শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দিয়েছেন তৈরী পোশাক শ্রমিকরা। সকাল থেকে এখনও কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় শিল্প এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে।
সরেজমিনে আশুলিয়ার কাঠগড়া, জিরাবো, পুকুরপাড়, নরসিংহপুর ও জামগড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি কারখানার সামনেই কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
তবে শিল্প কারখানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাঙচুর, বহিরাগতদের হামলা, অযৌক্তিক দাবি, কর্মবিরতিসহ চলমান সহিংসতা, বেআইনি ধর্মঘট, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ১৩টি কারখানায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ১২টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কাজ না করে কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানা গেছে।
নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বেশকিছু কারখানার মূল ফটকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নোটিশ টাঙানো হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো- জহরচান্দা এলাকার রাতুল গ্রুপ, আল্পস এপারেলস লিমিটেড, জিরাবো পুকুরপাড় এলাকার তাহারাত ফ্যাশন, দূর্গাপুর এলাকার ফ্যাশন ডট কম লিমিটেড, বুড়িপাড়া এলাকার ইথিক্যাল গার্মেন্টস লিমিটেড, কাঠগড়া এলাকার ডুকাটি এ্যাপারেলস লিমিটেড, আগামী এ্যাপারেলস লিমিটেড, এআর জিন্স প্রোডিউসার লিমিটেড, জিহান গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড, এআর ওয়েট প্রসেসিং লিমিটেড, ফিউচার ক্লোথিং লিমিটেড, এফজিএস ডেনিমওয়্যার লিমিটেড, আঞ্জুমান গার্মেন্টস।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, সব শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের সদয় অবগতির জন্য জানানো হচ্ছে যে, বর্তমানে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ভাঙচুর, বহিরাগতদের হামলা, অযৌক্তিক দাবি, কর্মবিরতিসহ চলমান সহিংসতা, বেআইনি ধর্মঘট, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি একই সঙ্গে শিল্পাঞ্চলে সার্বিক আতঙ্কজনক অবস্থার কারণে কারখানা পরিচালনা করার অনুকূল পরিবেশ না থাকায় এবং কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের জানমাল ও সার্বিক নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৩ (১) মোতাবেক অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে ফ্যাশন হাউস, মিলিনিয়াম টেক্সটাইল, এভারব্রাইট সোয়েটার, নাঈম নীট, জিহান গ্রুপের জিহান গার্মেন্টস, আজমাত গ্রুপের আজমাত এ্যাপারেলস লিমিটেড, জেড-থ্রী কম্পোজিট নীটওয়্যার, জী-থ্রী ওয়াশিং প্লান্ট লিমিটেড, ছেইন এ্যাপারেল, কমফিট কম্পোজিট, এআর ওয়েট প্রসেসিং, জেনারেশন নেক্সট কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া জিরাবো এলাকার টেক্সটাউন গার্মেন্টসহ কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জিরাবো পুকুরপাড় এলাকায় রাইজিং গ্রুপের ‘এ্যাকটিভ কম্পোজিট লিমিটেড’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম সোহেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সকালে কারখানার শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় প্রবেশ করে কাজে যোগ দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ) ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নিয়েছি। তাই অসন্তোষের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
কিন্তু অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা এসে মিছিল নিয়ে কারখানা ভাঙ্গার চেষ্টা করে। গেটে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে বাধ্য হয়ে শ্রমিকদেরকে ছেড়ে দিতে হয় এবং কারখানা ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। প্রায় ৩০% অর্ডার ক্যানসেল হয়ে গেছে। ১২ বছর ধরে যে বায়ার আমাদের কাজ দিয়ে আসছিল, এই শ্রমিক অসন্তোষের কারণে তারা আমার অর্ডার ক্যানসেল করে দিয়েছে।
টেক্সটাউন গার্মেন্টের একজন নারী শ্রমিক বলেন, আমরা কাজ করতে চাই বলেই কারখানায় আসি। কিন্তু কারখানায় কাজের পরিবেশ না থাকলে মালিকপক্ষ প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেবে বলে শুনেছি। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমরা কী করে খাবো? আমরা চাই সরকার যেন এ বিষয়ে দ্রুত এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেন।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবির জানান, শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, এপিবিএনসহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে না ঘটে সেজন্য কঠোর নজরদারি ও টহল অব্যাহত রয়েছে।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত কোনো কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের খবর পাওয়া যায়নি। তবে বেশকিছু কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে এবং কিছু কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম