ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

তারা পারেন, অথচ অন্যরা করেন না
গোলাম মাওলা রনি

দিন কয়েক আগে পত্রিকায় একটি অদ্ভুত খবর পড়লাম। অদ্ভুত বললাম এ কারণে যে, সচরাচর পত্রিকাগুলো এমন খবর ছাপে না। আর ছাপবেই বা কেমনে— কারণ এমন খবর তো সৃষ্টিই হয় না। খবরটি ছিল জনৈক সরকারি কর্মকর্তাকে তার সততা, কর্মদক্ষতা এবং কর্মে অসাধারণ সফলতার জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। অবাক করা তথ্য হলো— কোনো ভুঁইফোড় সংগঠন কর্তৃক সম্মাননা জানানো হয়নি অথবা কর্মকর্তার নিজস্ব অর্থে হল ভাড়া করে এবং ভাড়া করা বক্তা এনে কোনো ক্রেস্ট বিতরণ করা হয়নি। কর্মকর্তার নিয়োগকর্তা অর্থাত্ রাষ্ট্রই অনুষ্ঠানটির আয়োজক ছিল। অন্যদিকে রাষ্ট্রের প্রধান প্রাণপুরুষ রাষ্ট্রপতি জনাব আবদুল হামিদ স্বয়ং উপস্থিত থেকে নিজ হাতে প্রজাতন্ত্রের সেই সত্ এবং সাহসী কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করেছেন।

খবরে প্রকাশ মুনির চৌধুরী নামক কর্মকর্তা বর্তমানে বিদ্যুত্, খনিজ ও জ্বালানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি নামক সরকারি প্রতিষ্ঠানে কোম্পানি সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। প্রতিষ্ঠাটির পুঞ্জীভূত অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অরাজকতা দূর করার জন্য সরকার একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এবং যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় কর্মকর্তা মুনির চৌধুরীকে সেই টাস্কফোর্সের প্রধান করা হয়। টাস্কফোর্স অতি অল্পসময়ের মধ্যে দুর্নীতি এবং অনিয়ম রোধ, বকেয়া রাজস্ব আদায় এবং রাজস্ব বৃদ্ধিতে এমন সব পদক্ষেপ গ্রহণ করে— যার ফলশ্রুতিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির আয় ৫০০ কোটি টাকা বেড়ে যায়। একটি সংস্থার এমন সফলতার পেছনে মানুষটিকে সম্মান জানানোর জন্য রাষ্ট্র যখন সম্মাননা প্রদানের ব্যবস্থা করল ঠিক তখনই প্রসঙ্গটি আমার নজরে এলো অন্য একটি কারণে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলার আগে জনাব মুনির চৌধুরী সম্পর্কে কিছু বলে নিই।

মুনির চৌধুরীর সঙ্গে আমার সরাসরি কোনো পরিচয় নেই। ২০১২ সালের শেষ দিকে একবার তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছিল— তাও আবার ২-৩ মিনিটের জন্য। কিন্তু তার নাম আমি জানতাম বহুদিন আগে থেকেই। তিনি এক সময় চট্টগ্রাম বন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। নিয়োগ লাভের পরই তিনি বন্দরের বেদখল হওয়া ভূমি উদ্ধারের জন্য তত্পরতা শুরু করেন। তত্কালীন সময়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের বেদখল হওয়া সরকারি  ভূ-সম্পত্তি উদ্ধার করে তিনি চট্টগ্রাম তো বটেই পুরো দেশেই হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। শিপিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বিধায় আমি খুব ভালো করেই জানতাম, চট্টগ্রাম বন্দরের ভূমি দখলকারী কারা এবং তাদের ক্ষমতার ভিত্তি কতটা মজবুত! ফলে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যখন এত বড় একটি চক্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হলেন তখন সারা দেশের আরও অনেক মানুষের মতো আমিও তাকে ম্যাজিস্ট্রেট মুনির চৌধুরী নামেই হূদয়ের মণিকোঠায় শ্রদ্ধার আসনে বসিয়ে রাখলাম।

এখানে বলে রাখা ভালো, খুব অল্পসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সততা, নিষ্ঠা এবং ব্যতিক্রমী কর্মের কথা দেশবাসী জানতে পারে। ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট রোকনোদৌলার অভিযান কিংবা গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সড়ক যোগাযোগ ও ভৌতিক কাঠামোর উন্নয়নে এলজিইডির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান প্রকৌশলী জনাব কামরুল ইসলাম সিদ্দিকীর অবদান অনেকের মতো আমিও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। নিজের মনের অবদমিত আকাঙ্ক্ষা, শিক্ষা-দীক্ষা এবং ধর্ম বোধের কারণে আমি সেই ছোটবেলা থেকেই সৎ এবং ভালো মানুষের ভালো ভালো কর্মগুলোর সন্ধান করে আসছি এবং নিজের অবস্থান থেকে যথাসম্ভব সাহায্য সহযোগিতার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আমার সেই অনুসন্ধিত্সু মনের কারণেই হয়তোবা মুনির চৌধুরীর বিভিন্ন সময়ের নানান তত্পরতার কথা আমার কাছে চলে এসেছে। তিনি যখন মিল্কভিটা অথবা পরিবেশ অধিদফতরে কর্মরত ছিলেন তখনও যথেষ্ট দক্ষতা এবং সাহস শক্তি নিয়ে তার দায়িত্ব পালন করেছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কতটা আপসহীন এবং আইন বাস্তবায়নে কতটা কঠোর ছিলেন তা নিম্নের ঘটনা থেকেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম।

আমি তখন ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য। ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু জনৈক বিদেশি শিল্পপতিকে আমার অফিসে নিয়ে এলো। ঢাকার নিকটবর্তী কালিয়াকৈরে বিদেশি শিল্পপতির রয়েছে সুবিশাল কম্পোজিট টেক্সাইল কারখানা। তিনি অভিযোগ করলেন, মাসখানেক আগে তার ফ্যাক্টরির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এমন কাজ করতেই পারে এবং সচরাচর করেও থাকে। ফলে আমি কোনো প্রশ্ন না করেই শিল্পপতির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে পড়লাম। ড. হাসান মাহমুদ তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অন্যদিকে তত্কালীন সচিব মহোদয়ের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতার কথা হয়তো কেউ কেউ জানতেন। আমি প্রথমেই মন্ত্রীকে ফোন করার জন্য উদ্যত হলাম। ব্যবসায়ী বললেন, মন্ত্রীকে ফোন করে লাভ হবে না। আমরা অন্য একটি চ্যানেলে মন্ত্রীর অফিস গিয়ে তাকে দিয়ে বেশ কয়েকবার ফোন করিয়েছি— কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমরা আপনার কাছে এসেছি সচিব সাহেবকে দিয়ে তদবির করানোর জন্য।

ভদ্রলোকের কথা শুনে আমি বেশ নড়েচড়ে বসলাম এবং খানিকটা আশ্চর্য হয়ে গেলাম। উত্সুক দৃষ্টি দিয়ে তার দিকে তাকালাম এবং বললাম মন্ত্রী কাকে ফোন করেছিলেন? তিনি জবাব দিলেন— মুনির চৌধুরীকে! আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, তিনি কি ম্যাজিস্ট্রেট মুনির চৌধুরী! তার উত্তর— হ্যাঁ। আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনার গভীরতা আন্দাজ করতে পারলাম এবং ব্যবসায়ীকে বললাম, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব অত্যন্ত সত্, দক্ষ এবং সাহসী। আমি নিশ্চিত, আপনার ফ্যাক্টরিতে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। তা না হলে উনি হয়তো এত বড় ফ্যাক্টরি যা কিনা শতভাগ বিদেশি বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বন্ধ করতেন না। আমি তাকে আসল ঘটনা বলতে বললাম এবং সবকিছু শোনার পর আমি ব্যবসায়ীটিকে বললাম, আমি নিশ্চিত, মন্ত্রণালয়ের সচিব সুপারিশ করলেও কাজ হবে না। আমার কথা শুনে তারা মন খারাপ করে গোমড়ামুখে তাকিয়ে রইলেন।

