ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দ্বীন ইসলামের স্বপ্ন উড়ে গেল মিজানের গুলিতে
অনলাইন ডেস্ক
দ্বীন ইসলাম

‘আমার চানডার কি দোষ আছিল গো! আমার পুতে (ছেলে) কইত, মা আমি বড় অইয়া মানুষ অইমু। তোমগো দুঃখ শেষ করমু। বাবার আর কষ্ট কইরা মাছ বেচবার লাগব না। আমার পুতের আশা খান খান কইরা দিল মিজানে।

রফিকের নির্দেশে মিজান নিজে গুলি কইরা আমরার পোলাডারে মাইরা ফালাইছে।’ বুক চাপড়ে ডুকরে কাঁদছিলেন আর কথাগুলো বলছিলেন নাওড়ায় নিহত সদ্য এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী দ্বীন ইসলামের মা ঝর্ণা বেগম।

কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া মধ্যপাড়া হাজিবাড়ি মসজিদের পেছনের বাড়িটি বিল্লাত হোসেনের। শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়িটির ভেতরে নারী-পুরুষের জটলা।

নিহত দ্বীন ইসলামের মা ঝর্ণা বেগম, বোন শিলা আক্তারের বুকফাটা কান্নায় সেখানকার পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। তাদের পাশে থাকা নারীরাও অভিশাপ দিচ্ছিল। খানিক পর ঘরে প্রবেশ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান দ্বীন ইসলামের বাবা বিল্লাত হোসেন। পরে কয়েকজন তাঁর মুখে পানির ঝাপটা দিলে জ্ঞান ফিরে আসে তাঁর।

এর পরই হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বিল্লাত হোসেন বলেন, ‘আমার পোলায় তো কোনো দোষ করে নাই। আমার পোলারে ক্যান মিজানে গুলি করল? পোলাডায় কইত, বাবা আমাগো অভাবের দিন শেষ অইব। আমি লেহাপড়া কইরা বড় অমু। আর লেহাপড়া করতে না পারলে বিদেশ যামুগা।

পোলাডায় লেহাপড়ার ফাহে (ফাঁকে) ফাহে কাম করত। আমি কইতাম, বাবা তোর কাম করার দরকার নাইগা। লেহাপড়া কর। আমার কতা হুনত না। কইত, তুমি একলা কষ্ট করবা ক্যান, বাবা! আমার হেই সোনার টুকরারে আমি এহন কই পামু?’

দ্বীন ইসলামের বোন শিলা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইডা শান্তশিষ্ট আছিল। কেউর লগে কাইজা-ঝগড়া করত না। বাবার পাশাপাশি ও কাম করত। আমি আমার জামাইর বাড়ি থেইক্যা বাপের বাড়িত আইলে কইত, মা পিঠা বানাও, আমার বোইনে খাইব। অহন আর কেডা কইব এই কতা। আমার ভাইরে তো ওরা মাইরা ফালাইছে।’

পাশ থেকে মা ঝর্ণা বেগম বলেন, ‘পুতের স্বপ্ন আছিল লেহাপড়া শিখা (শিখে) পুলিশ অইব। পুতে মেট্রিক পাস করছে। অভাবের লেইগ্যা কইছিলাম ঈদের পর মালয়েশিয়া পাডাইয়া দিমু। কাগজপত্রও করছি। কোনোডাই ওর কপালে জুটল না। মাইয়া দেখছিলাম বিয়া করামু। আমার একটা মাত্র পোলা। চাইছিলাম, বিয়া করাইয়া নায়-নাতকুরের মুখ দেখমু। কিছুই অইল না। আমার বংশে বাত্তি (আলো) দেওয়ার আর কেউ রইল না। আল্লাহ তুমি রফিফ, মিজানের বিচার কইরো।’

ওই বাড়িতে আসা কয়েকজন নারী-পুরুষ বলেন, ‘দ্বীন ইসলাম পোলা হিসেবে ভালা আছিল। লেহাপড়া করত। কাম করত। কারো লগে কোনো সময় কাইজা-ঝগড়া করে নাই। এ রহম একটা পোলারে মাইরা ফালাইছে, এইডার বিচার আল্লায় করব।’

এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, ‘আমরা সাধারণভাবে জীবন যাপন করতে চাই। নাওড়া একটা সুন্দর গ্রাম হয়ে উঠুক, এটা চাই। আমরা রফিক-মিজান হায়েনার কাছ থেকে মুক্তি চাই। ওরা বাঘের চেয়ে হিংস্র। ওরা মানুষের রক্ত নিয়ে হোলি খেলে। নাওড়ায় এ পর্যন্ত কয়েকটা খুন করেছে ওরা। দ্বীন ইসলামের আগে স্বাধীন নামে এক ছেলেকে খুন করেছে রফিক-মিজান গং।’

স্থানীয়রা অভিযোগ করে, ‘রফিক-মিজান বলে বেড়াচ্ছে, একটা খুন ওগো লেইগা বিষয় না। ওগো নাকি টাকা-পয়সার অভাব নাই। তিন কোটি টাকা রাখছে খুন থেকে বাঁচার লাইগা। আর পুলিশ নাকি হেগো পকেটে। আরো বড় বড় মন্ত্রী-এমপি নাকি হেগো লগে আছে। আল্লায় জানে আবার কারে খুন করে।’

স্থানীয়রা আরো অভিযোগ করে বলে, ‘আমাগো ভরসা আল্লাহ। হের পরে শেখ হাসিনা। তিনি সাধারণ মানুষের দুঃখ দেখেন। তিনি বিচার করব। এই হায়েনাগো বিচার আল্লায় করব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাগো বাঁচান।’

এদিকে নাওড়া এলাকায় এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা করা হয়নি।

রূপগঞ্জ থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকার বিভিন্ন স্পটে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। থানায় এখনো কেউ মামলা করেনি। আমরা অভিযোগও পাইনি। হয়তো লাশ দাফনের পর অভিযোগ আসবে।’



এই পাতার আরো খবর