ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

দুঃখিত শমসের ভাই!
মারুফ কামাল খান

শহীদ জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন চৌধুরী রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী দলের ভাইস চেয়ারম্যান পদ ও সদস্যপদেও ইস্তফা দিয়েছেন। এই সময়ে এমন আচমকা তিনি কেন বিদায় নিলেন তা নিয়ে বিতর্ক ও মূল্যায়ন চলছে নানান রকমের। তবে আওয়ামী লীগ যে এতে খুশি তা তারা প্রকাশ করে ফেলেছে।

কদিন আগেও তারা শমসের মবিনকে প্রকাশ্যে বেইমান বলে গালি দিয়েছে। বোমা মারা, গাড়ি পোড়ানো ও খুনের মামলা দিয়ে দফায় দফায় জেলে পুরেছে বীরবিক্রম  খেতাবধারী যুদ্ধাহত এই প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে। এখন তার প্রশংসা করছে লীগের লোকেরা। শমসের চৌধুরী যা কিছু জীবনে পেয়েছেন তার প্রায় পুরোটা জিয়া পরিবারের কাছ থেকেই। অন্যদের কাছ  থেকে চাকরি খাবার হুমকি, কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি, মুজিব হত্যা মামলায় জড়াতে ক্রমাগত জিজ্ঞাসাবাদ, জেল, সন্ত্রাসের মামলা এবং বেইমান খেতাব উপহার পেতে হয়েছে তাকে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জার্মানিতে সরকারি খরচে চিকিৎসা করা এবং  সেনাবাহিনী থেকে তার চাকরি ফরেন অফিসে ন্যস্ত করার উপকারের জন্য নিয়মিত খোঁটাও শুনতে হয়েছে। শমসের ভাই রাজনীতিতে এসে দ্রুত বিএনপির উচ্চপদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনি আচানক চলেও গেলেন সেখান থেকে। তার এ অবসর নেওয়া সম্পর্কে বিএনপির মূল্যায়ন কী, সে সম্পর্কে মন্তব্য করার উপযুক্ত লোক আমি নই। আমার নিজের মত হলো পলিটিক্স ও পার্টিতে কারও  ঢোকা ও অবসর নেওয়া তার একান্ত নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কিন্তু এ ব্যাপারে সময়টাকে সবাই খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে থাকে। শমসের ভাইয়ের অবসর ঘোষণার সময়টা সঠিক হয়েছে কিনা এ প্রশ্ন আমার মনেও খচখচ করছে। তিনি কি আরও কিছুদিন চুপচাপ ও নিষ্ক্রিয় থাকতে পারতেন না? অবসর নেওয়ার ঘোষণাটা আরেকটু স্থিতিশীল সময় এলে দিলে কী এমন ক্ষতি হতো? জেল থেকে বেরিয়ে এবার শমসের ভাই আমাদের কারুর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। অসুস্থতার কথা বলেছেন। কিন্তু তার বিপদের দিনে কেউ খোঁজ নেয়নি এমন প্রচ্ছন্ন ক্ষোভের কথাও এর ওর কাছে শুনেছি। কিন্তু শমসের ভাই, বিপদে আমরা সবাই। তিন মাস টানা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন অফিসে আমরা তো দুঃসহ বন্দী জীবনই কাটিয়েছি। যোগাযোগের সব মাধ্যম বিচ্ছিন্ন ছিল। এ সময়ে ম্যাডাম জিয়া তার প্রিয় সন্তান হারিয়েছেন। এ বিষয়গুলো নিশ্চয়ই আপনার বিবেচনায় থাকা উচিত। আরেকটি কথা বলব। দেশ-জাতি-আদর্শ অনেক বড় বিষয়। কর্মচারী স্তরের ছোটখাটো কোনো  লোকের কথায় ক্ষুণ হয়ে এত বড় বিষয়গুলো বিসর্জন  দেওয়া যায় না কখনো। যাই হোক, আপনি অসুস্থ। আপনার সুচিকিৎসা হোক। আপনি সুস্থ হন। আপনি ভালো থাকুন। দুঃখিত শমসের ভাই, খুবই দুঃখিত আমরা। আপনার মতো একজন বর্ণাঢ্য মানুষের চমৎকার সান্নিধ্য থেকে আপনি আমাদের বঞ্চিত করে সত্যি দুঃখ দিলেন।

লেখক: প্রেস সচিব, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া

বিডি-প্রতিদিন/ ৩১ অক্টোবর, ২০১৫/ রশিদা



এই পাতার আরো খবর