ঢাকা, রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ঢাকার হাসপাতালে রুশ কিশোরীর শ্লীলতাহানি
অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রুশ কিশোরী শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। এই রুশ কিশোরীর মা রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একজন বিদেশি কর্মকর্তা। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কিশোরীর মা। 

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডের অভিযুক্ত ওয়ার্ডবয় আবুল কাশেমকে তাৎক্ষণিক স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ৮ই ফেব্রুয়ারি রাতে হাসপাতালের ১৪ তলায় অবস্থিত সার্জারি ওয়ার্ডের একটি কেবিন কক্ষে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে হাসপাতালের একাধিক সূত্র। এ সময় কেবিনটিতে রুশ কিশোরী এবং তার মা অবস্থান করছিলেন। 

ঘটনার ৫ দিন পর গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি মিরপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন কিশোরীর মা। ঘটনার পরপরই ওয়ার্ডবয় কাশেম পালিয়ে যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশকে তা অবহিত করলে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম আবুল কাশেম। গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ।

মামলার এজাহারে জানানো হয়, রুশ কিশোরীর ডান হাতের বগলের নিচে একটি ফোঁড়ার অস্ত্রোপচারের জন্য গত ৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১টায় কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই নারী রুশ কর্মকর্তা।

এজাহারে নারী রুশ কর্মকর্তা বলেন, ‘সেখানে ডাক্তারের পরামর্শ মতে আমার মেয়েকে ভর্তি করা হয়। ঘটনার দিন রাত ২টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার আনোয়ার হোসেন আমাদের কাছে এলেন এবং তার সাথে নীল ইউনিফর্ম পরা আবুল কাশেম ছিলেন। ডাক্তার আমার মেয়েকে ফোঁড়া দেখাতে বললেন। ফোঁড়াটি যেহেতু সংবেদনশীল জায়গার কাছাকাছি ছিল তাই আমার মেয়ে বিব্রতবোধ করছিল জায়গাটি উন্মুক্ত করতে। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, কর্তব্যরত ডাক্তার বাংলায় তারপাশে থাকা নীল গাউন পরা ব্যক্তিকে (আবুল কাশেম) একজন নার্সকে ডাকতে নির্দেশ দিলেন।’ নার্স আসার পর রুশ কিশোরী তার ক্ষতস্থান দেখায়। এজাহারে বলা হয়েছে, সেই সময় নীল গাউন পরা ব্যক্তিটি (কাশেম) ঘর থেকে বের না হয়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, পরে ফিরে এসে কাশেম ফোঁড়ার স্থানে মলম লাগানোর কথা বলেন। এরপর রাত প্রায় ৩টায় তিনি আবারও আসেন। এ সময় ফোঁড়ার স্থান মুছে দেন। এ সময় কাশেম কিশোরীর শরীরের স্পর্শকাতর অংশে স্পর্শ করেন বলেও অভিযোগ করা হয় এজাহারে। সেই সময় চলে গেলেও আবারও ভোরে ফিরে আসেন কাশেম। সকাল সাড়ে ৬টায় কাশেম আমাদের ঘুম থেকে তুলে বললেন, আমাদের ফোঁড়ার চিকিৎসা করা দরকার। তার হাতে শুধু অ্যালকোহল প্যাড ছিল। গুগল ট্রান্সলেট ব্যবহার করে, তিনি আমাকে বারান্দায় যেতে বললেন। কারণ জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি থাকলে তার চিকিৎসা কাজে ব্যাঘাত ঘটবে। তাকে অদ্ভুত ও নার্ভাস লাগছিল এবং তারপর আমি সবকিছু বুঝতে পেরেছিলাম। তখন আমি জোরে জোরে বললাম তাকে বের হয়ে যেতে এবং এখানে যাতে সে না আসে। আমি তাকে জোরে চিৎকার করে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিতে চাইলে তিনি আমার হাত ধরতে শুরু করলেন, "দুঃখিত এবং "না, না, না" বলে চিৎকার করলেন। তিনি আমার হাত এত জোরে চেপে ধরলেন যে এটি একটি ক্ষত রেখে গেছে। আমি তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে জোরে জোরে ইংরেজিতে বলেছিলাম আর কখনো এখানে আসবেন না।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাসির আহমেদ বলেন, রুশ কিশোরী বনানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরে গেছে। এ ঘটনায় মামলার একমাত্র আসামি ওয়ার্ডবয় কাশেমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি মামলার তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। 

ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এডমিন ইনচার্জ নূরে আলম সবুজ বলেন, আবুল কাশেম খুব অল্পদিন হলো বদলি হয়ে এসেছে। একজন ওয়ার্ডবয় বিদেশি এক নাগরিকের সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটনানোর ফলে প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সুনাম নষ্ট হবে। ঘটনার পরপরই আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আবুল কাশেমকে আমরা ঘটনার পরপরই স্থায়ীভাবে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেই। বিষয়টি যেহেতু তদান্তাধীন তাই এর বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই।  

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর