ঢাকা, বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সাফারি পার্কে ১১ জেব্রার মৃত্যু: দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
ছবি- বাংলাদেশ প্রতিদিন।

গাজীপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ১১টি জেব্রার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়। জেব্রা মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের মতামত অনুযায়ী এ সিদ্ধান্ত দেয় মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভাগীয় মামলাও দায়েরের কথা বলা হয়।

মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও তদন্ত কমিটির সুপারিশকৃত ২৪টি সুপারিশ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে বলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা দীপংকর বর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, সচিব মো. মোস্তফা কামাল, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) ইকবাল আব্দুল্লাহ্ হারুন, অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন) মো. মিজানুল হক চৌধুরী, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, অতিরিক্ত সচিব (পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ) কেয়া খান এবং উপসচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াদুদ।

তদন্ত কমিটির মতামতে বলা হয়, ঘাসে অতিরিক্ত নাইট্রেটের প্রভাব ও মিশ্র ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে ১১ জেব্রার মৃত্যু ঘটেছে মর্মে তদন্ত কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে প্রথম দিকের তিনটি জেব্রার মৃত্যু ধামাচাপা দেওয়া এবং আঘাত জনিত কারণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য মৃত তিনটি জেব্রার পেট ধারাল কিছু দিয়ে কাটা হয়েছে মর্মে কমিটির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। কে বা কারা মৃত তিন জেব্রার পেট কেটেছে তা উদঘাটনের জন্য নিবিড় তদন্তের প্রয়োজন মর্মে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।  

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, কর্তব্যরত ভেটেরিনারি অফিসারের চাহিদা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সাফারি পার্ক মেডিক্যাল বোর্ডের সভা আহ্বান করবেন মর্মে বিধান থাকা সত্ত্বেও এতগুলো জেব্রার অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরও জরুরিভিত্তিতে মেডিক্যাল বোর্ডের সভা আহ্বান করা হয়নি। যা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার শামিল। কোনো প্রাণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় জিডি করার প্রচলন থাকলেও এক্ষেত্রে থানায় কোনো জিডি করা হয়নি, যা রহস্যজনক।

গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে নয়টি জেব্রার মৃত্যু হয়। পরে আরও দুটি জেব্রার মৃত্যু হয়। নয়টি জেব্রার মৃত্যুর পর সাফারি পার্ক প্রকল্পের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির বলেছিলেন, হঠাৎ তারা দল থেকে আলাদা হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট। পেট ফুলে গিয়ে মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে থাকে। এক সময় মারা যায়।

করোনা সন্দেহে পিসিআর ল্যাবে মৃত জেব্রাগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টগুলো নেগেটিভ আসে। এছাড়া খাবারে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হতে পারে- এমন সন্দেহে খাবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। মৃত জেব্রাগুলোর ফুসফুস, লিভার এবং মৃত্যুর পর পেটে থাকা অর্ধগলিত খাবারও পরীক্ষা করা হয়।

প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশে গঠিত ছয় সদস্যের বিশেষজ্ঞ বোর্ড সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, অতিরিক্ত কাঁচা ঘাস ছাড়াও স্ট্রেপ্টোকক্কাস, ই-কোলাই, ক্লস্টোডিয়াম, সালমোনিলা ও পাস্টুরেলা নামে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে পাঁচটি এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আরও চারটি জেব্রা মারা যায়- জানান সাফারি পার্ক প্রকল্প পরিচালক।

বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর