ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মঞ্জুর ৩৮ বছরের সাম্রাজ্যে মহারাজের হানা
নিজস্ব প্রতিবেদক
আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও মহিউদ্দিন মহারাজ

পিরোজপুর-২ আসনের (ভান্ডারিয়া, কাউখালি, নেছারাবাদ) ৩৮ বছরের সাম্রাজ্যের ইতি ঘটলো বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর। এই আসনে নতুন সাংসদ হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ। 

বেসরকারী ফলাফলে দেখা গেছে-তিন উপজেলা মিলিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ ঈগল প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ৯৯ হাজার ২৬৮ ভোট আর নৌকা নিয়ে জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন ৭০ হাজার ৬৮১ ভোট। 

পিরোজপুর-২ আসনের ৬ বারের সংসদ সদস্য জাতীয়পার্টি (জেপির) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। টানা ১৪ বছর মন্ত্রী ছিলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তার সময়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় প্রায় চার দশক ধরে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তবে কয়েকবছর ধরে তাকে শক্ত চ্যালেঞ্চের মুখে ফেলেছেন তারই সাবেক পিএস মহিউদ্দিন মহারাজ। এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে হারতে হয়েছে তার সেই শিষ্যের কাছেই।

নির্বাচনের শুরু থেকেই হারের শঙ্কায় ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। নিশ্চিত হার ঠেকাতে নিজের প্রতীক বাইসাইকেল বিসর্জন দিয়ে উঠেছিলেন নৌকায়। কিন্তু ভান্ডারিয়া, কাউখালি এবং নেছারাবাদ এই তিন উপজেলার ৯০ শতাংশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহারাজকে জেতাতে মাঠ চষে বেড়ান। নেতাকর্মীদের এই আবেগকে মূল্যায়ন না করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কানাই লাল বিশ্বাস নিজ জেলা কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজকে হারাতে জেপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর পক্ষে মরিয়া হয়ে মাঠে নামেন। আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধি নৌকার বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের হুমকিও দিয়েছিলেন কানাই লাল বিশ্বাস। অবশ্য তাতেও ভোটের মাঠে রক্ষা হলো না মঞ্জুর। উল্টো মঞ্জুর দলের অনেক নেতাকর্মী মহারাজের সাথে প্রচারণায় থেকে তাকে জেতাতে সহযোগিতা করেছেন।

অন্যদিকে নির্বাচনের আগ থেকেই পুরো সংসদীয় আসনের প্রায় শতভাগ জনপ্রতিনিধি স্বতন্ত্র প্রার্থী মহিউদ্দিন মহারাজের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন। পিরোজপুর-২ আসনে তিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুই পৌরসভার মেয়র মহারাজের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় দিনরাত পরিশ্রম করেন। এছাড়া তিন উপজেলায় থাকা ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে ১টি বাদে বাকি ২০টি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাও ঈগলের পক্ষে কাজ করেছেন। তিন উপজেলা পরিষদের সাধারণ ও সংরক্ষিত ছয় ভাইস চেয়ারম্যানের চারজনই ঈগলের পক্ষে প্রতিদিন গণসংযোগে অংশ নিয়ে সফলতা তুলে আনেন। এই নির্বাচনে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপির নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশ মহিউদ্দিনকে সমর্থন দিয়ে মাঠে ঘাটে সরব ভূমিকা পালন করেছেন। 

তিন উপজেলার মধ্যে ভান্ডারিয়াতে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু (নৌকা) পেয়েছেন ২৬০৬১ ভোট। আর মহিউদ্দিন মহারাজ পেয়েছেন ৪০৬০৭ ভোট। এই উপজেলায় ১৪ হাজার ৫৬৪ ভোট বেশি পান মহারাজ। সবচেয়ে চমক ছিলো এই উপজেলার ৩ নং তেলিখালী ইউনিয়নে। এখানকার ভোটাররা একজোট হয়ে নৌকার বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

তেলিখালি ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ঈগল প্রতীকে মহিউদ্দিন মহারাজ পেয়েছেন ১৫০০৪ ভোট। অন্যদিকে এখানকার একাধিকবারের সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন মাত্র ৪৯ ভোট। 

কাউখালী উপজেলায়ও মঞ্জুর থেকে ঈগল প্রতীক নিয়ে মহারাজ প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন। প্রাপ্ত ফলাফলে- ঈগল পেয়েছে ১৩ হাজার ২৭০ ভোট অন্যদিকে নৌকা পেয়েছে ৯ হাজার ৮৭৪ ভোট।

জেলার নেছারাবাদ উপজেলায় ঈগল প্রতীক নিয়ে মহিউদ্দিন মহারাজ পেয়েছেন ৪৫ হাজার ৮৪৭ ভোট আর নৌকা নিয়ে জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৯৮ ভোট। এখানে নৌকার থেকে ঈগল বেশি পেয়েছেন ১১ হাজার ৪৪৯ ভোট।

২০১৬ সালের জেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনেও মহিউদ্দিন মহারাজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিলেন। ওই সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগের সমর্থিত পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম। ছিলেন জেলা পরিষদের প্রশাসকও।

মহিউদ্দিন মহারাজের বাবা প্রয়াত শাহাদাৎ হোসেন ছিলেন তেলীখালী ইউনিয়নের একাধিকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তার মেঝ ভাই মিরাজুল ইসলাম ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান। আরেক ভাই শামছুদ্দীন তেলীখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আরেক ভাই সালাউদ্দিন ব্যবসায়ী।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর