ঢাকা, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

চৌদ্দগ্রামে খাদ্য সহায়তা পেল তিন শতাধিক পরিবার
অনলাইন ডেস্ক
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বন্যাকবলিত এলাকায় উপহারসামগ্রী নিয়ে বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দ মোহন কলেজ শাখার সদস্যরা

টানা বৃষ্টি ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গিয়েছিল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা। পৌরসভাসহ ১৩টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি ছিল। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছিল। সারা দেশ থেকে অনেক স্বেচ্ছাসেবী নানা ধরনের সহায়তা নিয়ে ছুটে গিয়েছেন চৌদ্দগ্রামসহ পানিতে ডুবে যাওয়া এলাকায়।

কিন্তু পর্যাপ্ত নৌকা ও স্পিডবোটের অভাবে ভেতরের গ্রামগুলোতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাচ্ছিল কম। বিষয়টি জানতে পেরে এগিয়ে আসেন বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দ মোহন কলেজ শাখার সদস্যরা। সুদূর ময়মনসিংহ থেকে নানা উপহার নিয়ে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় এসে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। গত ৩১ আগস্ট শনিবার সকালে উপজেলার মিতুল্লাসহ বিভিন্ন পানিবন্দি গ্রামে গিয়ে মানুষের হাতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন বসুন্ধরা শুভসংঘের বন্ধুরা।

কখনো কখনো গলা পর্যন্ত পানিতে নেমে এই সহায়তা নিয়ে পানিবন্দি মানুষের দরজায় দিয়ে এসেছেন তাঁরা। বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দ মোহন কলেজ শাখার বন্ধু ও ময়মনসিংহের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে চৌদ্দগ্রামের ৩০০ বন্যার্ত পরিবারকে দেওয়া হয়েছে এই খাদ্য সহায়তা। শুকনা খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা উপকরণ পেয়ে হাসি ফুটেছে বানভাসি ওই পরিবারগুলোর মুখে।

মিতুল্লা গ্রামের আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘরে এখনো গলা পর্যন্ত পানি, যার কারণে কেউ ভেতরে গ্রামে এত পানিতে নেমে খাবার নিয়ে আসে না।

বসুন্ধরা শুভসংঘের এই ছেলেগুলো অনেক কষ্ট করে গলা পানিতে নেমে আমাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। আমরা খাবার ও প্রয়োজনী সব কিছু পেয়ে অনেক খুশি হয়েছি। তাদের জন্য অনেক দোয়া করি।’ খাদ্য সহায়তা পেয়ে আসলাম মিয়া বলেন, ‘বন্যার পানি আমার সব শেষ করে দিছে। জীবনে কখনো এত পানি দেখিনি। আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। খাবারের খুব সংকট। এই এলাকায় পানি বেশি, তাই খাবার কম পাইছি। বসুন্ধরা শুভসংঘ আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দ মোহন কলেজ শাখার সভাপতি নাফিউল হাসান মুবিন বলেন, ‘এখানে এসে দেখছি, চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানি বিভিন্ন গ্রামে এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। পুরো উপজেলার এক লাখের বেশি মানুষ এখনো পানিবন্দি। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প পরিসরে বন্যাদুর্গতদের মাঝে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেছেন বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দ মোহন কলেজ শাখার সদস্যরা। ময়মনসিংহের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের দেওয়া সহায়তা আমরা বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দ মোহন কলেজ শাখার মাধ্যমে চৌদ্দগ্রামের ৩০০ বন্যার্ত পরিবারে পৌঁছে দিয়েছি। বানভাসিদের জন্য খাদ্য সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে মুড়ি, চিড়া, গুড়, বিস্কুট, গ্লুকোজ, দুধ, প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, স্যানিটারি ন্যাপকিন, মোমবাতি, দিয়াশলাই, সাবান, কয়েল, বিশুদ্ধ পানি এবং পানি বিশুদ্ধ করার জন্য ফিটকিরি।’ 

পানিতে নেমে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া বসুন্ধরা শুভসংঘের অন্য সদস্যরা বলেন, আমরা শুনেছি এবং নিজের চোখেই দেখেছি এই উপজেলায় এখনো লাখের  বেশি মানুষ পানিবন্দি। সামর্থ্যবানদের উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এখানে আরো অনেক খাদ্য সহায়তা দরকার। বসুন্ধরা শুভসংঘ সব সময় এভাবেই মানুষের পাশে থাকবে।’

বসুন্ধরা শুভসংঘ কেন্দ্রের নির্দেশনামতো মুবিনের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ থেকে ট্রাকে করে মানুষের জন্য সহায়তা নিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ আনন্দ মোহন কলেজ শাখার সাদমান আল সাকিব, নাজমুল হক টিটু, রাফিউল ইসলাম তানভীর, সানাউল হক স্বাধীন, রেজাউল করিম রাহাত, শরিফ রায়হান, জিহাদ হাসান, মাহমুদুল হাসান আকাশ, সাদমান সাকিব মুগ্ধ, রিফাত আহমেদ, সানবির আহমেদ সোহান, ইমরুল হাসান রিফাত ও গোলাপ।



এই পাতার আরো খবর