ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

উৎসব শঙ্কার ৫৫ পৌর ভোট আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

চতুর্থ ধাপে ৫৫ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ আজ। উৎসবমুখর এ নির্বাচন নিয়ে যেমন রয়েছে উত্তেজনা, তেমনই আছে শঙ্কা ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ চলবে। এ ধাপে ২৫ পৌরসভায় ব্যালট পেপারে ভোট হবে আর ৩০ পৌরসভায় হবে ইভিএমে ভোট। যেসব এলাকায় ব্যালট পেপারে ভোট হবে সেখানে আজ ভোটের দিন সকালে ব্যালট পাঠানো হবে।

বিগত তিন ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা হওয়ায় এ ধাপের ভোট নিয়ে উত্তেজনা রয়েছে সব নির্বাচনী এলাকায়। অনেক প্রার্থী কেন্দ্র দখলের শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া ভোটার, এজেন্ট ও প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। করোনাকালে এ নির্বাচনে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনাও দিয়েছে ইসি। ভোট দেওয়ার আগে-পরে কেন্দ্রে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হলেও বিদ্রোহী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা দেখা দিয়েছে। তিন ধাপের ভোটে বিভিন্ন এলাকায় সহিংসতা-গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

চতুর্থ ধাপে গোলযোগ ছাড়াই ‘সুষ্ঠু ভোট’ হবে বলে আশাবাদী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায় রাখি। আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি রয়েছে। আশা করি, অন্তত এর পর থেকে যে নির্বাচন হবে, ভালো হবে, সুষ্ঠু হবে; সংঘাত-সংঘর্ষ হবে না।’ 

তবে পৌর ভোটে সহিংসতা নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছিলেন, নির্বাচনে সহিংসতা ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্রমবর্ধমান ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন। এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা। এ জন্য যা যা করতে হবে, সে নির্দেশনা দিয়ে দিয়েছি। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে যা যা দরকার আমরা সব ব্যবস্থা নিয়েছি। জেলা প্রশাসক, এসপি এবং রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনটা যেন ফ্রি, ফেয়ার এবং ক্রেডিবল হয়।’ শনিবার বিকালে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ৩৪ জেলার ৫৫ পৌরসভায় চতুর্থ ধাপে নির্বাচন হবে। এ ধাপে মেয়র পদে ২১৭ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৭০ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬১৮ জন প্রার্থী আছেন। এ ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ড ৫০১টি, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ১৬৭টি ও ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৭৯৩টি। মোট ভোটার রয়েছেন ১৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৪ জন। সচিব বলেন, অনিয়ম রোধে প্রতিটি কেন্দ্রে তিন-চারজন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য থাকবেন। অঙ্গীভূত আনসারসহ সব মিলিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ১১ থেকে ১৩ জন সদস্য থাকবেন। এর বাইরে আমাদের প্রতিটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে র‌্যাবের একটি করে টিম থাকবে, পুলিশের টিম থাকবে। প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার চাহিদার ভিত্তিতে ২৭টি স্থানে বিজিবি ও র‌্যাবের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইসির অবস্থান একটাই, তা হলো ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল ইলেকশন হওয়া। লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশন যখন হয়, তখন ডোর টু ডোর একটা প্রিপারেশন থাকে। তখন কোথাও কোথাও দু-একটি ঘটনা ঘটে। আপনারা জানেন যে তৃতীয় ধাপে একটি-দুটি জায়গায় অনিয়ম হয়েছে। সেটি খুবই সামান্য, যেগুলোর তদন্ত হয়েছে এবং রিপোর্ট এসেছে আমাদের কাছে। সেগুলোর বিষয়ে কমিশন খুবই ওয়াকিবহাল। পরে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা কমিশনকে অবহিত করেছি।’ তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া আছে, ভোট কেন্দ্রের যে রুলস আছে, সেভাবেই যেন পরিচালিত করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিআইজি থেকে এসপি, ডিসি, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি, যেন এমন কোনো কিছু না ঘটে।

চতুর্থ ধাপে এ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স, র‌্যাবের টিম, প্রতিটি পৌরসভায় গড়ে দুই প্লাটুন বিজিবি ও উপকূলীয় এলাকায় প্রতি পৌরসভায় এক প্লাটুন কোস্টগার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে থাকছেন। এ ছাড়া কিছু পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে নির্দিষ্ট হারের চেয়ে অতিরিক্ত র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। পরে সোনাইমুড়ি ও ত্রিশাল পৌরসভা এ ধাপে যুক্ত হয়। অপরদিকে আদালতের আদেশে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হন। জয়পুরহাটের কালাই পৌরসভায় নির্বাচন কার্যক্রম বন্ধের পর ফের তা চালু হয়। মাদারীপুরের কালকিনি পৌরসভার ভোট স্থগিত করে কমিশন। সব মিলিয়ে এখন ৫৫টিতে ভোট হতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে পৌরসভা নির্বাচন করছে কমিশন। প্রথম ধাপে ২৮ ডিসেম্বর, ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের এবং তৃতীয় ধাপে ভোট হয় ৩০ জানুয়ারি। চতুর্থ ধাপে আজ ভোট শেষে পঞ্চম ধাপের ভোট হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ ছাড়া ৭ এপ্রিলও শেষ ধাপের বেশ কিছু পৌরসভায় ভোট হতে পারে।

বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার 



এই পাতার আরো খবর