ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মন চাই- নাকি দেহ!
গোলাম মাওলা রনি

বাংলা সিনেমার একটি জনপ্রিয় সংলাপ নিয়ে আজ ঘুরতে বের হব বলে মনকে স্থির করে ফেললাম। সংলাপটির বয়স কত তা আমি জানি না- তবে এটির গ্রহণযোগ্যতা এবং কার্যকারিতা যে অনাদিকালের সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এই সংলাপ নিয়ে আপনি চলে যেতে পারেন আজ থেকে তিন হাজার বছরের পুরনো কোনো রাজ্য রাজধানী কিংবা রাজার দরবারে।  সংলাপটি বলতে পারেন যুদ্ধক্ষেত্রে অথবা ছায়া সুনিবিড় শান্তিময় জনারণ্যে। আপনার প্রেমকুঞ্জে যেমন সংলাপটির তাৎপর্য রয়েছে তেমনি দেবতার আলয়ের পবিত্র পরিবেশেও সেটির গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয়। প্রথমে সংলাপটি বলে নিই তারপর চলে যাব মূল প্রসঙ্গে।

বাংলা সিনেমার ভিলেন বলছে- হু! হাহ্! হাহ্! সুন্দরী! আজ তুই আমার হাতে বন্দী- আজ তোকে কেউ আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। নায়িকা বলছে, ওরে শয়তান। তুই শুধু আমার দেহ পাবি কোনো দিন মন পাবি না।

সিনেমার ভিলেন যেখানে নারীর দেহ দখলে মত্ত সেখানে নায়ক কিন্তু তা করে না। নায়ক সব সময় তার প্রেয়সীর মনের খোঁজ করে। মনের সন্ধানে সে ছুটে চলে দিগদিগন্তে। অতিক্রম করে পাহাড়-পর্বত, মরুভূমি কিংবা সাগর-মহাসাগর। ভিলেন নায়িকার দেহ উপভোগ করার জন্য নিজের শক্তিকে দানবীয় শক্তিতে পরিণত করে। আজকের আলোচনার প্রসঙ্গ সেটা নয়- আজ আমরা মূলত আলোচনা করব রাজনীতিতে দেহ দখল বনাম মন দখলের প্রসঙ্গ নিয়ে।

রাজনীতিতে রয়েছে দুটি সম্প্রদায়। একদলকে বলা হয় নেতা এবং অন্য দলকে বলা হয় অনুসারী। নেতা যখন তার অনুসারীদের হৃদয় জয় করার চেষ্টায় অবিরত সংগ্রাম এবং সাধনা করতে করতে তার কাক্সিক্ষত মাকামে পৌঁছে যান তখন সেখানে সৃষ্টি হয়ে যায় এক স্বর্গীয় পরিবেশ। নেতার অবস্থান তখন সৃষ্টি করে নতুন নতুন মাত্রার ইতিহাস। অন্যদিকে নেতা যখন তার অনুসারীদের মনের পরিবর্তে তাদের দেহের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চান তখন ঢাল-তলোয়ার, গুলি-বোমা-বন্দুক, চাবুক ও কারাগার হয়ে ওঠে নেতার প্রধান অলঙ্কার। অত্যাচার, অবিচার, অনাচার, মিথ্যাচার, হুমকি, ধমকি, জোর-জুলুম, খুন-রাহাজানি, ধর্ষণ প্রভৃতি পাপাচারকে নিজের হাতিয়ার এবং পোশাক পরিচ্ছদ বানিয়ে নেতা তার অনুসারীদের দেহ দখলের প্রচেষ্টায় মেতে ওঠেন। নেতা অনুসারীর বাইরের অংশটির নাম জনগণ। একজন নেতা তার অনুসারীদের সঙ্গে যেরূপ আচরণ করেন ঠিক তদ্রুপ আচরণই তিনি করেন জনগণের সঙ্গে যখন তিনি শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। যেসব নেতা তার অনুসারীদের দেহের ওপর আধিপত্য স্থাপন করতে চান তারা প্রথমেই আক্রমণ করতে চান মানুষের শব্দযন্ত্রে- অর্থাৎ ঠোঁট, জিহ্বা এবং কণ্ঠনালীতে। মানুষের বাক্শক্তিকে নিজেদের করায়ত্তে এনে মনুষ্য সমাজকে কবর কিংবা শাসনের মতো নীরব ও নিস্তব্ধ করে তোলার মধ্যেই রাজনীতির ভিলেনরা নিজেদের সার্থকতা খুঁজে বেড়ায়। ভিলেনদের দ্বিতীয় পছন্দ মানুষের চোখ এবং অঙ্গভঙ্গি। মানুষ যদি ভিলেনদের রাজ্যে অন্ধ ও পঙ্গুদের মতো চলাফেরা করে তবে তারা নিজেদের সফল বলে আÍপ্রচারণায় মেতে ওঠে। তৃতীয় ধাপে ভিলেনরা মানুষের বুদ্ধি-শুদ্ধি, বিবেক এবং অনুভূতির মূলে একের পর এক কুঠারাঘাত শুরু করে। যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষেরা গরু-গাধা, ছাগল-ভেড়া অথবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতে পরিণত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ভিলেনরা ক্ষ্যান্ত হয় না।

ভোগ, দখল, অন্যায়-অত্যাচার এবং জুলুম-ব্যভিচারে সিনেমার ভিলেন এবং রাজনীতির ভিলেনের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। সিনেমার ভিলেনরা সাধারণত নারী দেহের যৌনতা উপভোগের জন্য কদর্য পথে পা বাড়ায়। এর বাইরে ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পদ অর্জন কিংবা পদ-পদবি লাভের জন্য সীমিত পরিসরে তাণ্ডব চালায়। অন্যদিকে রাজনৈতিক ভিলেনরা করে না এমন কুকর্ম নেই। তারা যদি কোনো নারী-কিংবা পুরুষের প্রতি লোভাতুর হয় তবে সেই নারী বা পুরুষের সবকিছু নিঃশেষ না করে ছাড়ে না। তারা যদি কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্য, জনপদ, শহর-বন্দর কিংবা রাজ্যের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তবে সেগুলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, তৈমুর লংয়ের পাশাপাশি হিটলার, মুসোলিনী, পলপট প্রমুখের নাম আজও বিশ্ববাসীর ঘৃণা ও অভিশাপের মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে আছে উল্লিখিত রাজনৈতিক ভিলেন হিসেবে।

রাজনীতির নায়ক এবং সিনেমার নায়কের কর্মকাণ্ড প্রায় একই ধরনের। তারা মানুষের হৃদয় জয় করার জন্য পাগল হয়ে যায়। নিজেদের কৃতিগাথা কোনো মর্মর পাথরে খোদাই না করে তারা মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেওয়ার জন্য নিরন্তর চেষ্টায় রত থাকে। মানুষের দুঃখ, কষ্ট, বেদনা এবং অভাব অভিযোগকে তারা আপন কাঁধে নিয়ে নেয়। ফলে মানুষ তার হৃদয়ের পুরোটি জায়গায় আপন মনের মাধুরী দিয়ে তৈরি করে নেয় বিরাট এক সিংহাসন এবং সেখানে তার আরাধ্য নায়ককে বসিয়ে সে তার দেহ-মন-সর্বস্ব উজাড় করে দেয় নায়কের পদতলে। পৃথিবীর প্রথম সম্রাট সাইরাস দি গ্রেট, আলেকজান্ডার দি গ্রেট, আকবর দি গ্রেট প্রমুখ মহানায়ক জীবনের শেষদিন পর্যন্ত জনগণের হৃদয় জয় করার জন্য লড়াই করে গিয়েছেন। ফলে কিয়ামত পর্যন্ত তারা মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন স্বপ্নের নায়ক হয়ে।

মানুষের ভালোবাসা, সাহায্য, সমর্থন এবং দোয়া ছাড়া রাজনীতির কোনো নায়ক জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারেননি। অন্যদিকে খলনায়করা তাদের জীবনকালে নিজেদের পাপের শাস্তি পায়নি এমন একটি ছোট্ট উদাহরণ পৃথিবীর বুকে নেই। এই উপমহাদেশে একজন লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা এসে বলবে আমি মীরজাফর, উমি চাঁদ, রায় দুর্লভ কিংবা জগৎ শেঠের বংশধর। অথচ ক্ষমতায় থাকাকালীন ওইসব দুরাচারের আত্নীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং সাহায্যকারীর অভাব ছিল না।

রাজনীতির অনেক মহানায়ক তাদের কিংবদন্তিমূলক বিজয়গাথা, সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা, সুন্দর মন, মানুষের জন্য ভালো কাজ করার ইচ্ছা, উন্নত চরিত্র, জ্ঞান-বিজ্ঞানের উত্তম শিক্ষা এবং অনুরূপ শক্তিশালী অনুসারী নিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন কেবল জনগণের ভালোবাসা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা ও আস্থা লাভ করার জন্য। তারা অনেক চেষ্টা করেও মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পারেননি ঠিক যেন সিনেমার দ্বৈত প্রেমের কাহিনীর মতো। রহিম ও করিম উভয়েই নায়ক। নায়িকার নাম ছমিরন। নায়িকা ভালোবাসে রহিমকে। কিছু দিন পর করিম এসে তাকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিল। করিম রহিমের চেয়ে সবদিক থেকেই অনেক যোগ্যতাসম্পন্ন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ছমিরন তার প্রথম ভালোবাসাকে বাদ দিয়ে করিমের গলায় মাল্য পরায় না। রাজনীতির মাঠে জনগণ যদি একবার কাউকে ভালোবাসে তবে সেখান থেকে ফিরে আসে না। যেসব নায়ক জনগণের হৃদয়ের আসন থেকে কাউকে নামিয়ে নিজেরা আসন পেতে চান তাদের শত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা এবং কর্মদক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ফলাফল হয় রহিম-করিম এবং ছমিরনের প্রেমের মতো।

মানুষ যদি একবার বুঝতে পারেন যে, নেতা বা তাদের নায়ক তাদের সত্যিকার অর্থেই ভালোবাসেন এবং তাদের সঙ্গে প্রতারণা করবেন না তখন পরিস্থিতি হয় উল্টো। নেতা যদি বারবার ভুল করতে থাকেন কিংবা নেতার কারণে যদি লাখ লাখ নয়, কোটি মানুষের প্রাণ চলে যায় তবুও জনগণ সেই নেতার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় না। ভালোবাসা এবং বিশ্বাসের রাজ্যে প্রতারণা, মিথ্যা বলা, ঠকানো- ইত্যাদি একেবারেই বরদাস্ত করা হয় না। সৎ, আন্তরিক এবং সত্যপথের পথিক নেতা যদি নিষ্ঠুরও হন তবুও জনগণ তাকে ছেড়ে যায় না। এ ব্যাপারে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু তার আগে রহিম করিম ও ছমিরন সংক্রান্ত প্রেমের একটি দুনিয়া কাঁপানো রাজনৈতিক উদাহরণ দিয়ে নিই। পরবর্তীতে নেপোলিয়নের প্রসঙ্গে কিছু বলে আজকের লেখার ইতি টানব। প্রথম ঘটনার নায়কের নাম হানিবল। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পাঁচ মিলিটারি জিনিয়াস বা বিস্ময়কর সামরিক প্রতিভাধারী মহানায়কদের একজন তিনি। পুরো নাম হানিবল বার্কা। তৎকালীন বিশ্বের দুটি সুপার পাওয়ারের একটির অধিশ্বর ছিলেন তিনি। ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে ২২৩১ বছর আগে। রোম তখন ইউরোপসহ তৎকালীন বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার। অন্যদিকে উত্তর আফ্রিকার সমুদ্র তীরবর্তী নগররাষ্ট্র কার্থেজ তখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী, উন্নত এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র। দুটি ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের মধ্যে আধিপত্য নিয়ে প্রায় একশত বছর ধরে বহু যুদ্ধ, দ্বন্দ্ব, ফ্যাসাদ এবং ঝগড়া-বিবাদ চলে। এই সময়ের মধ্যে তিন তিনটি মহাযুদ্ধ পর্যন্ত হয়ে যায়। ইতিহাসের সেই যুদ্ধকে বলা হয় পিউনিখের যুদ্ধ।

হানিবল তার বাবা মহাবীর হামিলকারের অসিয়ত অনুযায়ী রোমান সাম্রাজ্য ধ্বংসের শপথ নিয়ে কিশোর বয়সে সৈন্য সামন্ত সমেত কার্থেজ ত্যাগ করে স্পেন চলে চান এবং পুরো স্পেন দখল করে বিরাট এক সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন। তারপর দুর্ভেদ্য আল্পস পর্বতমালা অতিক্রম করে রোমান সামাজ্যে ঢুকে পড়েন। রোম এবং সম্ভবত মানব জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক যুদ্ধে পুরো রোমান বাহিনীকে শেষ করে দেওয়া হয়। ২১৬ খ্রিস্টাব্দের ২ আগস্ট ক্যান্নাই প্রান্তরে পৃথিবীর সবচেয়ে সুশিক্ষিত ও শক্তিশালী ছিয়াশি হাজার রোমান সৈন্য হানিবলের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অন্যদিকে হানিবলের সৈন্য সংখ্যা ছিল মাত্র পঁয়ত্রিশ হাজার। যুদ্ধে হানিবল জয়লাভ করেন এবং প্রায় আশি হাজার রোমান সৈন্য যুদ্ধক্ষেত্রে মারা পড়ে। রোম সাম্রাজ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। রোমবাসী পালাতে আরম্ভ করে কারণ রাজধানী দখল করা হানিবলের জন্য তখন কোনো ব্যাপারই ছিল না। কিন্তু হানিবল রোম দখল না করে রোমান সিনেটকে আÍসমর্পণের নির্দেশ দেন।

