জাতীয় পার্টির সাথে আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি বলেছেন, জাতীয় পার্টি আমাদের মিত্র দল। তারা গত ১৫ বছর ধরে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে আমাদের মিত্র হিসেবে কাজ করেছে। এ নির্বাচনেও গণতন্ত্রের পক্ষে, অপশক্তির বিপক্ষে তারা রয়েছে। জাতীয় পার্টি আমাদের সহযোগী শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি প্রায় ৩০০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করে তুলেছে। জাতীয় পার্টির সাথে আমাদের আলোচনা চলছে। জাতীয় পার্টিসহ আমাদের সমমনা দলগুলোর সাথে জোট হতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের কিছু আসন ছাড় দিতে হবে।
বুধবার সন্ধ্যায় রংপুর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের উদ্যোগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে নির্দেশনা ও মতবিনিময় সভায় যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দেওয়া নির্বাচন বিরোধীরা পালিয়ে গিয়ে গুপ্তস্থান থেকে গাড়ি পোড়ানোর ডাক দিচ্ছে। চোরাগোপ্তা হামলা করছে। এই হামলায় বহুমানুষ হতাহত হয়েছে, তারা সাড়ে ৩০০ গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। গতকাল রাতে ট্রেনের লাইন কেটে দিয়েছে, ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে, একজনের মৃত্যু হয়েছে। এই দেশবিরোধী, সমাজবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী ও জনবিরোধী অপশক্তিকে খুঁজে বের করে যাতে তাদের আইনের আওতায় আনা যায়, সেই নির্দেশনা দলীয় নেতাকর্মীদের দেয়ার জন্য আমরা আজ মিলিত হয়েছি।
আসন্ন সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সারাদেশে নির্বাচনের ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। মানুষ নির্বাচনমুখী। গ্রাম-গঞ্জ, হাট-বাজার, চায়ের দোকানসহ সর্বত্রই এখন নির্বাচনি আলোচনা। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে যেসব বিদেশিরা ভুগছিল তারাও এখন পর্যবেক্ষক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সার্কভুক্ত দেশ ও ওআইসিসহ বিভিন্ন দেশ ও জোট নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষক পাঠাবে। এতেই প্রমাণিত হয় যে আমাদের দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে আমাদের দলের প্রান্তিক পর্যায়ে থানা-ইউনিয়ন পর্যন্ত বার্তা পৌঁছে দেওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনে যাতে ব্যাপক ভোটারের অংশগ্রহণ হয়, আচারণবিধি লঙ্ঘিত না হয়, নির্বাচনে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলার চেষ্টা না করে সে বার্তা দিতে আমরা এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দল থেকে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। দলীয় লোকজন অবশ্যই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। দলের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছে। অন্য নির্বাচনের তুলনায় এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী বেশি। এটি নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে সহায়তা করবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী বা যে কোনো প্রার্থী নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা করলে নির্বাচন কমিশন যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। দলীয়ভাবেও আমরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করি না এবং করব না।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আরও বলেন, বিগত সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করে প্রতিহতের ডাক দিয়েছিল। প্রত্যেক নির্বাচনে ৫০ ভাগের বেশি ভোট পড়েছিল। বরিশালে শুধুমাত্র একটি ঘুসি মারার ঘটনা ঘটেছিল। তখন আমাদের দেশের সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা নানা ধরনের বক্তব্য রেখেছিলেন। এখন যে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, তাদের কোন বিবৃতি দেখি না, তাদের কোনো বক্তব্যও শুনি না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। ওরা কোথায় গেল, কোথায় হারিয়ে গেল। দেশের ৪৪টি দলের মধ্যে ৩০টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। গড়ে প্রতিটি আসনে ৭ জন করে প্রার্থী হয়েছে। তাই আসন্ন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে। উন্নত দেশে যে পরিমাণ ভোটার হয় না, তার চেয়ে বেশি ভোটার এই নির্বাচনে হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. সফুরা বেগম, অ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া। মতবিনিময় সভায় রংপুর বিভাগের ৮ জেলার আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত