ঢাকা, রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

গণভবনের লেকে সাঁতার কেটে মাছ ধরলো জনগণ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদে বিপ্লবী পতাকা
অনলাইন প্রতিবেদক
একদল মানুষ লেকে নেমে সাঁতার কাটেন, জাল দিয়ে মাছও ধরেন

প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সোমবার পদত্যাগের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ খবর শোনার পরপরই ছাত্র-জনতা আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়ে। ঢাকার বিভিন্ন গলি এসে মিলিত হয় রাজপথে। অভিন্ন গন্তব্য নির্ধারিত হয় গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। 

পায়ে হেঁটে, কেউ-বা রিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে চড়ে তেজগাঁও ও শেরে বাংলা নগরের দিকে যাত্রা শুরু করে। কে ছিলো না সেই মিছিলে! দল-মত ও ধর্ম নির্বিশেষে বিভিন্ন বয়সের মানুষ রাজপথে নেমে পড়ে। ছাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো লক্ষ্মণীয়। তাদের অধিকাংশের বয়সই চল্লিশের উপরে। কারও কারও পায়ে জুতোও ছিলো না। আনন্দে অনেককে কাঁদতে দেখা গেছে।

তারা বলেন, ফ্যাসিবাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করলাম। এটি আমাদের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। আজ আমাদের আনন্দের দিন। আমাদের বিজয় হয়েছে। এই বিজয় জনতার। গত ১৫ বছর ধরে হাসতে পারিনি, মন খুলে কথা বলতে পারিনি। স্বাধীন দেশে পরাধীন মানুষের মতো ছিলাম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকালে মিছিল নিয়ে শেরে বাংলা নগরে গণভবনে ঢুকে পড়েন সাধারণ মানুষ। কেউ গেট দিয়ে ও কেউ দেয়াল টপকে ঢুকছে। গণভবনের প্রাচীর ভেঙেও ঢুকেছেন অনেকে।

গণভবনের ভেতরে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন। অনেকে ভেতরে ঢুকে গেছেন। সবার মধ্যেই উল্লাস। তবে এই উল্লাসের মধ্যেই চলছে ভবনের তৈজসপত্র নেওয়ার হিড়িক। যে যা পারছে সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছে। এসি, ফ্রিজ, টিভি, চেয়ার, টেবিল, সোফা, কাপ, প্রিচ, প্লেট, শায়া, ব্লাউজ, শাড়ি; বাকি নেই কিছুই। এমনকি শাক, সবজি, মাছ, গাছের ডাল, ফুল কিছুই বাদ যাচ্ছে না এ তালিকা থেকে। এছাড়া ফ্রিজ থেকে মাছ, গোশত, কাঁচা মরিচ, খামার থেকে হাঁস, মুরগি, ছাগল নিয়ে যায় জনতা। নারকেল গাছ থেকে ডাব পেড়েও নিয়ে যায় কেউ কেউ। একই সঙ্গে চলছে ভাঙচুর, আগুন দেওয়া৷ ওয়াল কেবিনেট, দরজাও ভেঙে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। বাদ যায়নি গাড়ির পার্টসও।

এর কারণ জানতে চাইলে অনেকে বলেন, তারা স্মৃতি হিসেবে এসব নিয়ে যাচ্ছেন।

এ সময় তারা বলেন, শেখ হাসিনা নিজে গণভবনের মাটিতে জন্মানো তাজা সবজি খেয়েছেন, তার ফ্রিজে তাজা কাঁচা মরিচ; অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সময় জনগণের সঙ্গে মশকরা করেছেন। বেগুনের দাম বৃদ্ধির সময় কুমড়া দিয়ে তিনি বেগুনি বানাতে বলেছেন। ফ্রিজের ডিপে কাঁচা মরিচ সংরক্ষণ করে দাম বৃদ্ধির সময় খেতে বলেছেন।

একদল মানুষ লেকে নেমে সাঁতার কাটেন, জাল দিয়ে মাছও ধরেন তারা। যারা সাঁতার কাটছেন বা গোসল করছেন, তাদের চেয়ে অনেক গুণ বেশি মানুষ পাড়ে বসে সেই দৃশ্য দেখছেন। অনেকে গণভবন ঘুরে দেখতে ঢুকছেন। অনেকে গণভবনের ছাদে উঠে উল্লাস করছেন।

একই সময়ে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন কয়েক হাজার জনতা। কেউ ভাঙচুর করেন। অনেকে কার্যালয়ে ঢুকে বিভিন্ন ছবিসহ জিনিসপত্র নিয়ে যান। ছবি তোলেন। তারা ছাদে উঠে সেলফি তোলেন। ছবি তোলেন দিনটিকে স্মৃতিময় করার জন্য।

এ সময় ছাত্রদের দেখা যায় জনতাকে নিবৃত্ত করতে। ছাত্ররা সাধারণ মানুষকে বোঝান যে, এগুলো শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদ। এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আমাদের সবার। ছাত্রদের কথা শুনে কেউ কেউ সেসব জিনিসপত্র রেখে যান। জনতা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদে উঠে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বিজয়ের জানান দেন। আসরের আজান হলে একদল মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদে নামাজ পড়েন। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে বাংলা বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন।  

বিডি প্রতিদিন/এএ



এই পাতার আরো খবর