ঢাকা, বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মুনিয়া হত্যা মামলা : সংবিধান লঙ্ঘন
নিজস্ব প্রতিবেদক
নুসরাত

গত ৬ সেপ্টেম্বর মুনিয়ার মৃত্যু নিয়ে যে হত্যা ও ধর্ষণের মামলা ৮নং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা হয়েছে তা সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন। আইনজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ৩৫ ধারা এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৪ ধারা লঙ্ঘন করে এই মামলাটি করা হয়েছে। 

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫ ধারায় বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে। ৩৫(২)-এ রয়েছে, ‘এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারিতে সোপর্দ ও দণ্ডিত করা যাইবে না’। এই আইনের ধারা অনুযায়ী একটি অপরাধের জন্য মাত্র একটি মামলা হবে। মুনিয়া আত্মহত্যা করেন ১৯ এপ্রিল। তারপর মুনিয়ার বোন নুসরাত আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করেন। আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলাটি তিন মাস তদন্ত শেষে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিপক্ষে মুনিয়ার বোন নুসরাত একটি নারাজি দরখাস্ত দেন। নারাজি দরখাস্তটি আদালত বিচার-বিবেচনা করে খারিজ করে দেন এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করেন। অর্থাৎ মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে যে অভিযোগ- সেই অভিযোগের চূড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহণের মধ্য দিয়ে তা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কাজেই সংবিধানের ৩৫(২) অনুযায়ী এই ঘটনা নিয়ে আর কোন মামলা হতে পারে না।

শুধু সংবিধানের আলোকেই নয় বাংলাদেশের ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০৩(১)তে বলে হয়েছে, ‘কোন এখতিয়ারবান আদালতে যখন কোন অপরাধের জন্য যে ব্যক্তির একবার বিচার হয়েছে এবং তাকে উক্ত অপরাধের জন্য দণ্ড দান করা অথবা অপরাধ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে, তখন উক্ত খালাস বা দণ্ড বলবৎ থাকার সময় তাকে একই অপরাধের জন্য পুনরায় বিচার করা যাবে না। অথবা একই ঘটনা হতে উদ্ভূত অন্য কোন অপরাধের জন্যও পুনরায় তার বিচার করা যাবে না। যে অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে ২৩৬ ধারা অনুসারে একটি পৃথক অভিযোগ আনয়ন করা যাবে বা যার জন্য তার বিরুদ্ধে ২৩৭ ধারা অনুসারে দণ্ডিত করা যাবে’। ফৌজদারি কার্যবিধির এই ধারা অনুযায়ীও যখন মুনিয়ার মৃত্যুর পর যে আত্মহত্যার প্ররোচিত মামলাটি হয়েছিলো এবং সেখানে যে পুলিশ চূড়ান্ত রিপোর্ট দিয়েছে তার মধ্য দিয়েই মুনিয়ার মৃত্যু অধ্যায় সমাপ্ত হয়েছে। ফলে এই ঘটনায় নতুন কোনও মামালা চলতে পারে না।

আবার লক্ষণীয় ব্যাপার যে, মুনিয়ার ভাই সবুজ সিএমএম আদালতে একটি হত্যা মামলা করেছেন। যে মামলায় তিনি মুনিয়ার মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি শারুনসহ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করেছেন। এটি ঘটনার ভিন্ন প্রেক্ষাপটের মামলা যেখানে অন্যরাও অভিযুক্ত হয়েছে। যেখানে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০৩(২) কোন বাধা দেয়নি। যেহেতু এই ঘটনায় দেখা গেছে, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই কাজেই ৪০৩(২)অনুযায়ী, এই ঘটনার যে দ্বিতীয় মামলা সেটি শুরু করা যেতে পারে এবং দ্বিতীয় মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তৃতীয় মামলা হতে পারে না। এটাই ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান। কিন্তু মুনিয়ার মৃত্যুর পর যেভাবে একের পর এক মামলা সাজানো হয়েছে তাতে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে একটি বিশেষ ব্যক্তি বা শিল্প গ্রুপকে ফাঁসানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই মামলা করা হচ্ছে। এই ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাও ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক



এই পাতার আরো খবর