ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

কোটা সংস্কার আন্দোলন : সারা দেশে ১২ জন নিহত
অনলাইন প্রতিবেদক

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ১০ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজধানীর উত্তরায় পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষে  চার জন ও চট্টগ্রামে দু’জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীর উত্তরার বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের পরিচালক মিজানুর রহমান বলেছেন, নিহত চার জনের মধ্যে দু’জন শিক্ষার্থী। দু’জনের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

এছাড়াও চট্টগ্রামে দু’জন শিক্ষার্থী, ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী, রামপুরায় এক পথচারী, সাভারে এক শিক্ষার্থী, নরসিংদীতে এক স্কুল ছাত্র, মাদারীপুরে এক শিক্ষার্থী ও যাত্রাবাড়ীতে অজ্ঞাতপরিচয় এক রিকশাচালকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

উত্তরা

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর উত্তরা-আজমপুর এলাকায় পুলিশ ও র‍্যাবের সঙ্গে  কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে চার জন মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে দু’জন শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকশ আন্দোলনকারী।

চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থক ও পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো চট্টগ্রামজুড়ে।

নিহত একজনের নাম ইমাদ, সে পটিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। তবে নিহত অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

যাত্রাবাড়ী

যাত্রাবাড়ীর কাজলার পার বটতলা এলাকায় পুলিশের গুলিতে অজ্ঞাতপরিচয় এক রিকশাচালকের (৩০) মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। 

বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ওই এলাকায় পুলিশ ও কোটাবিরোধীদের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন ওই রিকশাচালক। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পথচারী রেজাউল ইসলাম অনিক এবং সৌরভ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুলিশের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছিল। সে সময়ে পুলিশের গুলিতে রিকশাচালক আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। আমরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল হয়ে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’ 

নরসিংদী 

নরসিংদী সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে এক স্কুলশিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। তার নাম তাহমিদ তামিম (১৫)।  

বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আরএমও মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, নিহত শিক্ষার্থীর গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে।

রামপুরা

রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিহতের নাম দুলাল মাতবর।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে মারা যান তিনি। জানা গেছে, নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় ড্রাইভার। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। তবে কিভাবে তার মৃত্যু হয় তার সঠিক তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।

ধানমন্ডি

রাজধানীর ধানমন্ডির পুরানো ২৭ নম্বর সড়ক এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকার সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষে এক ছাত্র মারা গেছেন। 

মৃত ওই ছাত্রের নাম মো. ফারহানুল ইসলাম ইসলাম ভূঁইয়া (ফারহান ফায়াজ)। সে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র। 

বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে মোহাম্মদপুর এলাকার সিটি হাসপাতালে ফারহানের মৃত্যু হয়।

সাভার

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাভার। এ সময় গুলিতে নিহত হয়েছে ইয়ামিন নামে এক শিক্ষার্থী। আহত হয়েছে অর্ধশতাধিক মানুষ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী মিরপুর এমআইএসটিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।

মাদারীপুর

মাদারীপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ উভয়পক্ষের আহত হয়েছে প্রায় ৩০ জন। ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়েছে ৬ জনকে। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের ধাওয়ায় শকুনী লেকের পানিতে ডুবে একজন ছাত্র মারা গেছে। 

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শকুনী লেকের পানি থেকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন লাশ উদ্ধার করে।

কোটা সংস্কারের দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন আন্দোলনকারীরা। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলাকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান আন্দোলনকারীরা। ঘটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও অগ্নি সংযোগের ঘটনাও।

বিডি-প্রতিদিন/বাজিত



এই পাতার আরো খবর