ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরে সেলাই মেশিন পেলেন ৩০ নারী
অসচ্ছল নারীদের স্বপ্ন পূরণ করছে বসুন্ধরা গ্রুপ
অনলাইন ডেস্ক
দিনাজপুর সদর উপজেলায় বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় সেলাই মেশিন পাওয়া অসচ্ছল নারীরা

দিনাজপুর সদর উপজেলার মিস্ত্রিপাড়া ও বিরামপুর উপজেলার কাটলা গ্রামে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় পরিচালিত হচ্ছে ‘শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’। জীবনে বেঁচে থাকতে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলছেন এমন ৩০ জন শিক্ষার্থী, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী দিনাজপুরের এই দুটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন। সম্প্রতি প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার অস্ত্র হিসেবে একটি করে সেলাই মেশিন সংগ্রামী এই নারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। অসহায় ও অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করে তুলতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে বসুন্ধরা শুভসংঘ।

‘অসচ্ছল শিক্ষার্থী, স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা এবং সুবিধাবঞ্চিত নারীদের সচ্ছল করে তুলতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল কিনে দিয়েছি আমরা। অনেকেই সেগুলো প্রতিপালন করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন। এখন আমরা গ্রামীণ অসচ্ছল নারীদের শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে সেলাই, ব্লক, বাটিক এসব প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। প্রশিক্ষণ শেষে সবাইকে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন প্রদান করছি।

দেশে এক শ্রেণির লোক আছেন, যাঁরা কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারেন না। আবার কাউকে বলতেও পারেন না। তাঁরা অনেক কষ্ট করে চলেন। বসুন্ধরা গ্রুপ সেই সব মানুষকে জীবনমান উন্নয়নেও কাজ করছে।

পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষিত করে মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে শুভসংঘ স্কুল। এমনই নানামুখী উন্নয়নকাজ করে যাচ্ছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ’ বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় ১৫ অসচ্ছল নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক ও কালের কণ্ঠ’র প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। গত ২৫ জুন রবিবার সকালে দিনাজপুর শহরের খোদমাধবপুর মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় এই সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়। এর আগে ২৩ জুন বিরামপুরের ১৫ অসচ্ছল নারীকে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। দুই দিনে শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেওয়া ৩০ গ্রামীণ অসচ্ছল নারীর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়েছে।

ইমদাদুল হক মিলন ছাড়াও বিরামপুরে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র মো. আক্কাস আলীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। রবিবারের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালসহ শুভসংঘের উপদেষ্টারা। মনোরঞ্জন শীল গোপাল বলেন, ‘অসচ্ছল নারীদের প্রশিক্ষিত করে তাঁদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ—এটি বসুন্ধরা গ্রুপের মহতী উদ্যোগ। করোনার সময় একজন ব্যবসায়ী যিনি হাজার কোটি টাকার মালিক, তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর সবটুকু সম্পদ দিয়ে হলেও জীবন বাঁচাতে আকুতি করেছিলেন। মানুষ জীবন নিয়ে দুনিয়াতে আসেন, জীবনের অবসান ঘটিয়ে আবার চলে যান। আসা-যাওয়ার মাঝখানে যে মহতী কাজগুলো তাঁরা করে থাকেন, তা ইতিহাস হয়। বসুন্ধরা গ্রুপ শুভসংঘের মাধ্যমে শুভ কাজের ইতিহাস সৃষ্টি করছে। করোনার সময়ে উত্তরবঙ্গের ৫০ হাজার মানুষকে এক মাসের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে তারা। ঝরে পড়া নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সন্তানদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে শুভসংঘ স্কুল করেছে। অসচ্ছল নারীদের স্বাবলম্বী করার জন্য সেলাই মেশিন বিতরণ করছে। এই নারীরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। পরিবারের আয়ের অংশীদার হয়ে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবেন। নিজেদের সন্তানকে পড়ালেখা করাতে এখন আর হিমশিম খেতে হবে না এই মায়েদের। উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের অবদান অনেক। দিনাজপুরে আধুনিক কলকারখানা নির্মাণ করে বেকার সমস্যা সমাধানে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে আসুক—এই আহবান রইল।’

সেলাই মেশিন পাওয়া নারীদের একজন দিনাজপুর সরকারি মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. চাঁদনী আক্তার। শহরতলির মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় মা-বাবা ও বড় ভাই নিয়ে তার পরিবারের বাস। বাবা মো. আনিস রিকশা চালাতেন। মা গৃহকর্মীর কাজ করেন এবং ভাই একটি ফার্নিচারের দোকানে খুব সামান্য বেতনে চাকরি করেন। সাত মাস আগে চাঁদনীর বাবা হঠাৎ স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। মা ও ভাইয়ের স্বল্প উপার্জনে অসুস্থ বাবার চিকিৎসা খরচের পর তাদের জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। চাঁদনী চায় পড়ালেখার পাশাপাশি নিজে উপার্জন করে বাবার চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা করতে। নিজের পড়ালেখার খরচ নিজে চালাবে। তাই শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষিত হওয়ার পর বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় একটি সেলাই মেশিন পায়। সেলাই মেশিন পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত চাঁদনী বলে, ‘এই সেলাই মেশিনে কাজ করে জীবনে অনেক আগায় (এগিয়ে) যেতে পারব। টাকার অভাবে আমার আব্বার ওষুধ ঠিকমতো কিনতে পারতাম না। এখন থেকে অর্ডার নিয়ে যা আয় হবে, সেই টাকা থেকে আব্বার ওষুধ কিনব। ইনশাআল্লাহ ওষুধ কিনতে আর তেমন সমস্যা হবে না। নিজের লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারব। বসুন্ধরার সবার জন্য দোয়া করি তারা যেন ভালো থাকে ও আমার মতো আরো মানুষকে সাহায্য করতে পারে।’ শুধু চাঁদনী নয়, রূপালী, সুইটি, দেলোয়ারা, মিনারা, সুমিসহ মোট ৩০ জন অসচ্ছল নারী সেলাই মেশিন হাতে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ পেয়েছেন। তাঁরা যেন স্বপ্ন ছুঁয়েছেন, অধরা স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় আনতে পেরেছেন। মন খুলে দোয়া করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য।

ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘এই সেলাই মেশিন দিয়ে তারা পরিবারের বাইরে ও পরিবারের লোকদের জামাকাপড় সেলাই করে আর্থিক সহযোগিতা করতে পারবে। কিছুটা হলেও পরিবারে সচ্ছলতা আসবে। এ পর্যন্ত আমরা ১৫-১৬টি প্রশিক্ষণকেন্দ্র করেছি। আমরা বাংলাদশে ১০০টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা স্কুলের মডেল তৈরি করেছি। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোথাও জমি পাই, তাহলে ভবন করে আমরা স্কুল করব। তা না হলে জমি কিনে স্কুলগুলো করব এবং সেই স্কুলের পাশাপাশি একটি নারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করব এবং একটি পাঠাগার করব। আমাদের সমাজ থেকে বই পড়ার অভ্যাস উঠে যাচ্ছে। আমরা প্রায় তিন হাজার ছেলেমেয়েকে এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বৃত্তি প্রদান করি। এত কিছু আমরা যে মহান মানুষটির কল্যাণে করতে পারছি, তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের মাননীয় চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। আপনারা সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন। তাঁর পরিবারের সবার জন্য দোয়া করবেন। আমরা সোনার বাংলা গড়ে তোলার অনেকখানি অর্জন করেছি। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছেন, তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সম্ভাবনা অনেকখানি তৈরি করে দিয়েছেন। আমাদের ছোট একটি দেশে ১৮ কোটি মানুষ। প্রত্যেক মানুষের দুয়ারে সচ্ছলতা পৌঁছে দিতে একটু সময় লাগবে। এ কারণে বসুন্ধরা গ্রুপ সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে এ কাজ করছে। আমরা জীবনটাকে সুন্দর করতে চাই, মানুষকে ভালোবাসতে চাই। সেই ভালো রাখার উদ্দেশ্যে আমরা কাজগুলো করে যেতে চাই। আমাদের স্লোগান হলো, শুভ কাজে সবার পাশে। আমরা শুভ কাজে সবার পাশে থাকতে চাই।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবু তৈয়ব আলী দুলাল, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আলহাজ ওয়াহেদুল আলম আর্টিস্ট, শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান প্রমুখ।



এই পাতার আরো খবর