ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

‘শুধু পরিকল্পনার মধ্যে থাকলে কাজ হবে না’
নগরীকে বাঁচাতে চাইলে এখন থেকেই কাজ শুরু করে দিন : গৃহায়ণমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিবেদক
বক্তব্য দিচ্ছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি ও আপনি প্রতিনিয়ত এই নগরীকে দূষিত করছি। তাই আর সময় না হারিয়ে এই নগরীকে বাঁচাতে চাইলে এখন থেকেই আমাদের কাজ শুরু করে দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘১৯৯৬-৯৭ সাল থেকে হাজারীবাগ নিয়ে আলোচনা শুনছি। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে পুরান ঢাকার ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে। পরিকল্পনা করেন, কিন্তু আমি চাই এই বছর শেষ হওয়ার আগে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিন। শুরু হলে কাজ কিছু হবে। কিন্তু শুধু পরিকল্পনার মধ্যে থাকলে কাজ হবে না।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজউক অডিটরিয়ামে ‘লালবাগ ও হাজারীবাগ এলাকার জন্য জলবায়ু সহিষ্ণু সবুজ কর্মপরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

এতে রাজউক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম। এছাড়া জিআইজেড বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মিস মার্টিনা বারকার্ড, প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম, ত্রয়ী অ্যাসোসিয়েটের টিম লিডার মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন, বিআইপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বক্তব্য রাখেন।

গৃহায়ণমন্ত্রী বলেন, ‘ছোটবেলায় বুড়ীগঙ্গার পানি মানুষকে খেতে দেখেছি। আর এখন হাত দেওয়া যায় না। এগুলো নষ্ট আমরাই করেছি। এছাড়া লালবাগের ঐতিহ্যকে রক্ষা করে যদি পরিকল্পনা করেন তাহলে খুব ভালো। কারণ, লালবাগের ঐতিহ্য নষ্ট করা যাবে না। এই এলাকাটি ৭০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী।’

স্বাগত বক্তব্যে রাজউকের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘হাজারীবাগ ও লালবাগকে জলবায়ু সহিষ্ণু এবং পরিবেশবান্ধব এলাকায় রূপান্তর করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য লালবাগ ও হাজারীবাগকে আরও বাসযোগ্য এবং টেকসই শহরে পরিণত করা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা সৃষ্টি, ঝুঁকি প্রতিরোধ, সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করা।’

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জিআইজেড এবং সিটি ক্লাইমেট ফিন্যান্স গ্যাপ ফান্ডের সহায়তায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) হাজারীবাগ ও লালবাগ এলাকায় সমীক্ষার মাধ্যম্যে কর্মপরিকল্পনাটি প্রণয়ন করে।

কর্মকর্তারা বলছেন, ষাটের দশকে স্থাপিত হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা ছিল বাংলাদেশের একমাত্র চামড়া শিল্প ট্যানারি। ট্যানারি থেকে অপরিশোধিত রাসায়নিক বর্জ্য বুড়িগঙ্গা নদীতে ফেলা হতো, যা নদী ও আশপাশের পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর ছিল। পরিবেশ দূষণের কারণে ট্যানারিগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শিল্পটি সাভারে স্থানান্তরিত করা হয় ২০১৭ সালে। ১১৩ একর জুড়ে বিস্তৃত এই এলাকাটি এখন অব্যবহৃত। জরাজীর্ণ ভবন ও পরিত্যক্ত যন্ত্রপাতি ছাড়া এখানে আর কিছু নেই। দীর্ঘদিনের ট্যানারি কার্যক্রমের ফলে মাটিতে বিপজ্জনক মাত্রায় ক্রোমিয়াম জমা হয়েছে। এলাকার বায়ু দূষণের প্রভাব পুরোপুরি কেটে যেতে সময় লাগবে।

তারা বলেন, হাজারীবাগ এলাকাটিকে একটি টেকসই এবং বাসযোগ্য এলাকায় রূপান্তর করার জন্য রিজেনারেশন প্রকল্পটি চালু করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ট্যানারি মালিকদের জমি অধিগ্রহণ করা হবে, দূষিত মাটি পরিষ্কার করা হবে এবং একটি নতুন মিশ্র-ব্যবহারের উন্নয়ন তৈরি করা হবে। পরিবেশগত দিক বিবেচনা করে নেওয়া প্রকল্পের ফলে এলাকাটি আবাসিক, বাণিজ্যিক অথবা বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে নতুনভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। হাজারীবাগ ট্যানারি এলাকা ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। তাই পুনর্বাসনের সময় ঐতিহ্য এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে সকলের জন্য টেকসই সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব হবে।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ  



এই পাতার আরো খবর