ঢাকা, শনিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

রোজায় পণ্য মূল্য স্বাভাবিক রাখার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ছবি

বিশ্ববাজারের কারণে দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে রোজা উপলক্ষে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। 

বুধবার জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আলী আজমের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে এ সব কথা জনান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট। এ লক্ষ্যে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। তবে বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার বিভিন্নপদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে রয়েছে, মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন শুল্কছাড় প্রদান করা হচ্ছে; অপরিশোধিত সয়াবিন, পরিশোধিত/অপরিশোধিত পাম তেল  আমদানি পর্যায়ে ১০% এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমুদয় ভ্যাট হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। পবিত্র রমজানে খেজুরের চাহিদা বিবেচনায় খেজুর আমদানিতে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে যৌক্তিক মূল্যকে ভিত্তি ধরে শুল্কায়ন করা এবং কাস্টমস শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রহিত করার ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ তারিখের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরোপণীয় আমদানি শুল্ক ২৫% হতে হ্রাস করে ১৫% নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিবেচনায় পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্কহার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। চাল আমদানিতে আরোপণীয় সমুদয় আমদানি শুল্ক হইতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে এবং রেগুলেটরি ডিউটি ২৫% এর পরিবর্তে ৫% নির্ধারণ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতি (রেপো) সুদহার দফায় দফায় বাড়িয়ে মে ২০২২ এর ৪.৭৫ শতাংশ হতে সর্বশেষ ৮.০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি, রিভার্স রেপো রেট (এসডিএফ) বৃদ্ধি করে ৬.৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। নীতি সুদহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি করায় বাজারভিত্তিক গড় সুদ হারে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। আশা করা যায় যে, খুব শীঘ্রই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে। আগামী রোজায় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার অভিপ্রায়ে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত যোগানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে ভারত সরকারের নিকট ১ লাখ মেট্রিক টন চিনি এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন পিয়াজ সরবরাহের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দৈনিকভিত্তিতে কৃষিপণ্যের বাজারদর প্রকাশ করা হচ্ছে। আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে নিম্ন আয়ের মানুষের নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ২৫টি স্পটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে দুধ, মাংস ও ডিম বিক্রির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। পবিত্র রমজান উপলক্ষে আমদানি সংশ্লিষ্ট শুল্ক স্টেশনসমূহ ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও খেজুর দ্রুত খালাসকরণে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কৃষি পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য আমদানি বন্ধ না রেখে লীন পিরিয়ডে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধিকল্পে প্রয়োজনে মৌসুমভিত্তিক শুল্ক আরোপের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। দেশের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব প্রশমনে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও জেলা শহরসমূহে ৩০ টাকা কেজি দরে ওএমএস চাল বিক্রয় করা হচ্ছে। কৃষিখাতে প্রদত্ত ভর্তুকি ও প্রণোদনা কৃষকের উৎপাদন ব্যয় হ্রাস করে পরোক্ষভাবে কৃষিজাত পণ্যের মূল্য নিম্নমুখী রাখতে সহায়তা করে। ২০২৩- ২৪ অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকি ও প্রণোদনা হিসেবে ১৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে খাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে লক্ষ্যে প্রতিটি মিলের পাক্ষিক মিলিং ক্ষমতা ধানের ক্ষেত্রে পাঁচ গুণ থেকে কমিয়ে তিন গুণ করা হয়েছে। মজুত রাখার এ বিধান সংশোধন করায় বাজারে ধানের সরবরাহ বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে এবং অবৈধ মজুত রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। চালকল মালিক এবং খাদ্যশস্য ব্যবসায়ীদের গুদাম নিয়মিত পরিদর্শন করা হচ্ছে। অটো রাইসমিলসমূহ হতে চালের বস্তার গায়ে-ধানের জাতের নাম, প্রস্তুতকারক মিলের নাম ঠিকানা, নিট ওজন, উৎপাদনের তারিখ এবং মিল গেটে চালের মূল্যের তথ্য লিখে দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সব পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলাসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন স্বস্তি আসবে, তেমনি পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে আমি আশা করছি।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর