ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

স্বাবলম্বী হয়ে সন্তানদের শিক্ষিত করবেন নারীরা
অনলাইন ডেস্ক

এসএসসি পাসের পরেই সদা হাস্যোজ্জ্বল মৌসুমি আক্তারকে বিয়ে দিয়ে দেন বাবা। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে মৌসুমি সবার বড়। পড়ালেখা করার ইচ্ছা দেখে স্বামী তাঁকে কলেজে ভর্তি করে দেন। এইচএসসি পাসের পর দিনাজপুর সরকারি কলেজে বিবিএস পড়ার জন্য ভর্তি হন মৌসুমি।

কিন্তু নানা জটিলতায় পড়াশোনাটা আর চালিয়ে যেতে পারেননি। স্বামীর কিডনিতে জটিলতা দেখা দেয়। চিকিৎসায় প্রচুর খরচ হতে থাকলে মৌসুমি নিজেই কোনো কাজ করার উপায় খুঁজতে থাকেন। শুভসংঘ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে শুনে ভর্তি হন।

প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি সেলাই মেশিন পান। মেশিনটি হাতে পেয়ে মৌসুমি  অতি আনন্দে শুভসংঘের এক সদস্যকে ডেকে বলেন, ‘আমাকে সেলাই মেশিনের সাথে একটি ছবি তুলে দেন। ছবিটি আমি বাঁধাই করে রাখব।  সেলাই মেশিন পেয়ে আমি অনেক খুশি।

বিপদের সময় সবাই যখন পাশ থেকে চলে গেছে, তখন বসুন্ধরা গ্রুপ আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আপনারা সবাই অনেক ভালো থাকেন এই দোয়া করি।’ সালমা ফারসি ইমু দিনাজপুর মহিলা কলেজের ইসলামিক ইতিহাসের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রথম বর্ষেই পড়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় তাঁর।  সালমার স্বামী ওয়ার্কশপের কর্মচারী ছিলেন।

এর মধ্যে কন্যাসন্তানের জননী হন সালমা। সন্তান নিয়েই পড়ালেখা চালিয়ে যান তিনি। ভালোই কাটছিল তাঁদের জীবন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সালমার স্বামীর হার্টে ব্লক ধরা পড়লে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর ওপর। চিকিৎসা খরচ এত হতে থাকে যে বাধ্য হয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে হয়। পরিবারে আয় করার আর কেউ নেই। নিজেই কিছু একটা করার চিন্তা করেন সালমা। শুভসংঘ সেলাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি সেলাই মেশিন পান। সেলাই মেশিন পেয়ে সালমা বলেন, ‘জীবনের এই কঠিন সময়ে আমি যখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছিলাম, তখন পথ দেখিয়েছে শুভসংঘ ও বসুন্ধরা গ্রুপ। আমাকে সেলাই মেশিন দেবে কখনো ভাবিনি। আমাদের মতো মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ অনেক মহৎ কাজ করছে।’ ছোট্ট সাইদার ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করে পরিবারের নাম উজ্জ্বল করবে। কিন্তু তার হাজার স্বপ্নের ইতি টানতে হলো। সপ্তম শ্রেণিতে ওঠার আগেই বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। চার সন্তান নিয়ে বিপদে পড়েন তার মা। বড় ভাই পরিবারের দায়িত্ব নেন। অল্প বয়সেই বিয়ে দেন সাইদাকে। শ্বশুরবাড়ির চাপে পড়ালেখা করা হয়নি আর। স্বামী কাজ করেন কাঠের দোকানে। অভাবের সংসারে দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত দেখে সাইদাও কাজ শুরু করেন মানুষের বাড়িতে। একদিন প্রতিবেশীর কাছ থেকে জানতে পারেন শুভসংঘ থেকে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তখনই সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি বাড়ি কাজ না করে সেলাইয়ের কাজ শিখে স্বাবলম্বী হবেন। ভর্তি হন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে। তাঁকে স্বাবলম্বী করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন প্রদান করা হয়। মেশিন পেয়ে সাইদা বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে একটি সেলাই মেশিন দিয়েছে।  সেলাই মেশিন কেনার সামর্থ্য ছিল না। বসুন্ধরা গ্রুপ আমাকে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ করে দিল।’

দিনাজপুরের বিরামপুর খেলার মাঠে সব বন্ধুর সঙ্গে খেলাধুলা করছিল কুলসুমা। বাড়ি থেকে একটু দূরেই সেই মাঠ। এক পর্যায়ে মা হাত ধরে নিয়ে আসেন বাড়িতে। মুখ ধুয়ে-মুছে সুন্দর জামা পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে আসা কুটুমদের সামনে। ১০ বছর বয়সী কুলসুমা তখনো জানে না, এত আয়োজন তার বিয়ের জন্য করা হয়েছে। সেদিনই তার বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়ি চলে আসে সে। তখনো বুঝে উঠতে পারে না কেন সে অন্য বাড়ি চলে এলো। কেনই বা এখন থেকে এইটা তার বাড়ি। বছর গড়াতেই বুঝতে শুরু করল জীবনের কঠিন বাস্তবতা। বিয়ের সময় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বিয়ের পর আর পড়ালেখা করা হয়নি। স্বামী কৃষিকাজ করতেন। তাঁর একার আয়েই চলত পরিবার। দীর্ঘ ১১ বছরের সংসারে কুলসুমা শুধু সময় দিয়েছেন স্বামী ও সন্তানদের। তিন সন্তানের জননী কুলসুমা তাঁর সাত বছর বয়সী মেয়েকে পড়ালেখা করান। স্বপ্ন দেখেন মেয়েকে শিক্ষিত করে তুলবেন। স্বামীর একার আয়ে এখন সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এর মধ্যেই জানতে পারেন বিরামপুরে দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে সেলাই প্রশিক্ষণ। শুভসংঘের সদস্যরা তাঁকে ভর্তি করে নেন। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে একটি সেলাই মেশিন পান তিনি। কুলসুমা বলেন, ‘আমার সাধ্য হতো না মেশিন কেনার, এখন আমি স্বাবলম্বী হয়ে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলব।’                                                                                            



এই পাতার আরো খবর