ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা
রাবি শিক্ষক সুজিতের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও এমপি শিমুলের শাস্তির দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচী

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান ও রাজশাহী মহানগর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকারের বিরুদ্ধে নাটোরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

আজ শুক্রবার বিকাল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচীতে এই দাবি জানানো হয়। এসময় এমপি শিমুলের শাস্তির দাবিও করা হয়। মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ-এর সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরও বক্তব্য রাখেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকার, দেশবরেণ্য ভাস্কর শিল্পী রাশা, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, সহ-সভাপতি রোমান হোসাইন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও এমপি শিমুলের নির্যাতনের শিকার বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ মাসুদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। 

কর্মসূচীর শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। বক্তব্যে অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকার বলেন, নাটোরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধ বইটি লেখার পর ২o১২ সালে একবার নলডাঙ্গা উপজেলার বতর্মান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বিষয়টি উল্লেখ করলে শফিকুল ইসলাম শিমুল মামলা করেন। আদালত সে অভিযোগ আমলে না নিয়ে খারিজ করে দেন। তার অর্থ তিনি সত্যিকারেই রাজাকার ছিলেন বলে আদালত তার মানহানির অভিযোগ গ্রহণ করেননি। ২o২১ সালে ওই একই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ তথ্য আবার কী করে তাদের সম্মানহানি করলো এবং আইসিটি আইন অমান্য করলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। 

তিনি বলেন, অবশ্য আমি আইন ও আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মহামান্য সক্রেটিসও আইনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন বলে হেমলক পান করে আত্মহনন করেছিলেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আনন্দময়ীর আগমনে কবিতাটি কবি সম্পাদিত ধমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ইংরেজ সরকার কারাদণ্ড দিয়ে তার অনেক কাঁব্য গ্রন্থ ও পত্রিকা বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে। বিশ্বে এরকম অনেক লেখকের গ্রন্থ সরকার বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে লেখককে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দিয়েছে। পরবর্তীতে তাঁদের রচনা বিশ্ব নন্দিত ও আদরণীয় হয়েছে। 

ড. সুজিত আরও বলেন, ১৯৯৬ সালের জুন মাসে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বাংলা একাডেমীর অর্থ দিয়ে জেলা ভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহ করার জন্য লেখকদের দায়িত্ব দেয়া হয়। একটি সাধারণ সভার মাধ্যমে বাংলা একাডেমির সে সময়ের মহাপরিচালক প্রফেসর সৈয়দ আনোয়ার হোসেন দেশের বিভিন্ন জেলার দায়িত্ব বন্টন করেন। আমাকে নাটোরের জেলা তথ্য সংগ্রহ ও লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি তার আগেই প্রফেসর মুনতাসীর মামুনের আর্কাইভের জন্য তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করি। বাংলা একাডেমী থেকে দায়িত্ব পাওয়ায় আমি দু’টি কাজেই একসঙ্গে করতে থাকি। এভাবে তিন বছর নাটোর জেলার নয়টি থানার তথ্য সংগ্রহ করে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করে বাংলা একাডেমীতে যথাযথভাবে জমা দেই। ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় আসার পর বাংলা একাডেমির এই প্রকল্প বাস্তবায়ন না করে আমাদের পান্ডুলিপি নষ্ট করে দেয়।যেহেতু পান্ডুলিপি আমাদের ফেরত দেয়া হয়নি অর্থও দেয়া হয়নি। তখন আমি নানা প্রকাশ প্রকাশকের দুয়ারে গিয়েছি বইটির মুদ্রণের জন্য। কেউ প্রকাশ করতে সম্মত হননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দল ক্ষমতায় এলে বইটি প্রকাশের ব্যবস্থা করি। বইটি প্রথম সংগ্রহ করেন ধ্রুব প্রকাশনী এবং ২০২১ সালে বাংলাবাজারের আফসার ব্রাদার্স বইমেলায় বইটি প্রকাশ করেন। এই দীর্ঘ সময়ে মাননীয় সংসদ সদস্য বা তার পরিবার বইটিতে হাসান আলী ওরফে হাসান আলী সরদারের নাম অন্তর্ভুক্ত নিয়ে কোন কথা বলেননি। গ্রন্থ লেখককে অবহিত করেননি। দীর্ঘ ১২ বছর পর কেন মিথ্যাচার বলে উল্লেখ করে অভিযোগ করলেন? 

