ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

প্রচণ্ড গরমে কাজ মৃত সন্তান প্রসব ও গর্ভপাতের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়াতে পারে
অনলাইন ডেস্ক
গর্ভবস্থার ১২ সপ্তাহের মধ্যে সুমাথির গর্ভপাত হয়েছিল

চরম গরমে কাজ করলে গর্ভবতী নারীদের মৃত সন্তান প্রসব ও গর্ভপাতের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়ে যেতে পারে। ভারতের নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।

কর্মরত গর্ভবতী মায়েদের এই ঝুঁকি আগে যা ভাবা হত তার চেয়েও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি দেখা গেছে এ গবেষণায়।

গবেষকরা বলছেন, গ্রীষ্মের তীব্র গরম কেবল গ্রীষ্মমন্ডলীয় এলাকার নারীদেরই নয়, বরং যুক্তরাজ্যের মতো দেশের নারীদের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্বব্যাপী কর্মরত গর্ভবতী নারীদের জন্য তাই সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

বিবিসি জানায়, ২০১৭ সালে চেন্নাইয়ের শ্রী রামচন্দ্র ইনস্টিটিউট অব হায়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এসআরআইএইচইআর) নতুন এই গবেষণা শুরু করেছিল। গবেষণায় অংশ নেয় ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় তামিলনাড়ু রাজ্যের ৮০০ গর্ভবতী নারী।

গবেষণায় অংশ নেওয়া অর্ধেক নারীই এমন কর্মক্ষেত্রে কাজ করত, যেখানে তাদেরকে উচ্চ মাত্রার তাপ বা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে থাকতে হত। যেমন: কৃষিকাজ, ইটের ভাটা বা লবণের বিস্তৃত সমতল ভূমিতে (সল্ট ফ্ল্যাট) কাজ। আর গবেষণায় অংশ নেওয়া বাকি নারীরা স্কুল ও হাসপাতালের মতো শীতল পরিবেশে কাজ করত। যদিও এসব কাজেও কিছু কর্মী চরম মাত্রার তাপের সংস্পর্শে আসত।

মানবদেহের জন্য তাপের কোন স্তরকে অত্যধিক গরম বলে বিবেচনা করা যাবে, তা মাপার সার্বজনীন কোনও সীমারেখা অবশ্য নেই।

“কারও দেহে তাপের প্রভাব কেমন হবে সেটি আপেক্ষিক। একজন কতটুকু তাপ সহ্য করে অভ্যস্ত বা তার দেহ কতটুকু তাপ সহনশীল তার ওপর বিষয়টি নির্ভর করে”, বলেন গবেষণায় অবদান রাখা বিজ্ঞানীদের একজন অধ্যাপক জেন হার্স্ট।

তিনি জানান, গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন সুমাথি নামের এক নারী কর্মী। গর্ভাবস্থায় ১২ সপ্তাহেই তার সন্তান মারা যায়। গবেষণা চলাকালেও প্রথম সুমাথির সন্তানই মারা যায়।

হার্স্ট বলেন, “আমি তিরুভান্নামালাইয়ের সবুজ মাঠে সুমাথির সঙ্গে দেখা করি। আমার যাওয়ার আগে সুমাথি দুঘন্টা ধরে ক্ষেতের শসা তুলছিল। আমাকে দেখে সে তার ভারি গ্লাভস খুলে হাতের আঙ্গুল আমাকে দেখায়।” সুমাথি বলে, “এই গরমে আমার হাত জ্বলছে।”

হার্স্ট জানান, গ্রীষ্ম তখনও ভাল করে শুরই হয়নি। কিন্তু সেদিন ওই শসা ক্ষেতে প্রায় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। অনেকটাই গরম অনুভূত হচ্ছিল। হাতের সুরক্ষায় গ্লাভস পরে শসা কাটছিল সুমাথি। কিন্তু গ্লাভসের কারণে সে প্রচুর ঘামছিল। তার মুখও গরমে জ্বলছে বলে জানিয়েছিল সুমাথি।

একটি স্কুলে বাবুর্চির কাজ করার পর সুমাথি শসা ক্ষেতে কাজ করতে যেতেন। তার এই কাজের জন্য তিনি মজুরি পেতেন মাত্র ২০০ রুপি। গরমে গর্ভবতী অবস্থায় কাজ করে অনেক ক্লান্তি লাগত বলে জানিয়েছিলেন সুমাথি। একদিন বাসায় ফেরার পর সন্ধ্যায় হঠাৎই তার খারাপ লাগতে শুরু করে। চিকিৎসককে দেখানোর পর তার গর্ভপাত হয়েছে বলে জানানো হয়।

সুমাথি নিশ্চিতভাবেই কখনও জানবেন না যে, গর্ভাবস্থায় তাপের মধ্যে কাজ করায় তার গর্ভপাত হয়েছে কিনা এবং গরমের সঙ্গে তার প্রথম সন্তান খোয়ানোর কোনও যোগ আছে কিনা।

কিন্তু সামগ্রিকভাবে এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, সুমাথির মতো পরিবেশে যে নারীরা কাজ করেন, তারা শীতল পরিবেশে কাজ করা নারীদের চেয়ে মৃত সন্তান প্রসব করা কিংবা গর্ভপাতের শিকার হওয়ার দ্বিগুণ ঝুঁকিতে থাকেন।

একটি ছবিতে শীতল এবং গরম পরিবেশে কাজ করা নারীদের এই ঝুঁকির তুলনামূলক পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে বিবিসি।

এতে দেখা গেছে, চরম গরমে কাজ করা নারীদের গর্ভপাতের হার ৫ শতাংশ, অপরিণত সন্তান জন্মদানের হার ৬ দশমিক ১ শতাংশ। সন্তানের ওজন কম হওয়ার হার ৮ দশমিক ৪ শতাংশ। আর শীতল পরিবেশে কাজ করা নারীদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি যথাক্রমে- ২ শতাংশ, ২ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

সূত্র : বিবিসি

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ



এই পাতার আরো খবর