৪৭ বছরে পা দিলো বিএনপি। দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করেছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। স্বৈরতন্ত্রের পতনের পরে ‘মুক্ত পরিবেশে’ নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার শপথ নিয়েছে তারা।
সকাল ১১টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খানসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে নিয়ে শেরে বাংলা নগরে জিয়ার করবে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন।
‘নতুন বাংলাদেশ গড়ার শপথ’
পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আজকে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন, বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলবার জন্য নিজে কাজ করছেন সেই বাংলাদেশকে গড়ে তোলবার জন্য আজকে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছি, শপথ নিয়েছি।
‘‘যেকেনো বালাই আসুক, সব চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুপ্রতিষ্ঠা করা, মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করা এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য আমরা কাজ করে যাবো… এটা আমাদের শপথ।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আজকে ২০২৪ সালে যে স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি তার জন্য বিএনপি দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে সংগ্রাম করছে, লড়াই করছে। বিএনপির সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে, ২ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক সংগ্রামের জন্য।”
‘‘আমরা আজকে এদিনকে স্মরণ করছি। আল্লাহর অশেষ রহমতে ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আজকে আমরা এই দিনটিকে মুক্ত স্বাধীন পরিবেশে পালন করতে পারছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিএনপি সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে, আগামী দিনে সঠিক রাজনীতি এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সঠিকভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। এখন বিএনপির মূল কাজ হচ্ছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই আদর্শগুলোকে বাস্তবায়িত করা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন তাকে প্রতিষ্ঠিত করা।”
‘চন্দ্রিমা উদ্যানে মানুষের ঢল’
বিএনপির জন্মদিন পালনে চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার কবরে শ্রদ্ধা জানাতে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঢল নামে। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা আসে। তারা ‘শুভ শুভ জন্মদিন, বিএনপির জন্মদিন’, ‘লও লও লও সালাম, জিয়া তুমি লও সালাম’, এক জিয়া লোকান্তরে লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে’, ‘আজকের এই দিনে জিয়া তোমায় মনে পড়ে’ ইত্যাদি স্লোগানে বিজয় সরণী থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান সরব করে রাখে নেতা-কর্মীরা। কর্মীরা রঙ্গিন ব্যানার নিয়ে আসে। কর্মীরা মাথায় বাধা ছিলো বিএনপির পতাকা সম্বলিত ফিতা।
দীর্ঘ বছর পরে এই প্রথম চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার সমাধিস্থলে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখা গেলো। অতীতে পুলিশি নিরাপত্তার কারণে নেতা-কর্মীদের মিছিল এবং প্রবেশে ছিলো নানা বিধিনিষেধ।
জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের পর প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজা হয়। এই সময়ে দলের শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, নাসির উদ্দিন অসীম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, নাজিমউদ্দিন আলম, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শাম্মী আখতার,মাহবুবুল হক নান্নু, হারুনুর রশীদ, সেলিম রেজা হাবিব, কাজী আবুল বাশার, আমিরুজ্জামান শিমুলসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা ছিলেন।
অঙ্গসংগঠনের মধ্যে ছিলেন, সাইফুল ইসলাম নিরব, আমিনুল হক, তানভীর আহমেদ রবিন, আফরোজা আব্বাস, হেলেন জেরিন খানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
নেতাকর্মীদের ব্যাপক জমায়েত
৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন উপলক্ষে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাজার প্রাঙ্গনে মিছিল সহকারে ব্যাপক জমায়েত তৈরি করে।
এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, সদস্যসচিব আমিনুল হক, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সেগুন, হাজী মোস্তফা জামান, ইউনুস মৃধা, মনির হোসেন চেয়ারম্যান, আখতার হোসেন, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য এডভোকেট মকবুল হোসেন সরদার, আলাউদ্দিন সরকার টিপু, আকবর হোসেন নান্টু ভূইয়া, হাজী ইউসুফ, সোহেল রহমান, ঢাকা মহানগর উত্তর শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম রাজা, সদস্য সচিব কামরুজ্জামান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক লায়ন ফরিদ আহমেদ, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি শরীফ উদ্দিন জুয়েল ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুল মেরাজ, পল্লবী থানা যুবদলের সভাপতি নূর সালাম, কাফরুল থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আকরামুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির দেওয়ান জনি, উত্তরখান থানা বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম খান, বিমানবন্দর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক মহিউদ্দিন তারেক, মঞ্জুর হোসেন পাটোয়ারী, মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এমএস আহমাদ আলী, উত্তরাপূর্ব থানা যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান, আদাবর থানা বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সাদেক হোসেন স্বাধীন, ৩০নং ওয়ার্ড বিএনপি সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, শেরে বাংলা নগর থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহজালাল সিকদারসহ মহানগরের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে যোগ দেন।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন