বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। যাওয়ার সময় ফেরার যে সময়ের কথা বলা হয়েছিল সেই সময়ে তিনি ফিরছেন না, এটা পরিষ্কার। ‘বিলাতি’ বিএনপির এক নেতার বরাত দিয়ে ঢাকার কোনো কোনো পত্রিকা লিখেছে, আগামী ৩ নভেম্বর তার জন্য এয়ার টিকিটের বুকিং দেওয়া হয়েছে। তাতেও নিশ্চিত করে বলা হয়নি তিনি সেই তারিখেও আসবেন কিনা! বরং তার অসমাপ্ত চিকিৎসার যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে, তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, তার ফিরতে আরও বিলম্ব হবে। কেউ কেউ বলছেন, তার ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিত। বেগম খালেদা জিয়া বিলাত রওনা হওয়ার সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে, চোখের চিকিৎসা এবং ছেলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ও কন্যা জায়মা রহমান, প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ ঈদুল আজহা উদযাপন করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই তিনি দেশে ফিরে আসবেন। পাঠক, আপনাদের মনে থাকার কথা, তার যাওয়ার পরপরই এক লেখায় এই নিবন্ধকারের মন্তব্য ছিল না, ওই সময়ের মধ্যে তিনি আসবেন না। ঠিকই আসেননি তিনি। যে কারণে তিনি শিগগিরই দেশে না-ও ফিরতে পারেন বলে ধারণা করেছিলাম তা এখন বিদ্যমান। যে কারণগুলো তার দেশে ফেরা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি করেছে সেগুলো হচ্ছে : এক. তার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হয় তাতে তার সাজা হয়ে যেতে পারে। সরকার এ ব্যাপারে তাকে কোনো ধরনের ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। ওয়ান-ইলেভেনের পর মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার তাকে এবং শেখ হাসিনাকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে বিশেষ কারাগারে রেখেছিল। কিন্তু তিনি হয়তো মনে করছেন, এবার আদালত সাজা দিলে শেখ হাসিনার সরকার তাকে সেই সুযোগও দেবে না। থাকতে হবে সাধারণ কারাগারে। এক মন্ত্রী তো খালেদা জিয়াকে কোন কারাগারে (কাশিমপুর) রাখা হবে তা আগাম বলেও রেখেছেন। সরকারের উঁচু মহলে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই ওই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তা বলেছেন বলে পর্যবেক্ষকরা অনুমান করতেই পারেন। সরকারের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরেক সাবেক স্বৈরাচার হু. মু. এরশাদ সদম্ভে উচ্চারণ করেছেন যে, তিনি খালেদা জিয়াকে কারাগারে দেখতে চান। এটা থেকে দুটি বিপজ্জনক বিষয়ের আলামত স্পষ্ট হয় এক. বিএনপি চেয়ারপারসনকে জেল খাটানোর ব্যাপারে বোধহয় সরকারি উচ্চ মহল চিন্তাভাবনা করছে, দুই. এ ব্যাপারে আদালতের সিদ্ধান্তের জন্যও তারা অপেক্ষা করছেন না। আগে থেকেই খালেদা জিয়াকে জেলে দেওয়ার ব্যাপারে বলাবলি শুরু করেছেন। এতে যে বিচার কাজ প্রভাবিত হতে পারে তা-ও ভাবছেন না তারা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কতটুকু আছে তা নিয়ে সরকারের বিরোধী পক্ষ এবং সুশীল সমাজের কেউ কেউ যে প্রশ্ন উত্থাপন করেন এতে তা কি আরও জোরালো হয় না? ফলে খালেদা জিয়া উল্লিখিত দুই মামলায় তার ভাগ্য নিয়ে যদি দুশ্চিন্তায় থাকেন, তার পেছনে যুক্তি তো থাকেই। এই বয়সে, এই শরীরে জেল খাটা তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই। দুই. ওই দুই মামলা ছাড়াও চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের সহিংসতা-নাশকতার বেশকটি মামলায় খালেদা জিয়া হুকুমের আসামি। তার দলের অনেককেই এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারের বয়স এখন ৮৬ বছর; তার বাড়ি কুমিল্লা উত্তর জেলার হোমনা উপজেলায়, থাকেন ঢাকায়। তিনি এখন জেল খাটছেন চৌদ্দগ্রাম (দক্ষিণ কুমিল্লা জেলা) থানার পেট্রলবোমা সন্ত্রাসের এক মামলায়। খালেদা জিয়াও তেমন আশঙ্কা করতে পারেন। তিন. চোখের অপারেশন এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়। চার. বিলাতে জ্যেষ্ঠ পুত্র যাকে তিনি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ করে জীবদ্দশায়ই তার সাকসেসর বানিয়ে রেখেছেন, তার সঙ্গে দলের পুনর্গঠন সংক্রান্ত আলোচনা করা। বিলাতে অবস্থান দীর্ঘায়িত করার জন্য খালেদা জিয়া এ ইস্যুগুলো অজুহাত হিসেবে দাঁড় করাতে পারেন।
প্রিয় পাঠক, আমরা জানি, বিলাত যাওয়ার আগে খালেদা জিয়ার ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। তার কোনো কোনো কর্মচারীর ভিসা জটিলতার কথা বলা হলেও তখন প্রচার ছিল যে, সৌদি আরব গেলে সরকার তাকে দেশে ফিরতে দেবে না। সে ভয়েই তিনি সৌদি সফর বাতিল করেছেন। বিলাত সফরও তিনি দুবার পিছিয়েছেন একই কারণে। এমন একটা কথা তখন বাজারে চাউর হয়েছিল যে, সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করতে চায়। যুক্তিটা এমন যে, জাতীয়-আন্তর্জাতিক নানা বাস্তবতায় সরকার দেশে একটা আগাম নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এমন চিন্তা করে থাকতে পারে। আগাম নির্বাচন হলে খালেদা জিয়াকে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং তার দলের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা থেকে হয়তো সরিয়ে রাখতে চায় সরকার। তারা জানে খালেদা জিয়া এখনো বিএনপির ‘ভোট কারেন্সি’। ‘মাইনাসের’ পথ তো তিনটি। একটি হচ্ছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে যা করতে চাওয়া হয়েছিল; আরেকটি যে কোনো অজুহাতে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে পরে দেশে ঢুকতে আইনি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, যা ওয়ান-ইলেভেনের সরকার শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে করতে চেয়ে খালেদা জিয়ার অনমনীয় মনোভাবের কারণে করতে পারেনি এবং তৃতীয় পথটি হলো ফৌজদারি মামলায় দুই বছরের দণ্ড হয়ে গেলে। ‘মাইনাস’ করার সেই চিন্তা সরকারের মাথায় এখনো থাকতে পারে বলে ভাবতে পারেন খালেদা জিয়া। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করার জন্যও তিনি বিলাতে অবস্থান প্রলম্বিত করছেন। সম্প্রতি নতুন আরেকটি উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। দেশ-দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সরকার পক্ষ সরাসরি খালেদা জিয়া এবং তার দল বিএনপিকে অভিযুক্ত করছে। অভিযোগ এমন জায়গা থেকে এসেছে যে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তা আমলে না নেওয়ার সুযোগ নেই। আমলে না নিলে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারের অতি উচ্চাসন থেকে আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অভিযোগ সত্য নয় বলে প্রমাণিত হবে। যদি তা-ই হয় তাহলে প্রশ্ন আসবে, অসত্য অভিযোগটি এমন উঁচু জায়গা থেকে করতে কে বা কারা তথ্য ও পরামর্শ দিয়েছে? কেন দিয়েছে? আর অভিযোগটি যদি আমলে নেওয়া হয়, তাহলে বিএনপি চেয়ারপারসন একটি কঠিন দেশদ্রোহিতার মামলার আসামি হবেন। কেননা, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ড কোনো ব্যক্তি, দল বা সরকারের ক্ষতি করেনি, ক্ষতি করেছে বাংলাদেশের। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার দেশমুখী হওয়া আরও পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইঙ্গিত এরই মধ্যে পাওয়া গেছে। তার বিলাত যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চোখের চিকিৎসা। এই কাজটায় তিনি হাত দিয়েছেন অনেক পরে। এতদিনে তার একটি চোখের অপারেশন হয়েছে মাত্র। অপর চোখেও অপারেশন লাগবে। কবে সে অপারেশন হবে, কিছু বলা হচ্ছে না। নতুন করে বলা হচ্ছে, তিনি হাঁটুর চিকিৎসাও করাবেন। এটি তার পুরনো অসুস্থতা। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন আছে বলে বলছেন চিকিৎসকরা। সবকিছু মিলিয়ে চিন্তা করলে এ ধারণাই করা যায় যে, তিনি শিগগিরই হয়তো দেশে ফিরবেন না। তাহলে কী হবে? তার নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ, দলের ভবিষ্যৎ, দলের হাজার-লাখো নেতা-কর্মী, সংগঠক, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীর স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার কী হবে? একটি জাতীয় দৈনিক লিখেছে যে, তিনি এখন তার ছেলে তারেক রহমানের বাসায় আছেন তারই তও্বাবধানে। ‘বিলাতি’ বিএনপির দুই নেতা ছাড়া কেউ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমেরিকায় চিকিৎসা শেষে বিলাতে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসতে চেয়েছিলেন। অনুমতি না পেয়ে তিনি সরাসরি দেশে চলে এসেছেন। দলের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকও দেখা করার সুযোগ না পেয়ে আমেরিকা থেকে দেশে চলে এসেছেন। অথচ চালাকি করে অর্থশালী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু এবং তার ছেলে তাবিথ আউয়ালকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা ‘বিলাতি’ বিএনপির কয়েকটি অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ডানে-বাঁয়ে ছিলেন মঞ্চে। কী বিচিত্র রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে বিএনপি! দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে অনেক দিন, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে বহু দিন দেখা নেই গঠনতান্ত্রিকভাবে দলের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রধানের। ফেরার আগে ডেকে নিয়ে দেশে এসে করণীয় সম্পর্কে তার সঙ্গে পরামর্শ করাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু তাকে যেতে নিষেধ করে (মিডিয়ায় এ খবর বারবার প্রকাশিত হচ্ছে) জাতীয় রাজনীতিতে অগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ডেকে নেওয়া হয়েছে। তাবিথ আউয়াল এখনো নাকি ‘সেবা’ দিয়ে যাচ্ছেন। দলের তরুণ প্রভাবশালী নেতা যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন নাকি দেনদরবার করেও দেখা করতে পারেননি তার নেত্রীর সঙ্গে। তাকে নাকি সন্দেহ করা হয় মওদুদ আহমদের লোক হিসেবে। বিলাতে মা ও ছেলে কী করছেন, কিছুই জানছেন না দলের অন্যরা। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এতে তাদের দলের ক্ষতি হচ্ছে, কর্মীরা হতাশ হচ্ছেন। এই মহলের মতে, তারেক রহমানের আপাতত কোনো রাজনৈতিক সম্ভাবনা নেই। খালেদা জিয়া এই দুঃসময়ে দলের নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মী-সংগঠকদের বাদ দিয়ে শুধু তাকে নিয়েই যদি স্বপ্ন দেখেন সেই স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে খালেদা জিয়া এবং বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখনো সম্পূর্ণ বিনাশ হয়নি। তারেকের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে দিয়ে কিছুটা চেষ্টা করা যায়। সেই সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার জন্যই কাজ করা উচিত। তারেক রহমানেরও বিষয়টি অনুধাবন করা উচিত।
তারেক রহমানের সাংগঠনিক অনেক গুণ থাকতে পারে। কিন্তু নেতিবাচক কিছু বিষয় তার সর্বজনীনতাকে নষ্ট করেছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। এক্ষেত্রে তিনি তার বাবা প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়া এবং মা বেগম খালেদা জিয়ার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেননি। দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়া এবং বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সমগ্র দলের নেতা ছিলেন, তারেক রহমান যা হতে পারেননি। হয়ে গেছেন ‘ভাইয়াপন্থি’দের নেতা। ‘ভাইয়াপন্থি’দের নেতা হতে গিয়ে তিনি সমগ্র দলের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও আস্থার পাত্র হওয়ার সুযোগ নষ্ট করেছেন। এই ‘ভাইয়াপন্থি’রা আবার তারেক রহমানের কোনো উপকারও করতে পারেনি। সেই যোগ্যতা ও ক্ষমতা তাদের নেই। তাদের অক্ষমতা বিবেচনা করার সুযোগ তিনি পাননি স্তুতি-তোষামোদের কারণে। শোনা যায়, তিনি তা পছন্দ করেন। একদিকে ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলাসহ কঠিন কঠিন মামলা-মোকদ্দমা, অন্যদিকে দলের ভিতরে-বাইরে দারুণ ভাবমূর্তি-সংকট নিয়ে এ সময়ে তার পক্ষে দেশে এসে দলের জন্য কাজ করার কোনো সুযোগ নেই। আবার বিলাতে থেকে বাংলাদেশের দল চালানো অসম্ভব ব্যাপার। এই চিন্তা তার পরিহার করা উচিত। দেশে পার্টি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াই নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে একটা যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে দল পুনর্গঠন করে এগিয়ে যেতে পারেন। তারেক রহমানের উচিত হবে আপাতত নিজের নেতৃত্ব জাহির না করে মা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বকে দৃঢ় এবং তার হাতকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করা। কেননা, তার নেতৃত্ব এখন অকার্যকর।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, তারেক-নির্ভরতা বেগম জিয়ার নিজের, দলের এবং দলের অগণিত নেতা-কর্মীর ক্ষতি করবে। তারেকের জন্য সময় এখনো ফুরিয়ে যায়নি। তার অপেক্ষা করা, ধৈর্য ধরা উচিত। বছর দুই-তিনেকের জন্য দলের বড় দায়িত্ব থেকে তিনি অব্যাহতিও নিতে পারেন। এতে তার মঙ্গল হবে। জনগণের ভালোবাসায় হয়ে বিএনপি যদি আবার সরকার গঠনের সুযোগ পায়, তারেক রহমানের তখন দেশে ফিরে আসা কি অনেক সহজ হয়ে যাবে না? দল কি তখন তাকে ফিরিয়ে দেবে?
খালেদা জিয়া অতীতে অনেক সাহস দেখিয়েছেন। গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, দেশের কাজে, জনগণের কল্যাণে অনেক অবদান রেখেছেন। দেশের বহু মানুষ আশা করে, তিনি এবারও সাহস দেখাবেন। জেলজুলুমের ভয়কে জয় করে দেশে এসে আবারও গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় শরিক হবেন। হিংসা-হানাহানির পথ পরিহার করে শান্তিপূর্ণ পন্থায় গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করবেন, পরবর্তী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবেন। দল পুনর্গঠনের যে কথা বলেছেন, তিনি কি জানেন, পুনর্গঠনের নামে কী হচ্ছে? পুরনো কায়দায়ই নামকাওয়াস্তে ‘নতুন বোতলে পুরনো মদ’ ঢালা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়েও হচ্ছে পারিবারিক কমিটি অথবা পকেট কমিটি। অভিযোগ পাওয়া যায়, মাঠের নিবেদিতপ্রাণ, সাহসী লড়াকুরা স্থান পাচ্ছে না কমিটিতে। ‘বিলাতি’ সংযোগের কথা বলে বা ভয় দেখিয়ে নাকি এমন অপকর্ম চলছে। কী যে এক ‘বিকাশ’ হয়েছে, যারা নেতৃত্বের প্রত্যাশী তাদের নাকি ‘বিকাশ নম্বর’ দিয়ে সেই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। কোথায় গিয়ে ঠেকেছে বিএনপির দল পুনর্গঠনের কাজ! দলের পদবিধারীরা অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। কিন্তু যা রটে তা কিছু তো বটে! দল পুনর্গঠন করে ফল পেতে হলে সবকিছু ভেঙেচুরে নতুন করে কাজে হাত দিতে হবে। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার দৃঢ় অবস্থানটা জরুরি। কমিটিতে তারেক রহমানের লোক বলে কাউকে ঢোকানোর কী প্রয়োজন? তারেক যখন দেশে আসার সুযোগ পাবেন, দলের সবাই তো তার লোক হওয়ার কথা। দুর্যোগ কাটিয়ে, সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে দেশে ফিরে আসতে পারলে গোটা দলই তখন তার পাশে থাকবে। শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ হচ্ছে, তারেক রহমানের উচিত বিলেতে থেকে এখন নিজেকে তৈরি করা এবং অবিতর্কিত একটি ভাবমূর্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করা। এই মুহূর্তে সবকিছু নির্ভর করছে খালেদা জিয়ার দেশে ফিরে আসার ওপর। সপ্তাহ দুই আগে এক লেখায় উলেখ করেছিলাম যে, বিএনপি এখন এক ‘ফেরারি’ দল। ব্যক্তি ফেরারি হওয়ার কথা জানি আমরা; কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, বিপুল জনসমর্থিত একটি দল দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি এবং সৎ, সাহসী ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এখন ফেরারি। কেউ কেউ এখন বলছেন, দলটি এখন ‘সিসিইউ’তে আছে। সঠিক ‘চিকিৎসায়’ অবস্থার উন্নতি না হলে ‘আইসিইউ’তে পাঠাতে হবে। সেখানেও যদি সঠিক ‘চিকিৎসা’ না হয়, তাহলে কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার দেশে ফিরে আসা উচিত অতি দ্রুত। তার দ্রুত ফিরে আসাটাও সরকারের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি করবে। বিলাত থেকেই তিনি বড় বড় জনসভা, লংমার্চ, রোডমার্চের মতো কিছু শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন। সরকারকে ফেলে দিতে পারেন গণতন্ত্রের কঠিন পরীক্ষায়।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
ই-মেইল : kazi.shiraz@yahoo.com
বিডি-প্রতিদিন/ ২৬ অক্টোবর, ২০১৫/ রশিদা