন বিজেপি ঝামেলা করছে, বিএসএফ গুলি চালাচ্ছে। আর গুলি চালানোর পরেই তারা বলছে ওই ব্যক্তি বাংলাদেশ থেকে এসেছিল, সেই জন্য গুলি ছুঁড়েছি।  এরপরই প্রশ্ন রেখে মমতা বলেন, ‘কিন্তু গুলি ছুঁড়তে কে বলেছে? আপনারা কেন ওই ব্যক্তিকে পুলিশের হাতে তুলে দেননি? পুলিশ আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখে। পুলিশ তদন্ত করে দেখতো কি হয়েছে? কিন্তু বিএসএফকে গুলি চালানোর অনুমতি কে দিয়েছে?’

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর স্কুলকে খুব সম্মান করি। কিন্তু সেই স্কুলকেও বিজেপির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তারা কি শিখবে? ওরা ইতিহাস বদলে দিয়েছে, ওরা আম্বেদকর কে মানে না।

উল্লেখ্য বিএসএফকে নিয়ে মমতার অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন সময়ে বিএসএফের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের ওপর বিএসএফের অত্যাচারের অভিযোগও তুলেছিলেন মমতা।

গত মার্চে কলকাতার ধর্মতলায় এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিএসএফকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। বিএসএফএর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইসকনের এক পুরোহিতকে অত্যাচার করে মেরে মেলার অভিযোগও তুলেছিলেন তৃণমূল প্রধান। 

আগামী ১৯ এপ্রিল প্রথম দফায় গোটা দেশের ১০২টি আসনে ভোট হবে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্র। সেই বিষয়টি উল্লেখ করে এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯ এপ্রিল কেন প্রথম দফার ভোট রাখা হয়েছে জানেন? কারণ ভোটের আগে দাঙ্গা বাঁধানোর একটা চেষ্টা করছে বিজেপি। 

এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সামনে আমাদের পহেলা বৈশাখ আছে, তার আগে ঈদ রয়েছে, রেড রোডে ওদের ঈদের নামাজে আমি অংশ নিই। তাছাড়া সামনেই ১৬ এপ্রিল অন্নপূর্ণা পূজো, ১৭ এপ্রিল রামনবমী আছে। তাই ভোটের আগে দাঙ্গা বাধানোর একটা চেষ্টা চলছে। কিন্তু দাঙ্গা করে ভোট করার চেষ্টা করবেন না। তাহলে সরকার দাঙ্গা কারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা নেবে। দাঙ্গাকারীদের একজনকেও ছাড় দেওয়া হবে না।

মমতা বলেন, গোটা বিশ্ব ভারতের এই নির্বাচনের দিকে নজর রাখছে। তাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যাতে ভারতে নির্বাচন হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ভারতের গণতন্ত্রকে আপনি ছুরি দিয়ে হত্যা করবেন না। যদি জেতার ব্যাপারে আপনি আত্মবিশ্বাসী হন, তবে সবাইকে ভোট করতে দিন। কেন গায়ের জোরে, ষড়যন্ত্র বা অত্যাচার করে নির্বাচন হবে? সভামঞ্চ থেকে বিজেপিকে ভোট না দেওয়ারও আরজি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সিপিএম বা কংগ্রেসকে ভোট দেওয়ার অর্থ বিজেপিকে ভোট দেওয়া। 

এদিনের নির্বাচনী প্রচারণার অনুষ্ঠান থেকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ইস্যুতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করলেই তারা বেনাগরিক হয়ে যাবে, তাদেরকে দেশ ছাড়া হতে হবে। ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে আপনাদের বলা হবে বাংলাদেশ থেকে আপনার বাবা-মায়ের ৫০ বছরের আগেকার জন্মের সনদ নিয়ে আসুন। কিন্তু আপনারা কি সেই সনদ আনতে পারবেন? তিনি যতদিন রাজ্যে আছেন ততদিন কাউকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত হতে হবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা।

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল



এই পাতার আরো খবর