ঢাকা, রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের আহ্বান এমপিদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
ফাইল ছবি

প্রস্তাবিত বাজেট অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ও দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক হবে বলে মনে করেন অধিকাংশ সংসদ সদস্য (এমপি)। তবে বাজেটের সুফল পুরোপুরি পেতে ও দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে লাগামহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা ব্যাংক লুটেরা, অর্থ পাচারকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ব্যাংক লুট, বিদেশে অর্থপাচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এই অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদকেও ছাড়িয়ে যাবেন। আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদেরও লজ্জা হয় এই সমস্ত ব্যাংক লুটেরা বা দুর্নীতিবাজদের দেখে। আজকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই সমস্ত দুর্নীতির কথা হঠাৎ করে উঠে আসছে। কিন্তু এ কথা স্বীকার করতেই হবে, যাদের বিরুদ্ধে আজকে অভিযোগ, তারা কেন আইনকে ভয় পেয়ে বিদেশে চলে যায়? কেন আজকে এই বেনজীর সাহেব বলেন বা ছাগলকাণ্ডের সেই কর্মকর্তা বলেন, তারা কেন আইনকে ভয় পায়? তারা আইনকে ভয় পায় বলেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সত্য বলে প্রতীয়মান হয়।

তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম সৎ রাষ্ট্রনায়ক আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বিশ্বের সৎ ব্যক্তিদের তালিকায় ১০ জনের মধ্যে তার নাম রয়েছে। সেখানে দুর্নীতিবাজদের কোনোভাবে বাংলাদেশ টলারেন্স করতে পারে না। ব্যাংক লুটেরা, অর্থ পাচারকারীরা এবং এই সমস্ত দুর্নীতিবাজরা আমাদের গায়ে চুনকালি মাখতে পারে না। ক্যাসিনোকাণ্ডে যেভাবে বিচার হয়েছিল, তেমনিভাবে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ইতিবাচক উল্লেখ করে সিলেট-৫ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী বলেন, যারা বাজেট বাস্তবায়ন করবেন, তাদের দুর্নীতিমুক্ত রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনবিআর, দুদক-এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আস্থাশীল ও স্বচ্ছ না করতে পারলে অগ্রসর হওয়া যাবে না। সরিষার মধ্যে যদি ভূত এসে যায়, তাহলে ভূত তাড়াবেন কী করে? তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে কলো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়েছে। নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ আছে। তবে এর মাধ্যমে যেন দুর্নীতি উৎসাহিত না হয়, সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

বরগুনা-১ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু বলেন, এই বাজেটে কোনো উচ্চাভিলাষী ব্যয়ভার নেই। এটা বাস্তবায়িত হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক সংস্কার। দেশের বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান এখন পাঁচশ’র নিচে। শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়েছি। হাতে গোনা দুয়েকটি বাদে বাকিগুলোয় কী পড়ানো হয়, কী সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, তা এখন খতিয়ে দেখা দরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে বড় বাধা সীমাহীন দুর্নীতি। অধঃপতনেরও একটা সীমা আছে। পত্রিকায় দেখলাম, বিসিএস তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করে যোগ দিয়েছেন নন ক্যাডারের সাব-রেজিস্ট্রার পদে। কী আছে এই সাব-রেজিস্ট্রার পদে?

দুর্নীতি বিরোধী অভিযান জোরদারের আহ্বান জানিয়ে সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অনেক আইন আছে। আইনগুলো দৃশ্যমানভাবে দ্রুত ও শক্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। দুর্নীতিকে বরদাস্ত করলে চলবে না। জনগণ দুর্নীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এম এ মান্নান বলেন, সরকারি ব্যয়ের মিতব্যয়িতা দেখাবার, অনুশীলন করার খুবই প্রয়োজন আছে। আমাদের বিশাল আমলাতন্ত্র, এই আমলাতন্ত্রের পরতে পরতে নানা ব্যয় আছে। গাড়ি, বসার জায়গা, বসবাস, বিদেশ ভ্রমণ, সভা সমিতি, সম্মানী-এই সব ক্ষেত্রে মিতব্যয়িতার অনুশীলন দৃশ্যমান করতে আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

আমলাতন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি উদাহরণ অত্যন্ত পীড়াদায়ক আমাদের জন্য। আমি নিজেও আমলাতন্ত্রে ছিলাম, আমার অপরাধবোধ আছে। এই সকল ব্যক্তি যে সকল আর্থিক ক্ষতি করেছে, সেইটা হয় তো আমরা পুষিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু নৈতিকভাবে তারা যে ক্ষতি করেছেন আমাদের দেশের, আমাদের আমলাতন্ত্রের, সরকারের কেন্দ্রে অবস্থান করে তারা যে সকল কাজ করেছেন, এগুলো যে কোনো সংবেদনশীল সমাজের জন্য অত্যন্ত চিন্তার এবং শঙ্কার বিষয়। চীনে সেন্ট্রাল কমিটির মেম্বারকে তিয়েনানমেন স্কয়ারে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্নীতির জন্য। তাদের মতো আমাদের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।

সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে আসছেন লৌহ মানবীর মতো। কিন্তু কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা এখনো আমার কানে বাজে, ‘আমার কৃষক দুর্নীতি করে না, আমার মজদুর করে না। দুর্নীতি করে শিক্ষিত সমাজ।’ বঙ্গবন্ধু কন্যার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স কার্যকর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

স্বতন্ত্র সংসদ সসদস্য আখতারুজ্জামান বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। অর্থমন্ত্রী এজন্য পরিকল্পনা নিয়েছেন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী যে মডেল নিয়েছেন, একই মডেল যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করে পাঁচ বছরেও সফল হয়নি। তিনি অর্থমন্ত্রীকে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে আবার বসার আহ্বান জানান।

মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য দেওয়ান জাহিদ আহমেদ বলেন, মানিকগঞ্জের সবজি ঢাকা শহরের চাহিদার বড় অংশ পূরণ করে। কিন্তু শহীদ রফিক সেতুর টোলের কারণে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। বাংলাদেশে এত ছোট সেতুর উপর আর কোথাও টোল আছে কিনা আমার জানা নেই। ২৩ বছর ধরে এই সেতুতে টোল দিয়ে যাচ্ছে জনগণ। এটা বন্ধ করা দরকার।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, যেভাবেই হোক দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে হবে। সিন্ডিকেটের কথা সবাই স্বীকার করছে। কিন্তু চেষ্টা করেও সিন্ডিকেটকে ধরা যাচ্ছে না। এটা ধরতে হবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর