ঢাকা, বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে পাঁচ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর
সাখাওয়াত কাওসার, জাতিসংঘ সদর দপ্তর (নিউইয়র্ক) থেকে

কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা এখন ডেঙ্গু মোকাবিলায় হাই অ্যালার্টে কাজ করছি। আমরা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের জন্য উন্নত চিকিৎসা চালু করছি। মানবিক ও শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চিকিৎসা সেবায় বাংলাদেশ অসাধারণ মান অর্জন করেছে।

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে স্থানীয় সময় দুপুরে ‘জলবায়ু ন্যায্যতা প্রদান : ত্বরান্বিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং অভিযোজন ও সবার জন্য প্রাথমিক সতর্কবার্তা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক এক অধিবেশনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে নানা অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি এক লাখ থেকে কমিয়ে ১৬৩-এ কমিয়ে এনেছি। নবজাতক মৃত্যুহার প্রতি হাজারে ১৫ এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী মৃত্যুর হার ২৪-এ নেমে এসেছে। শিশু টিকাদানে শতভাগ সার্বজনীন কাভারেজ রয়েছে। আমাদের গড় আয়ু এখন ৭৩ বছরের কাছাকাছি। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্যখাতে নানামুখী উদ্যোগের ফলে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।

অধিবেশনে বিশ্বকে অজানা হুমকির হাত থেকে বাঁচাতে এবং প্রাকৃতিক সুরক্ষায় বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোকে জলবায়ু তহবিলে ‘সমানভাবে’ অর্থ বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি প্রধান এই অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহ্বান জানান।

জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই সামিটে সরকার প্রধান বলেন, আসন্ন সংকট মোকাবিলায় বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং আসন্ন সংকট এড়াতে তাদের ন্যায্য অংশীদারত্বের বিষয়ে স্বচ্ছ ও সৎ থাকবে।

সভায় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দু’টি উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এর মধ্যে ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম ফর অল’ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো-২০২৫ সালের মধ্যে সবার জন্য আগাম সতর্কতা নিশ্চিতকরণ। এই উদ্যোগের অধীনে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য জাতিসংঘ প্রথম যে ৩০টি দেশকে বাছাই করে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বৃহস্পতিবার ছিল জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশনের চতুর্থ দিন। এদিন সম্মেলনে জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে একটি সামিট অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া সম্মেলনের ফাঁকে এদিন উচ্চ পর্যায়ের আরও কয়েকটি বৈঠকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা বলেন, জলবায়ুর ন্যায্য অংশীদারিত্বের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে বরাবরই প্রশ্ন উঠছে। এ বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। একই সঙ্গে জলবায়ু তহবিলে শীর্ষ ধনী দেশগুলোর সমান অর্থ বিনিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তারা।

বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে পাঁচ প্রস্তাব :

এদিকে, উচ্চ পর্যায়ের আরেকটি অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহামারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা শীর্ষক ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি হতে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় বিষয় হলো ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সবাই নিরাপদ নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউই নিরাপদ নয়’। কোভিড অতিমারি প্রমাণ করেছে যে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে যেকোনো সংকট থেকে পুনরুদ্ধার সম্ভব। আমরা কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশ্বসূচকে পঞ্চম স্থান লাভ করেছি। এ সময় তিনি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যতে যেকোনো স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য জাতিসংঘের কাছে পাঁচটি প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবগুলো হলো-উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সহজলভ্য অর্থায়ন; বিজ্ঞান-ভিত্তিক পদ্ধতিতে অতিমারি নজরদারি, প্রতিরোধ, প্রস্তুতি সংস্থান ইত্যাদি।

এর আগে, জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপাক্ষিক বুথে মা, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য অংশীদারিত্বের (পিএমএনসিএইচ) চেয়ার হেলেন ক্লার্কের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু সংকটের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ শতকরা ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আমাদের এ খাতে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের যে প্রচেষ্টা তারই প্রতিফলন। বাংলাদেশে সবার জন্য স্বাস্থ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিশেষায়িত মেডিকেল হাসপাতাল পর্যন্ত একটি দেশব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা তৃণমূলে বেসরকারি অংশীদারদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করি।

সরকার প্রধান বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্নায়বিক ব্যাধিগুলোর বিষয়ে আমাদের নীতির পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের বিরুদ্ধে আমরা ‘এক স্বাস্থ্য পদ্ধতি’ প্রচার করছি। আমাদের ফোকাস প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনীর সাথে তাদের সেবার মান উন্নত করা। আমাদের পরবর্তী টার্গেট হলো খরচ পরিশোধের জন্য একটি কার্যকর অর্থায়ন মডেল তৈরি করা। বাংলাদেশে ওষুধের চাহিদার ৯৮ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন হয়ে থাকে বলে জানান তিনি।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর