ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জেনে নিন সায়াটিকা স্নায়ুর ব্যথা কী, যা করা জরুরি
অনলাইন ডেস্ক
প্রতীকী ছবি

শরীরের মধ্যে যেকোনও ব্যথা বা যন্ত্রণা স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতন ঘটায়। কোনও কোনও ব্যথা এতটাই মারাত্মক হতে পারে যে উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকুও থাকে না। সায়াটিকা স্নায়ুর যন্ত্রণা বা সায়াটিকা নার্ভের ব্যথা তেমনই এক সমস্যা। যদিও ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে ওষুধ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে সম্পূর্ণ সেরে ওঠা যায়।

ব্যথার লক্ষণ

হঠাৎ করে কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত বিশেষ করে গোড়ালির পিছন পর্যন্ত অসহ্য ব্যথায় হাঁটাচলা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। পা ফেলাই তখন দায় হয়ে যায়। ঠিক মতো দাঁড়ানোই যায় না। কিছু ক্ষেত্রে আলপিন ফোটার মতো যন্ত্রণা হয় পায়ের পাতায়। কখনও আবার পায়ের বিশেষ বিশেষ অংশে জ্বালাভাব অনুভূত হয়, অবশ হয়ে যায়। সাধারণত একসঙ্গে দুটো পায়ে সায়াটিকার ব্যথা হয় না। এই ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই প্রথমে ঠান্ডা-গরম সেঁক দিয়ে থাকেন, ব্যথা কমানোর মলম লাগান বা প্যারাসিটামল ওষুধ খান। কিন্তু এতে সাময়িকভাবে ব্যথা কমলেও ক’দিন পরে আবার ফিরে আসবে। এই সমস্যার উৎপত্তি নার্ভ থেকে। তাই দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কেন হয়?

শুধু কি বয়স্কদের এই সমস্যা হয়? ‘‘না, বরং অল্পবয়সীদের বা মধ্য পঞ্চাশের নীচেই এই রোগ বেশি হয়। কারণ কমবয়সীরাই বেশি পরিশ্রম করেন, প্রায়ই ভারী জিনিস তোলার মতো কাজ করেন। এই ধরনের কাজ করতে গিয়ে হঠাৎ পেশি ও স্নায়ু আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সায়াটিকা আমাদের শরীরের দীর্ঘতম ও সবচেয়ে মোটা নার্ভ। যা শুরু হয় স্পাইন বা মেরুদণ্ড থেকে। এর একাধিক রুটের মধ্যে কিছু আসছে কোমরের নীচের দিকে লাম্বার স্পাইন থেকে। সেখানে আঘাত পেলেও এই ব্যথা হয়। সে জন্য এই সমস্যাকে লাম্বোসায়াটিকা ব্যথাও বলা হয়। আর বাকি রুটের উৎপত্তি মেরুদণ্ডের শেষ অংশ থেকে, যাকে স্যাক্রাম বলে। এই নার্ভরুটগুলো একসঙ্গে হয়ে ডান-বাঁ দু’দিকে কোমর ও নিতম্বের নীচ থেকে একেবারে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত চলে যায়।

সায়াটিকা ব্যথা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। গাড়িতে যেমন শক অবজার্ভার থাকে তেমন মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝেও ছোটছোট হাড়ের বাক্সের মাঝে ডিস্ক থাকে, যারা শক অবজার্ভারের কাজ করে। কোনও কারণে যখন ডিস্ক ফেটে ভিতরের জেলির মতো মাংসপিণ্ড বেরিয়ে এসে নার্ভরুটগুলোতে ধাক্কা মারে, তখন সেখানে ব্যথা হয়। এটি টিপিক্যাল সায়াটিকা ব্যথার কারণ। 

