ঢাকা, শনিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

এবার সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদের নারী কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড়
অনলাইন ডেস্ক

সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বেশ কয়েকটি নারী কেলেঙ্কারির অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এসব অডিও রেকর্ডে শোনা গেছে, পুলিশের সাবেক এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিভিন্ন নারীর সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আলাপ করছেন। তাদের নানা যৌন প্রলোভন দেখাচ্ছেন।

এমন জঘন্য কাণ্ডের জন্য সচেতন মহল ধিক্কার জানাচ্ছে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ সাবেক এই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাকে। তারা বলছেন, গুম-খুন ও অনেক অভিযোগ থাকার পরও বিচারের মুখোমুখি না হওয়ায় আছাদুজ্জামান মিয়ার মতো কর্মকর্তারা বেপরোয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আছাদ পছন্দমাফিক কতিপয় অধস্তন নারী অফিসারদের নিজ অফিসে ডেকে নিয়ে যেতেন। কখনোবা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় একান্ত সময় কাটাতেন। পুলিশের কতিপয় নারী সদস্যকে বাধ্য করতেন যৌন সম্পর্কে জড়াতে।

আছাদুজ্জামান বছরের পর বছর এমন অনেক নারীর সঙ্গে অবৈধ যৌন সম্পর্কে জড়ানোর নেশায় মেতেছিলেন। কিছু নারী পুলিশ কর্মকর্তাও পদোন্নতি, অর্থবিত্ত আর অবৈধ প্রভাব বিস্তারের নেশায় তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেন।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থাকাকালীন আছাদুজ্জামান নারী লিপ্সায় বাহিনীটির নৈতিক মানও ধ্বংস করেছে। ডিএমপি কমিশনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, একের পর এক এমন অনেক অপকর্মও করে গেছেন।

ভাইরাল হওয়া টেলিফোন আলাপে তার এসব অপকর্মের সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। এসব কল রেকর্ড বলছে, একাধিক নারীকে ফোনেই বাধ্য করতেন যৌন সম্পর্কে জড়াতে।

আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে পুলিশ প্রশাসনে নানা রকম দুর্নীতি হয়েছিল। এসবের পেছনে থাকা রাঘববোয়ালরা এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। তবে ক্ষমতার পালাবদলে এখন সেসব পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতি একের পর এক বেরিয়ে আসছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামানের অবৈধ সম্পদের বিষয় আলোচনায় আসে গণমাধ্যমে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশের পর। প্রথম আলো, মানবজমিন, যুগান্তরসহ বিভিন্ন দৈনিক পুলিশের সাবেক এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিপুল সম্পদ নিয়ে প্রতিবেদন করে।

এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামান মিয়া ও তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়েদের নামে ঢাকাসহ দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড়। স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে আছাদের স্ত্রী ও সন্তানদের নামে কয়েকশ শতক জমি রয়েছে। তার স্ত্রীর কোনো আয় না থাকলেও পরিবহন ব্যবসা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ রয়েছে।

আছাদুজ্জামানের সম্পদের অনুসন্ধান চেয়ে গত জুনে দুদকে চিঠি দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহউদ্দিন রিগ্যান বলেন, ‌‘অনুসন্ধান হলেই আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের প্রকৃত সত্যতা বেরিয়ে আসবে। দুদকের উচিত শিগগির এই অনুসন্ধান কাজ শুরু করা।’

অভিযোগ রয়েছে, আছাদুজ্জামান নিজ নামে, স্ত্রী আফরোজা জামান ও তিন সন্তান আসিফ শাহাদাত, আয়েশা সিদ্দিকা, আসিফ মাহাদীন এবং শ্যালক-শ্যালিকা, ভাগনেসহ আরও অনেকের নামে-বেনামে হাজার-হাজার কোটি অপরাধলব্ধ সম্পদ গড়েছেন।

আছাদুজ্জামান পরিবারের অঢেল সম্পদের মধ্যে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ভাঙ্গা হাইওয়ের পাশে এবং রাজধানীর বসুন্ধরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, জোয়ার সাহারা, সাভার ও পূর্বাচলে জমি, প্লট ও বাড়ির ছড়াছড়ি।

এছাড়াও আছাদুজ্জামান পরিবারের দেশে-বিদেশে হাজার কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। অর্থাৎ, এসব জমি, প্লট, ফ্ল্যাট, ব্যবসা অপরাধলব্ধ আয়ে গড়া। এ ছাড়া আছাদুজ্জামান মিয়া অবৈধ অর্থে দেশের পাশাপাশি আমেরিকা, আরব আমিরাতসহ প্রবাসেও অনেক প্রপার্টি কিনেছেন। নানা কৌশলে অনেক কালো টাকা সাদাও করেছেন।

আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে দুদক কমিশনার জহুরুল হক গত জুনের শেষ দিকে বলেছিলেন, ‘আছাদুজ্জামান মিয়ার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে দুদক ব্যবস্থা নেবে।’

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক আশীর্বাদ ছাড়া এ ধরনের দুর্বৃত্তায়ন সম্ভব নয়। একদিকে প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ অবস্থান অপরদিকে রাজনৈতিক আশীর্বাদ একত্রিত হয়ে তাদের দুর্নীতি এবং অসামঞ্জস্য আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা আইনের সুরক্ষার পরিবর্তে ভক্ষক হয়ে গেছেন। তারা অপরাধ নিয়ন্ত্রক। তার মানে তারা জানেন কোন অপরাধ কীভাবে করতে হয়। এটা জেনে বুঝেই করেছেন।

ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, এই ধরনের কর্মকর্তারা যে অপরাধগুলো করেছেন প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিন্তু এক ধরনের সহযোগী আছে। তাদের অনেকেই হয়তো জেনে বা না জেনে অংশীদার হয়েছেন। এ অবস্থায় সব অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কোনো ম্যাজিক বুলেট নেই।

প্রসঙ্গত, বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদের তথ্য ও নারী কেলেঙ্কারির খবর ফাঁস হওয়ার আগেই পালিয়েছেন সুচতুর ধুরন্ধর এই ঘুষ-দুর্নীতিতে নিমজ্জিত সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলে আসিফ মাহাদিনের নিকুঞ্জের বাড়িতে ভাঙচুর-হামলা চালায়। এ ছাড়াও ফরিদপুরে আছাদের দখল থেকে বিপুল জমি উদ্ধার করেছে প্রকৃত মালিক এক বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।

বিডি প্রতিদিন/এমআই



এই পাতার আরো খবর