ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মাঠে গেল দুই দলের কড়া নির্দেশ
আত্মীয়স্বজন নিয়ে দোটানায় এমপি-মন্ত্রীরা
রফিকুল ইসলাম রনি

উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে এমপি-মন্ত্রীদের পরিবারের সদস্য, স্বজনদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। দলীয় প্রধানের বার্তা পেয়ে কিছু আত্মীয়স্বজন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। কিছু জায়গায় থাকছেন। এ অবস্থায় কিছু এমপি-মন্ত্রী পড়েছেন দোটানায়। কারণ আত্মীয়স্বজনরা কথা শুনছেন না, আবার দলীয় প্রধানের নির্দেশনাও রাখতে পারছেন না। ফলে ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ অবস্থায় অনেক এমপির ক্ষেত্রে। উপজেলা ভোটে দলের নির্দেশনার পর এমপি-মন্ত্রীদের আগামীর রাজনীতিতে প্রভাব পড়বে। কারণ দলীয় প্রধানের বার্তা না শুনলে তালিকা করে রাখা হচ্ছে। সেই তালিকা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক তাঁর নির্বাচনি এলাকার ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেন খালাতো ভাই হারুনুর রশিদ হিরাকে। তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন স্থানীয় নেতারা। গতকাল ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে বেলা ১১টার দিকে অনির্ধারিত এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন। আত্মীয়স্বজনকে প্রার্থী না করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, খালাতো ভাইকে প্রার্থী করা আবদুর রাজ্জাক যুক্তি তুলে ধরেন হারুনুর রশিদ হিরা উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি খালাতো ভাই। আবার তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় সভানেত্রীর কাছে যিনি লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি মামাতো ভাই। রানিং উপজেলা চেয়ারম্যানকে সমর্থন করা দোষের কিছু দেখেন না তিনি। বৈঠক থেকেই ড. রাজ্জাক দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার মোবাইলে মেসেজ পাঠান বলে জানা গেছে। 

বৈঠক থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যাদের বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তারা একজন আমার মামাতো ভাই, আরেকজন খালাতো ভাই। একজন রানিং চেয়ারম্যান, একজন মেয়র ছিলেন। আমরা স্থানীয়ভাবে তাদের সমর্থন দিয়েছি। তাদের জনপ্রিয়তাও আছে। এসব বিষয় দলের কাছে তুলে ধরেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমপিরা নির্বাচন ও স্থানীয় প্রশাসনের ওপর হস্তক্ষেপ করুক, তা আওয়ামী লীগ পছন্দ করছে না। এটি নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্ত। তাই নির্বাচনে কারও পক্ষপাতিত্ব করার সুযোগ নেই। এলাকায় না গিয়েও ঢাকায় বসে ফোনে পক্ষপাতিত্ব করা যায়। কিন্তু আমরা সেটিও করব না। এ বিষয়েই কথা হয়েছে।’ এদিকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক লুৎফুল হাবীব রুবেল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অপহরণের পর মারপিট করে পরে বাসায় পৌঁছে দেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দেশের বাইরে থেকে ফিরেই গতকাল পলক আহত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দেখতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান। একই সঙ্গে তিনি তাঁর শ্যালক রুবেলকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে টেলিফোনে নির্দেশ প্রদান করেন। 

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, যাঁরা স্বজনদের প্রার্থী করছেন, তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবারের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সেই তালিকা পর্যালোচনা করে দূরের স্বজনদের কারও কারও ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হতে পারে। তবে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান, ভাইবোন কিংবা শ্যালক এসব নিকটাত্মীয়ের ব্যাপারে খুবই কঠোর অবস্থানে দল। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের এমপি মোহাম্মদ আলী। এর আগে তাঁর স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস দুবার এমপি ছিলেন। এবার উপজেলা ভোটে স্ত্রী এবং ছেলে আশিক আলীকে প্রার্থী করেছেন। তবে আয়েশা ফেরদৌসকে ‘ডামি’ প্রার্থী মনে করছেন স্থানীয় লোকজন। মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি কেন্দ্রের নির্দেশনা পেয়েছেন। তবে তিনি অপেক্ষা করছেন। সময়ই বলে দেবে কী করতে হবে। নীলফামারীর ডিমলায় এমপি আফতাব উদ্দিন সরকারের চাচাতো ভাই আনোয়ারুল সরকার এবং ভাতিজা ফেরদৌস পারভেজ উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ভোট করছেন। এমপি আফতাব উদ্দিন সরকার জানিয়েছেন, তিনি ভাতিজা ও চাচাতো ভাইয়ের প্রার্থী হওয়া নিয়ে শুরু থেকেই বিরোধিতা করছেন। এখন দল যেহেতু সিদ্ধান্ত দিয়েছে, তা সবাই মানবেন বলে মনে করেন তিনি। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মাঠ থেকে এখনই সরে যেতে রাজি নন স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য বা স্বজনদের অনেকে। নানা কৌশলে ভোটের মাঠে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। সংশ্লিষ্ট এমপি-মন্ত্রীরাও তাদের পক্ষে সামনে আনছেন নানা ‘যুক্তি ও অজুহাত’। দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলা বা সরাসরি তাঁর কাছ থেকে নির্দেশনার অপেক্ষাও করছেন অনেকে। এ ছাড়া নানাভাবে সময় ক্ষেপণ করতে চাইছেন তাঁরা। বোঝার চেষ্টা করছেন দলের অবস্থান শেষ পর্যন্ত কতটা কঠোর হয়। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চান তাঁরা।



এই পাতার আরো খবর