ঢাকা, শুক্রবার, ৫ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা
আলি আব্বাসউদ্দৌলা
নবাব সিরাজউদ্দৌলা

আজ ২৩ জুন। ১৭৫৭ সালের এই দিনে পলাশী যুদ্ধে পরাজয়ের মাধ্যমে ডুবেছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। ২১৪ বছর পর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে সে পরাধীনতার অবসান হয়। বাংলার স্বাধীনতার নাম নিলেই যার নাম উচ্চারণ অনিবার্য হয়ে ওঠে, তিনি হচ্ছেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব ও স্বাধীনতার প্রথম শহীদ নবাব সিরাজউদ্দৌলা। চার চারটি যুদ্ধের সফল অধিনায়ক, স্রেফ একটি বিশ্বাসঘাতকতার যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। তারও নায়ক তিনি। কখনো কখনো দেখা যায় বিশাল কিছু জয়েও রয়ে যায় হেরে যাওয়ার ব্যথা বেদনা। আবার এরকমও দেখা যায় বিশাল কিছু হারিয়েও সে ব্যক্তি হয়ে যান হৃদয়ের ভালোবাসায় অমর। যেমনটি আমাদের নবাব সিরাজউদ্দৌলা লাল সবুজের হৃদয়ে হৃদয়ে আজও অমর হয়ে আছেন।

১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধ নামের যে মর্মস্পর্শী নাটক অভিনীত হয়েছিল, সেই পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় কেবল বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের পতন হয়নি, অবসান হয় বাংলার স্বাধীনতার। পলাশীর যুদ্ধে চূড়ান্ত যবনিকাপাত ঘটে ২ জুলাই সিরাজকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার মাধ্যমে। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার রক্তস্রোত সেদিন বাংলার মাটির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। দেশপ্রেমিক যুবক সিরাজ স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সব চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র, দেশদ্রোহিতা ও বিশ্বাসঘাতকতার বিরুদ্ধে একা দাঁড়িয়েছিলেন। অবশেষে আপন বক্ষ নিঃসৃত রক্তে রঞ্জিত করেছিলেন বাংলার মাটি।

সিরাজ ছিলেন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। তার পরাজয়ও নির্মম হত্যার পরিণতিতে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় ১৭৫৭ সালে। শহীদ হওয়ার পর নবাব পত্নী বেগম লুৎফু্ন্নিসা আরও ৩০ বছর জীবিত ছিলেন এবং প্রতিদিনই কন্যা উম্মে জোহরাসহ স্বামীর কবরে গিয়ে কান্নাকাটি করতেন, পবিত্র কোরআন পাঠ ও দোয়া দরুদ করতেন, মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালাতেন। আর এভাবেই স্বামীর কবরে মাথা রেখে অশ্রু বিসর্জন করতে করতে ১৭৮৬ সালে ১০ নভেম্বর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

খোশবাগে স্বামীর ঠিক পায়ের নিচে বেগম লুৎফুন্নিসার শেষ ইচ্ছায় তাকে সমাহিত করা হয়। মুর্শিদাবাদ থেকে সামান্য দক্ষিণে ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে প্রাচীরবেষ্টিত সমাধি ভবনে চিরনিদ্রায় শায়িত নবাব সিরাজউদ্দৌলা। মীর জাফরের প্রাসাদের যে কক্ষে নবাব সিরাজকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা এখন আর নেই, আছে সেই কক্ষের ধ্বংসাবশেষ। আজও স্থানীয় লোকেরা ওই ধ্বংস্তুপকে দেখিয়ে বলে 'নিমকহারামীর দরওয়াজা'। কারণ যে মীর জাফর নবাব আলিবর্দী ও নবাব সিরাজের অনুগ্রহে উচ্চ রাজপদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন সেই মীর জাফরই নিরপরাধ দেশপ্রেমিক সিরাজকে নিজ প্রাসাদে বন্দী করে রাতের অন্ধকারে হত্যা করে।

লেখক : নবাবের নবম বংশধর

(লেখাটি ২০১৫ সালের ২৩ জুন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকীয় পাতায় প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটি পাঠকদের জন্য পুনরায় প্রকাশ করা হল)



এই পাতার আরো খবর