এই অধ্যাপক বলেন, এমপি শিমুল সত্যাসত্য তো জেনেছেন ২০১২ সালের মামলার রায়ে। এছাড়াও ২০২১ সাল পর্যন্ত তিনি কোন প্রতিবাদ করেননি। হঠাৎ এই বছরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে হুমকি দেন এবং আমার বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি দেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলা ভবনের বাইরে চারজন অপরিচিত ব্যক্তি আমাকে সরাসরি হুমকি দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল যোগে স্থান ত্যাগ করেন। তারপরে সংগঠনের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে ঘটনা মৌখিক ও ফোনে অবহিত করি। রাজশাহীর মেয়র মহোদয় ও সংসদ সদস্য অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে অবহিত  করি। 

শেষে ২৯ জুলাই ২০২১ তারিখে নিরাপত্তা চেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি জিডি করি। জিডি পেয়ে বোয়ালিয়া থানা তদন্ত করে এবং তারা অভিযোগের সত্যতা নাকি পাননি। এই খবর পেয়ে সংসদ সদস্য শিমুল আমার বিরুদ্ধে  দু’টি অভিযোগ যথাক্রমে বোয়ালিয়া মডেল থানা ও নাটোর থানায় দায়ের করেন। একটি আইসিটি আইনে এবং অপরটি তার মানহানি করেছি মর্মে। আমি একজন সামান্য শিক্ষক। খুব যে বিদ্যা বুদ্ধি আছে এমন দাবি করবো না। তবুও শিক্ষকতা করি। আমার অধীনে কমপক্ষে ১৫ জন এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এমএ গবেষণা পত্রেও আমি তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালন করেছি অন্তত ২০ জন ছাত্র-ছাত্রীর। স্বভাবতই আমার ফিল্ডের নানা বিষয়ে লেখালেখি ও গবেষণা করতে পারবো না? মুক্তিযুদ্ধের সাহিত্য এবং উল্লেক্ষিত ঘটনাবলির অনুসন্ধান করে আমি মাঠ পর্যায়ে এবং সমকালীন পত্র-পত্রিকা বই পড়ে কি গ্রন্থ রচনা করতে পারি না? বলেও প্রশ্ন রাখে অধ্যাপক ড. সুজিত।

এই অধ্যাপক বলেন, এজন্য কি শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি বা সংসদ সদস্যের অনুমতি প্রয়োজন আছে? যদি থাকে তাহলে আমাদেরকে সেটা জানানো হোক। আর না থাকলে আমার জিজ্ঞাসা দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শুধু নয় যে কেউ সাহিত্যের ইতিহাস বিজ্ঞান নিয়ে কি কেউ কোন গবেষণা করতে পারবেন না? ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিশেষের অনুমতি নিতে হবে? স্বাধীন ও মুক্তচিন্তার কি কোন অধিকার নেই? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি সে মর্মে কোন দায়িত্ব সংসদ সদস্যদের দিয়েছেন? যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে আমি মনে করি দলে এবং সংসদে কিছু হাইব্রিড আজকে আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। তারা কেউ কেউ রাজাকার পরিবারের হলেও সেটা আড়াল করতে চান। তারা স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান।

তিনি বলেন, নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থটি লেখার পর থেকে আমার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমি একজন গবেষক। গবেষণা করে প্রকৃত সত্য তুলে ধরাই আমার কাজ। কোন হামলা-মামলা আমার কলম থামাতে পারবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমি অংশগ্রহণ করেছি। প্রগতিশীল শিক্ষক হওয়ার কারণে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি দ্বারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছি।  মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য অতীতের ন্যায় আমার লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। হুমকি দিয়ে কেউ আমার কলম থামাতে পারবে না। আমি প্রতিনিয়ত হত্যার হুমকি পাচ্ছি। কিন্তু অন্যায়ের নিকট আমি মাথা নত করবো না। 

প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, আমি ন্যায় বিচার চাই। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক। আপনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে কোন স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের বংশধররা থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হলে এদেরকে অবশ্যই আওয়ামী লীগ থেকে বের করে দিতে হবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে এমপি শিমুলের লোকজন আমাকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। কিন্তু আমি কোন বিচার পাইনি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করাটা কি আমার অপরাধ? আমি আশা করি বঙ্গবন্ধুকন্যা অবশ্যই ন্যায় বিচার করবেন বলেও উল্লেখ করেন রাবির এই অধ্যাপক।

এসময় বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গবেষণা করা কি অধ্যাপক সুজিতের অপরাধ ছিল? দলের ভিতরে অনেক স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের বংশধররা লুকিয়ে আছে। এদেরকে চিহ্নিত করে দল থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতে হবে। এর আগেও এমপি শিমুলের কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কেনার অভিযোগ ওঠেছিল। সরকার কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, শোকাবহ আগস্ট। বাঙালি জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় বেদনাদায়ক মাস। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে আমরা হারিয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যদেরকে। ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে নিহত বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও সংগ্রামের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে রাজপথে প্রতিবাদ করে আসছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। 

এর ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নাটোরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল কর্তৃক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান, রাজশাহী মহানগর ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকারের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। শোকাবহ আগস্টে একজন মুক্তিযুদ্ধের গবেষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

মামুন বলেন, একজন মুক্তিযুদ্ধের গবেষকের কলম থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকার একজন প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। হুমকি পাওয়ার পর তিনি নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে আইনের আশ্রয় চেয়েছিলেন। কিন্তু ন্যায়বিচার পাননি। তাঁর বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করে হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের নিকট দাবি, অবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকারকে হত্যার হুমকিদাতা এবং এর মদদদাতাকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

অধ্যাপক সুজিতের বিরুদ্ধে এমপি শিমুল কর্তৃক দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না করলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানসহ দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচী পালন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ২০১০ সালে ১ম প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও গবেষক হিসেবে অধ্যাপক সুজিত তাঁর গবেষণার মাধ্যমে নাটোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বইটি লিখেছেন। উক্ত বইয়ে নাটোরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের পিতার নাম রাজাকারের তালিকায় স্থান পেয়েছিল। এরপর কয়েকবার প্রাণনাশের হুমকি পাওয়ায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অধ্যাপক সুজিত কুমার রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি জিডিও করেছিলেন। পরবর্তীতে আমরা লক্ষ্য করলাম যে, পুলিশ বলেছে তারা অভিযোগের কোন সত্যতা না পাওয়ার কারণে জিডিটি খারিজ করা হয়েছে। বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের এধরনের বক্তব্যে আমরা হতাশ হয়েছি। এরধরনের বক্তব্যে বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

তিনি বলেন, রাজনেতিক প্রভাব খাটিয়ে এমপি শিমুল এই অভিযোগের তদন্ত কাজ প্রভাবিত করেছেন বলে আমরা মনে করি। অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকার কোন বিচার পাননি। উল্টো সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল কর্তৃক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার  হয়েছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার পরেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন শিক্ষককে হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষদের জানমাল ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য নাটোরের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন। নাটোরের রাজনৈতিক অবস্থা চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে পার করছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, প্রবীণ নেতা আব্দুল কুদ্দুছ এমপি জেলার দলীয় কার্যালয়ে আসতে পারছেন না বলে গণমাধ্যমে অভিযোগ করেছেন। নাটোরের নবগঠিত জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। 

কিছুদিন আগে সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কেনা নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। এসব ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় যে, নাটোরে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষদেরকে কিভাবে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অবিলম্বে অধ্যাপক ড. সুজিত কুমার সরকারের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অধ্যাপক সুজিতকে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যার হুমকিদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ সমগ্র দেশের সকল ইউনিটকে সাথে নিয়ে আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক



এই পাতার আরো খবর