উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। বর্তমান সরকারের অধীনে সব নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও চলমান উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূল নেতাদের আটকাতে পারছে না দলটি। প্রথম ধাপের ভোটে অংশ নেওয়ায় এরই মধ্যে ৭৬ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন জোর আলোচনা এ নির্বাচন ঘিরে শেষ পর্যন্ত বহিষ্কারের তালিকা ৩০০-এ ঠেকতে পারে। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাচন ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বেড়েই চলেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেসব কারণে বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি তার সব কারণ বর্তমানে অটুট রয়েছে। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তিনি দলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা উপজেলা নির্বাচনে ভোট করছেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরবর্তী ধাপগুলোতে যারা ভোটে অংশ নেবেন তাদেরও দল বহিষ্কার করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে ফারুক বলেন, এ কয়জন ভোট করায় বিএনপির বেকায়দায় পড়ার প্রশ্নই উঠে না। তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রেরও দূরত্ব বাড়ার কোনো কারণ নেই। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিএনপি নেতাদের প্রথমে শোকজ বা কারণ দর্শানো জন্য নোটিস পাঠানো হয়। এরপর কেন্দ্রীয় নেতারা সব প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করাসহ নির্বাচন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধও করেন। এসব শোকজ, অনুরোধ ও দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তাদের প্রাথমিক পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের নেতাও রয়েছেন।
বিএনপি সূত্র বলছে, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা অটুট রাখতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের অনেকে শোকজ নোটিসের জবাবও দেননি, আবার কেউ কেউ নোটিস পেয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহারও করেছেন। নোটিস দেওয়ার পর তৃণমূলের এই নেতাদের সঙ্গে রুহুল কবির রিজভী এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা কথাও বলেছেন। যাদের কাছে বহিষ্কারের চিঠি পাঠানো হয় তাদের মধ্যে ৩০ জন উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী, ২৫ জন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং ২১ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া বহিষ্কৃত নেতারা বলছেন, অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়া জরুরি। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগসহ সব প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিত করতে এবং কর্মী সমর্থকদের চাপেই তারা নির্বাচন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এভাবে বহিষ্কার করতে থাকলে কেন্দ্রের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়তেই থাকবে। তবে বহিষ্কৃত ৭৬ জনের মধ্যে গত দুই দিনে দুইজন দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।
দলের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সংসদ নির্বাচন বর্জনের চার মাসের মাথায় অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে বিএনপির নেতৃত্ব। তারা বলছেন, এই সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। যেসব কারণে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেসব কারণ এখনো বহাল আছে। বরং একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতাসীন দল আরও কর্তৃত্ববাদী হয়েছে। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন হাস্যকর হয়ে যাবে।
এছাড়া গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার মহাসমাবেশে সহিংসতার পর প্রায় ২৭ হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এখনো কয়েক হাজার নেতা-কর্মী কারাবন্দি। অসংখ্য মামলায় সারা দেশে লাখ লাখ নেতা-কর্মী আদালতে ঘুরছেন। এ পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ আন্দোলনের নৈতিক অবস্থানকে দুর্বল করবে। ভোটে অংশ নেওয়া দলের বর্তমান ও সাবেক নেতাদের বহিষ্কার করার মধ্য দিয়ে কার্যত বিএনপি মাঠপর্যায়ে চরম বার্তা পৌঁছানো হয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না, হতে পারে না। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪-এ আমরা সেটা দেখেছি। দেশের মানুষ এই সরকারের অধীনে ভোটে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তারপরও কিছু অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, আমরা বহিষ্কার করেছি। বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে দলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কারণ, বিএনপি দুই-আড়াই শ নেতা-কর্মীর দল নয়। যারা নির্বাচন করছেন, সেখানে একই মাপের একই যোগ্যতার অনেক নেতা আছেন।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