ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সতেজ থাকুন শীতে
মডেল : তৌফিক আরা কথা উষা, ছবি : আর্কাইভ

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শীত আসে পরিবর্তনের বার্তা নিয়ে। আপাদমস্তক রং বদলে প্রকৃতি ঢেকে যায় কুয়াশার চাদরে। রুক্ষতা আর শুষ্কতা পাল্লা দিয়ে চলে একে অন্যের সঙ্গে। এমন রুক্ষতার দিনে শীতের আমেজ কাটিয়ে নতুন পরিবেশে আর প্রকৃতির মাঝে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া কিছুটা কষ্টসাধ্য। তাই নিজেকে প্রাণবন্ত আর সজীব রাখতে চাই কিছু পরিকল্পনা। শীতের শুরুতে যেমন তেমনি শীতের শেষেও এ সময়ের আমেজে থাকে ভিন্নতা। তাই শীতে নিজেকে প্রাণবন্ত রাখতে খাবার তালিকায় রাখতে হয় নজরদারি। শীতে সতেজ থাকার কৌশল নিয়ে আজকের আয়োজন।

শীত মানেই ত্বকে রুক্ষতার আবির্ভাব। ঠিকমতো যত্ন না হলে বিপদের শেষ নেই। তাই বাধ্য হয়ে সেদিকে খেয়াল রাখতেই হয়। আর ত্বকের সৌন্দর্য নির্ভর করে সুস্থতায়। এ প্রসঙ্গে বিউটি স্যালন ওনার অব রোজ বিউটিকেয়ার অ্যান্ড স্যালনের বিউটি এক্সপার্ট সানিয়া আফরিন বলেন, ‘এ সময়ের রুক্ষতা, ত্বক ও চুলের জন্য যেন শাস্তি। শীতের ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে গোসলে সাবানের পরিবর্তে শাওয়ার জেল ব্যবহার উত্তম। গোসল শেষে ভালো মানের ময়েশ্চারাইজ লোশন ব্যবহার করাটাও জরুরি। লোশন ত্বকের রুক্ষ ভাব দূর করে। চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।’

শীতে কোমল ও মখমলি ত্বক সবারই কাম্য। কিন্তু শীতের রুক্ষ আবহাওয়া এবং অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার ত্বককে করে তোলে আরও রুক্ষ আর মলিন। তাই এমন দিনে ত্বকের টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন গোলাপজল। এটি ত্বকের রুক্ষতা দূর করতে দারুণ কার্যকর। নিত্যদিনের ময়েশ্চারাইজার বা লোশনের সঙ্গে কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে ব্যবহার করলে দেখবেন ত্বক হয়ে উঠবে আরও কোমল ও মসৃণ। আর শীতে পা ফাটার সমস্যা ছোট-বড় সবারই হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে পেট্রোলিয়াম জেলি বেস্ট অপশন। পা ফাটা কমাতে গোসলের সময় ব্রাশ বা ঝামা পাথর দিয়ে পায়ের গোড়ালি পরিষ্কার করে নিন এবং গোসল শেষে পায়ের গোড়ালি ভেজা ও নরম থাকা অবস্থায় পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে পা রুক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। রাতে ঘুমানোর আগে দুই পায়ে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে সুতি মোজা পরে ঘুমানোর চেষ্টা করুন। উপকার পাবেন। অনেকের ধারণা যে, বছরের বাকি সময়টা তাদের চুল অয়েলি থাকে বলে শীতকালীন রুক্ষতায় কোনো ক্ষতি হবে না। ঋতু পরিবর্তনে চুলের ধরনের পরিবর্তন হয়। আর সব কিছুর মূলে থাকে বাইরের ধুলাবালি। স্ক্যাল্প চুলকালে বা চুল খুব রুক্ষ হলে ড্যানড্রাফ আসতে পারে। এ সমস্যার সমাধানে রুটিন মেনে চলুন। শীতের এই সময় ঘন ঘন চুলে শ্যাম্পু করবেন না। শ্যাম্পু সপ্তাহে দুই দিন করাই যথেষ্ট। তা ছাড়া শীতে বাইরে বের হলে স্কার্ফ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। শীতকালে চুলে খুশকি হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয় সবচেয়ে বেশি। চুলে খুশকি হওয়া মানে চুল পড়া, স্ক্যাল্প চুলকানো এবং চুলের বিবর্ণতা। এই সমস্যার সমাধান করতে চাইলে নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল হাল্কা গরম করে সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করুন। ঘণ্টাখানেক বাদে গরম পানিতে ভেজানো একটি তোয়ালে নিংড়ে চুল পেঁচিয়ে রাখুন ১৫ থেকে ২০ মিনিট। এরপর অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিলেই খুশকির উপদ্রব অনেকাংশে কমে আসবে। চাইলে টকদই, কলা, ডিমের সাদা অংশ ও মধু একসঙ্গে মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। খুশকি কমে আসবে।

এ ছাড়াও আমাদের দেহের সবচেয়ে নাজুক অংশ ঠোঁট। শীতের রুক্ষ আবহাওয়া ঠোঁটকে করে তোলে মলিন। অনেক সময় ঠোঁট ফেটে যাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। এই রুক্ষতা কমাতে স্যালন ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। এর বাইরেও বাড়িতে থাকা ছোটখাটো উপাদানে ঠোঁটের পরিচর্চা করতে পারেন। চিনি, মধু ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে লিপস্ক্রাবার বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে ঠোঁট ফাটা কমানোর পাশাপাশি ঠোঁট হবে আরও মসৃণ। ঠোঁটের যত্নে অবশ্যই নিয়মিত লিপবাম ব্যবহার করুন।

এ ছাড়া শীতে লাইফ স্টাইলেও পরিবর্তন আনা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা উচিত। অনেকেই শীতে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম ছেড়ে দেন। এটা উচিত নয়। এ জন্য জিমে যেতে না চাইলে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট করে হাঁটুন। শীতে গরম পানি দিয়ে গোসল না করাই ভালো। এতে চুল ও ত্বকের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কষ্ট হলেও গোসলে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন। খুব বেশি ঠাণ্ডা হলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ক্রিম বা সানব্লক লোশন ব্যবহার করুন। শীত মৌসুমে ওয়াটারবেজড ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ব্যবহার না করাই ভালো। এ সময়ের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হলো অয়েলবেজড ময়েশ্চারাইজার ক্রিম। এটি ব্যবহারে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।

লিখেছেন : ফেরদৌস আরা



এই পাতার আরো খবর