এছাড়া নার্ভের কোনও অসুখ হলে তার থেকেও এই ধরনের সমস্যা হয়। স্পাইনাল কর্ডে টিউমর হলে তার চাপ নার্ভরুটগুলোর উপরে পড়ে এই ধরনের ব্যথা হয়। সায়াটিকা নার্ভ যেখান দিয়ে নামছে, সেখানকার পেশিতে যদি আঘাত লাগে বা পেশি ছিঁড়ে যায় তা হলে ব্যথা হয়। এই ধরনের সমস্যাকে পাইরিফরমিস সিনড্রোম বলে। এক্ষেত্রে টিপিক্যাল সায়াটিকা ব্যথার মতো কোমর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত টানা ব্যথা নাও হতে পারে। কখনও মেরুদণ্ডের পিছনে, শুধু পায়ের নীচে বা কাফ মাসল বা থাইয়ের অংশবিশেষে ব্যথা হতে পারে।

ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস সায়াটিকা ব্যথার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া দুর্ঘটনার জন্য কোমরে আঘাত পেলে বা ভেঙে গেলেও সায়াটিকা ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় প্রেগন্যান্ট মহিলাদের এই সমস্যা হয়। গর্ভাবস্থায় একধরনের হরমোন শরীরের ভিতরে নিঃসরণ হয়, যা লিগামেন্টগুলো শিথিল করে দেয়। এর ফলে মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো পিছলে গিয়ে এই ব্যথা হতে পারে। যদিও প্রেগন্যান্সির জন্য এই সমস্যা হওয়ার রেকর্ড বেশ কম।

বিধিনিষেধ

এই ব্যথার সমস্যায় প্রথমেই অন্তত দু’সপ্তাহ শুয়ে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। এ সময়ে হাঁটাচলা যত কম করা যায়, তত তাড়াতাড়ি সুফল পাওয়া যাবে। চিকিৎসা চলাকালীন কোনও ভারী জিনিস বহন করা বা মাটি থেকে তোলা যাবে না। বেন্ট হওয়া বা মাটিতে বসা যাবে না। এতে নার্ভের উপরে আরও চাপ পড়বে আর চাপ পড়লে ব্যথা বাড়বে। 

যারা জিমে গিয়ে শারীরচর্চা করেন, এ সময়ে জিমে যাওয়া বন্ধ রাখুন। সুস্থ হওয়ার পরে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তবেই এক্সারসাইজ শুরু করবেন। যারা টানা বসে কাজ করেন, তারা মাঝেমাঝে চেয়ার থেকে উঠে হেঁটে আসুন এবং মেরুদণ্ডের উপযুক্ত চেয়ার ব্যবহার করতে হবে। সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়ার পরেও বসা ও শোওয়ার ভঙ্গি ঠিক রাখা জরুরি। ড্রাইভিংয়ের সময় পিঠের সাপোর্টের জন্য সিটে ছোট একটা বালিশ রাখা প্রয়োজন। সায়াটিকা ব্যথা কমে যাওয়ার পরেও পিঠের পেশি শক্তিশালী রাখতে, হাড়ের জয়েন্টগুলো সচল রাখতে ও হাড় মজবুত রাখতে চিকিৎসকেরা কিছু ব্যায়াম দিয়ে থাকেন, তা আজীবন করে গেলে শুধু সায়াটিকা নয় অন্য অনেক সমস্যার নিরাময় সম্ভব। 

‘‘শুধু নিরাময়ের পরে নয়, একটা বয়সের পর থেকে পেশি মজবুত রাখা ও লিগামেন্ট ফ্লেক্সিবল রাখার জন্য এ ধরনের এক্সারসাইজ করলে এই ধরনের সমস্যা অনেকটাই এড়িয়ে যাওয়া যায়। পাশাপাশি অবশ্যই পুষ্টিকর ডায়েটের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

খাওয়া-দাওয়ায় কোনও বিধিনিষেধ না থাকলেও ধূমপান এবং অতিরিক্ত জাঙ্কফুড খাওয়া এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। সায়াটিকা নার্ভের যন্ত্রণা শুরু হলে বাড়িতে বসে না থেকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। যত তাড়াতাড়ি রোগের উৎস জানা যাবে তত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করে সেরে ওঠা সম্ভব হবে।

বিডি প্রতিদিন/কালাম



এই পাতার আরো খবর