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, হানিবল কেন ক্যান্নাই থেকে সোজা রোম অভিমুখে রওনা করলেন না? রোম দখল এবং রাজধানীর নিয়ন্ত্রণের জন্য তাকে তো কোনো যুদ্ধই করতে হতো না। বরং এই কাজ না করার কারণে পরবর্তীতে হানিবলকে আÍহত্যা করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছিল। এসব প্রশ্নের উত্তর হানিবল নিজেই দিয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ জয় এবং মানুষের হৃদয় জয় এক নয়। রাজ্য দখল এবং রাজ্য শাসন এক নয়। রোম সাম্রাজ্যের জনগণ তাদের শাসকদের প্রতি খুশি এবং সন্তুষ্ট ছিল। রোমান সিনেটের প্রতি তাদের কোনো অনুযোগ ছিল না। অন্যদিকে আমার প্রতি ছিল রোমবাসীর প্রচণ্ড ঘৃণা, আতঙ্ক এবং ভয়। এ অবস্থা দূর করার জন্য আমার দরকার ছিল রোমান সিনেট এবং সেখানকার রাজনীতিবিদদের সমর্থন। রাজনৈতিক সমর্থন ছাড়া রোম নগরীতে আমি টিকতে পারতাম না। সেক্ষেত্রে নগরীটি আমার সৈন্যদের দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হতো। আমার কবল থেকে রক্ষার জন্য নগরবাসীই শহরটি জ্বালিয়ে দিত। শেষ অবধি আমি একটি পোড়া নগরীর বিজেতা হিসেবে নিজেকে একটি বধ্যভূমিতে বন্দী করে ফেলতাম। হয়তো ফিরে আসার পথ পেতাম না- পালানোর উপায় থাকত না, যুদ্ধ করার প্রতিপক্ষ পেতাম না এবং খাদ্য-পানীয়ের অভাবে মরেই যেতাম।

হানিবলের মূল্যায়ন যে কতটা নির্মম সত্য ছিল তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন মহাবীর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। রাশিয়া এবং মিসর জয়ের পর রাজনৈতিক সমর্থনহীন অবস্থায় মস্কো ও কায়রো দখলের পর। যুদ্ধে জয়লাভের পর নেপোলিয়ন মস্কো গিয়ে দেখলেন পুরো নগরী জনশূন্য এবং বিরান ভস্মীভূত প্রেতপুরী। নগরবাসী নিজেদের শহরে আগুন দিয়ে শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল। ফলে মস্কো যাত্রার সময় নেপোলিয়নের সঙ্গে যে ছয় লাখ সৈন্য ছিল তা ফিরতি পথে যাত্রার ধকল, রোগবালাই এবং গেরিলাদের আক্রমণে কমতে কমতে এমন শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছে যে, মাত্র ৯৩ হাজার সৈন্য প্রাণ নিয়ে ফ্রান্স পৌঁছতে পেরেছিল। অন্যদিকে মিসর থেকে ফেরার পথে পুরো সৈন্যবাহিনীই মারা পড়ে সমুদ্র ঝড়ের কবলে পড়ে। কেবল নেপোলিয়ন এবং সামান্য কয়েকজন সৈন্য সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। নেপোলিয়ন সারা জীবন যুদ্ধই করেছেন। তার পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে কেবল যুদ্ধক্ষেত্রেই ত্রিশ লাখ ফরাসি সৈন্য মারা গিয়েছিল। তারপরও জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সৈন্যরা নেপোলিয়নকে ভালোবাসত- ভালোবাসত ফ্রান্সের সর্বস্তরের জনগণ। নেপোলিয়নের মৃত্যুর ১৯৪ বছর পরও শুধু ফ্রান্সবাসী নন, তাবৎ দুনিয়ার শান্তি ও সুশাসনকামী সবাই নেপোলিয়নকে ভালোবাসে এবং আগামী দিনেও ভালোবাসবে। কারণ তিনি প্রাণ থেকে তার অনুসারী, দেশের জনগণ এবং সাধারণ বিশ্ববাসীকে ভালোবাসতেন।  তার তৈরি নেপোলিয়ন সিভিল কোড নামক আইন দ্বারা আজও ফ্রান্সের মতো উন্নত ও সভ্য দেশ পরিচালিত হচ্ছে, আর তার প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অব ফ্রান্স সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে তাবৎ দুনিয়ার ব্যাংকিং ব্যবস্থায় শিক্ষক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

                লেখক : কলামিস্ট।



এই পাতার আরো খবর