ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

জোট নিয়ে চ্যালেঞ্জ দুই দলে
জোট ভোটে কৌশলী আওয়ামী লীগ
নৌকা চেয়ে ইসিতে চিঠি পাঠিয়েছে শরিকরা, বিএনপি না এলে আসন ছেড়ে দিয়ে এককভাবে ভোট
রফিকুল ইসলাম রনি

জোটের ভোট নিয়ে এবার কৌশলী ভূমিকায় আওয়ামী লীগ। বিএনপি ভোটে না এলে জাতীয় পার্টির সঙ্গে কোনো জোটে যাবে না টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। তবে ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের কিছু আসন ছেড়ে দেবে আওয়ামী লীগ। আবার শরিক দলের নেতারাও নিজস্ব প্রতীকে ভোটে অংশ নেবে। ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে ‘জোটভুক্ত’ ভোট করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে আসন ছেড়ে দেওয়া এবং নৌকা প্রতীক নিতে জোট প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছেও চিঠি দিয়েছে জোটের শরিকরা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। বিএনপি না এলে আসন ছেড়ে দিয়ে হলেও এককভাবে শরিকদের ভোট করাতে উৎসাহ দেবে আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বিএনপি ভোটে এলে একরম, না এলে অন্যরকম হবে। সে কারণে শরিকদের এখনো কিছু জানানো হয়নি। তবে শরিক দলের নেতারা নৌকা চেয়ে দলীয় সভানেত্রীকে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে শুনেছি। আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভোট ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই হবে। শরিকদের কিছু আসন আমরা ছেড়ে দেব। নেত্রী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে শরিক দলের নেতারা চাইলে নিজস্ব প্রতীক নিয়েও ভোট করতে পারেন।’ এদিকে জোটগতভাবে ভোট করতে হলে আজকের মধ্যে নির্বাচন কমিশন-ইসিকে চিঠি দিয়ে অবহিত করতে বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন জোটভুক্ত ভোট করার কথা জানিয়ে নির্বাচন কমিশন ইসিকে চিঠি দিয়েছে। আজ দেবে জাতীয় পার্টি-জেপি।

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা জোটে ছিলাম, জোটেই ভোট করতে চাই। দলীয় সভা করেছি। আমরা নির্বাচন কমিশন-ইসি এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।’ তিনি বলেন, আমরা জোটে ভোট করার পাশাপাশি নিজস্ব প্রতীকেও ভোট করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’  আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে বিএনপি আসবে- এটা ধরে নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করছে আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হলেও বিএনপিকে ভোটে আসতে হবে। তা না হলে ২০১৪ সালে যেরকমভাবে সংসদের বাইরে এবারও তাদের তাই করতে হবে। অন্যদিকে ভোটে এলে শক্তিশালী বিরোধী দলে বসার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এতে দলটি টিকে থাকবে বলে দাবি ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার। দলটির নেতারা জানিয়েছেন, কোনো কারণে বিএনপি ভোটে না এলে ভিন্ন কৌশলে হাঁটবে আওয়ামী লীগ। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি আসন উন্মুক্ত রাখা হতে পারে। আবার কিছু আসনে তুলনামূলক দুর্বল প্রার্থী দেওয়া হতে পারে।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা জোটগতভাবে ভোট করব। ইতোমধ্যে এ ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আমরা মনোনয়ন বোর্ড গঠন, ইশতেহার প্রণয়ন কমিটিসহ সব কার্যক্রম সেরেছি। সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক পেতে নির্বাচন কমিশন এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে চিঠি দিয়েছি। দু-এক দিন পর কতটি আসন পাব সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। জোটের আরেক শরিক তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের জোটনেত্রী যে কথা দেন, তা রাখেন। তিনি আমাদের কথা দিয়েছেন, জোটেই ভোট হবে। আশা করি জোটের প্রতীক নৌকা নিয়েই আমরা ভোট করব। এ জন্য চিঠিও দিয়েছি।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জোট নাকি আলাদা ভোট হবে- এ সিদ্ধান্ত দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নেবেন। আমরা চাই সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। ভোট বাড়াতে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক দল ও ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোরই আমাদের কাজ।

১৪ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা জোটগতভাবেই ভোটে অংশ নেব। আজ নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়ে দেব। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কোনো কারণে বিএনপি ভোটে না এলে ১৪ দলীয় জোটগতভাবে ভোট নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে কিছু আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেবে না। এদের মধ্যে জোটের শীর্ষ নেতারা যেসব আসনে ভোট করবেন, বর্তমানে এমপি রয়েছেন। কারণ নিবন্ধিত বেশি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং ভোটার উপস্থিতি দেখাতে হবে। একটি পক্ষ মনেই করে, বিএনপি ভোটে না এলে ভোটার উপস্থিতি কমে যাবে। সেজন্য ভোটার উপস্থিতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর বেশি অংশগ্রহণ দেখানোর কৌশলে হাঁটছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।



এই পাতার আরো খবর