মুনির চৌধুরীর সঙ্গে আমার তখন পর্যন্ত কোনো পরিচয় ছিল না। এমনকি ভদ্রলোককে আমি কোনো দিন দেখিনি। কিন্তু তারপরও কেন জানি মনে হলো তিনি হয়তো আমাকে চেনেন এবং আমার সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করেন। আমি ব্যবসায়ী ভদ্রলোককে আরেক দফা জেরা করে প্রকৃত ঘটনা অবহিত হওয়ার চেষ্টা করলাম এবং মনে মনে ধারণা নিতে চেষ্টা করলাম, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমি যদি ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরের চেয়ারে বসতাম তাহলে কি করতাম। এরপর আমি জনাব মুনির চৌধুরীকে ফোন করলাম এবং আমার পূর্ব ধারণা অনুযায়ীই তার কাছ থেকে যথাযথ সম্ভাষণ এবং আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহার পেলাম। টেলিফোনের উদ্দেশ্য প্রকাশ করতেই তিনি ফটাফট বলে ফেললেন— আলোচ্য ব্যবসায়ী কীভাবে পরিবেশের সর্বনাশ করছেন। কীভাবে আশপাশের দরিদ্র জমির মালিকদের টাকা ও ক্ষমতার জোর দেখিয়ে তাদের জমিতে নির্বিচারে ফ্যাক্টরির বর্জ্য ফেলছেন এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে এযাবত্ মন্ত্রীসহ কতজনকে দিয়ে ফোন করিয়েছেন। আমার যেহেতু মানসিক প্রস্তুতি ছিল সে কারণে তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি ফ্যাক্টরিটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে চান নাকি শর্ত সাপেক্ষে চালু করতে রাজি আছেন। তিনি আরেক দফা ব্যবসায়ীর স্বেচ্ছাচারিতা এবং আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর নানা ফিরিস্তি দিলেন এবং বললেন, সে তো আমাদের কোনো কথাই মানছে না। এই পর্যায়ে আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম যে, এবার অবশ্যই মানবেন। তবে সবকিছু তো একসঙ্গে সম্ভব হবে না, সময় দিতে হবে। আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে করা সম্ভব এমন একটি শর্তের কথা বলুন যা বাস্তবায়িত হলে আপনি ব্যবসায়ীর সদিচ্ছা সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন করবেন এবং গ্যাসলাইন চালু করে দেবেন। তিনি একটি ড্রেন তৈরির শর্ত দিলেন। ব্যবসায়ী রাজি হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ড্রেন নির্মাণ করে দিলেন এবং জনাব মুনির চৌধুরীও যথারীতি তার কথা রাখলেন।

উপরোক্ত ঘটনার পর আমার সঙ্গে আর কোনো দিন মুনির চৌধুরীর কথা বা দেখা-সাক্ষাত্ হয়নি। গত কয়েক দিন আগে পত্রিকায় যখন দেখলাম তিনি সরকার কর্তৃক সম্মানিত হয়েছেন এবং কাজের স্বীকৃতি পেয়েছেন তখন মনে হলো শিরোনাম প্রসঙ্গে কিছু লেখা উচিত। কারণ বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা যদি ভালো কাজের প্রশংসা করতে না পারি এবং ভালো মানুষের প্রতি যথাসময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে না পারি তাহলে এই জমিনে ভালো মানুষ পয়দা হবে না। অন্যদিকে ঘুষখোর, অলস, অকর্মা এবং দুর্জন প্রকৃতির লোকদের যদি সমাজ ঘৃণাসহকারে প্রত্যাখ্যান এবং প্রতিরোধ না করে তবে ওদের বংশ বৃদ্ধি হবে মশা-মাছি প্রভৃতি নিকৃষ্ট পতঙ্গের চেয়েও বেশি সংখ্যায়।

আমাকে যদি আপনি প্রশ্ন করেন, কেন কিছু লোক শত প্রতিকূলতা, অভাব এবং অভিযোগের মধ্যে থেকেও দেশ ও সমাজ-সংসারের জন্য কাজ করে যেতে পারে? আমার ধারণা, মানুষ তার অন্তর্নিহিত সাহস, শক্তি, সততা, দক্ষতা, কৌশল, দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং স্রষ্টার প্রতি অসীম নির্ভরতার কারণে প্রবহমান স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে ভালো ভালো কাজ করতে পারে। কিছু মানুষ ঘুষ, দুর্নীতি, ব্যক্তিগত স্বার্থ কিংবা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কোনো প্রভাব প্রতিপত্তি ছাড়াই ভালো কাজ করে। এটাই সর্বোত্তম পন্থা। দ্বিতীয় পন্থা হলো নিজের জীবনের অতীত অভিজ্ঞতা অথবা আত্মীয়স্বজনের প্রভাব অথবা কারও দ্বারা অত্যাচারিত বা অপমানিত হওয়ার কারণে কারও কারও জিদ চেপে যায় দৃষ্টান্তমূলক ভালো কাজ করার জন্য। অনেকে আবার সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে পেয়ে অথবা পরিস্থিতির চাপে পড়ে ভালো ভালো কাজ করে ফেলেন। তৃতীয় পন্থায় কিছু মানুষ ভালো কাজ করেন মূলত দুটি কারণে। প্রথমটি হলো— নিজের ব্যক্তিগত সুনাম, সমৃদ্ধি, প্রচার, প্রপাগান্ডা এবং লাভের চিন্তা। মানুষ যখন মনে করে, মন্দ কাজ করার চেয়ে ভালো কাজ করলে তার লাভ বেশি হবে এবং বোনাস হিসেবে সুনাম-সমৃদ্ধি, পদ-পদবি পাওয়ার সুযোগ হবে তখন সে দুর্বার গতিতে ছুটতে আরম্ভ করে। দ্বিতীয়টি হলো— কিছু লোক ঘুষ খেয়ে ভালো কাজ করে। নিজের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা এবং মন্দ লোকদের শাস্তি দেওয়ার মধ্যে এক ধরনের তৃপ্তি লাভের আকাঙ্ক্ষা থেকেও মানুষ ভালো কাজ করে থাকে।

আমি মনে করি, ভালো কাজ যেভাবেই হোক না কেন তা সর্বাবস্থায় প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ ভালো কাজ যারা করেন তারা প্রথমত বুদ্ধিমান এবং পরিশ্রমী, তারা মানুষ হিসেবেও উত্তম এবং যে কোনো দেশ, জাতি এবং সমাজের জন্য মূল্যবান সম্পত্তি। তাদের সংখ্যা সব সময়ই কম থাকে। তাদের মনমানসিকতা সর্বদা স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। তারা লাজুক এবং অভিমানী। অন্যের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হলে তারা প্রায়ই নিজেদের ওপর জুলুম করে নিজেই নিজেকে শেষ করে দেয়। তারা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করে না, অত্যাচারিত হলে নালিশ করে না এবং বিপদে পড়লে কোনো প্রভাবশালীর দরজায় না গিয়ে দুর্ভোগকে মাথা পেতে নেওয়ার জন্য চুপ করে বসে থাকে। এ কারণে সভ্য দেশের সভ্য সমাজ সব সময় তাদের ভালো মানুষদের বেড়ে ওঠা এবং সংরক্ষণ ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, সমরনায়ক কিংবা সম্রাট ও শাহেনশাহবৃন্দ সফল হয়েছিলেন ভালো মানুষদের সঙ্গে চলাফেরা, তাদের পরামর্শ গ্রহণ, তাদের সম্মান জানানো এবং ভালো মানুষের জন্য অভয়ারণ্য তৈরি করার কৃতিত্বের কারণে।

এবার শিরোনামের দ্বিতীয় অংশ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করে আজকের প্রসঙ্গের ইতি টানব। অন্যরা কেন ভালো কাজ করেন না অথবা কেন তারা মন্দ কাজ করেন? আসলে মন্দ কাজ করার জন্য বাহানার অভাব হয় না, মানুষের লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, ভয়-ভীতি, অলসতা এবং ভোগের ইচ্ছে যখন ন্যায়নীতি, শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম-কর্ম, পিতা-মাতা এবং সন্তান-সন্ততি-পরিজনের ওপর প্রাধান্য পায় তখনই মানুষ মন্দ পথে পা বাড়ায়। কেউ কেউ মন্দ কাজ করেন তার ভেতরকার অন্তর্নিহিত অপরাধ প্রবণতার জন্য। অনেকের পরিবার, সমাজ এবং কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ তাকে অন্যায়-অনিয়ম ও দুর্নীতি করার জন্য বাধ্য করে থাকে। কেউ কেউ আবার ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়াই কেবল অন্যের ক্রীড়নক বা হুকুমের দাস হিসেবে মালিকের ইচ্ছায় দুর্নীতি করে থাকেন।

দুর্নীতিবাজরা সব সময় হূদয়হীন, পাষাণ এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে থাকে; তাদের শরীর, মন, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং পঞ্চইন্দ্রিয় যেন অপরাধের বিরাট এক কারখানা। সেখানে নতুন নতুন অপরাধ সংগঠনের জন্য রীতিমতো গবেষণা এবং পূজা-অর্চনা হয়ে থাকে। তারা কাউকে ভালোবাসেন না, এমনকি নিজেকেও নয়। তারা এতটাই ভয়ঙ্কর যে, তাদের নিষ্ঠুরতার প্রথম শিকার হয়ে থাকেন তাদের আপন পিতা-মাতা, ভাইবোন এবং স্ত্রী-পুত্র-কন্যা। এরপর তারা নিজের ওপর জুলুম শুরু করেন অতিরিক্ত ভোগ, দখল, পানাহার এবং নৃত্য-সংগীত-ফুর্তি দ্বারা। অনেকে আবার সীমাহীন কৃপণতা, অবিশ্বাস, সন্দেহ এবং অহেতুক ভয় দ্বারা নিজের সর্বনাশ ঘটিয়ে ফেলেন। মন্দ কাজ, বদরাগ, অশ্লীলতা, পাগলাটে ভাব এবং চরিত্রহীনতার বাহারি অলঙ্কারে সজ্জিত হয়ে মন্দ লোকেরা পরিবার, সমাজ, সংসার এবং রাষ্ট্রকে জ্বালাতে থাকেন অমৃত্যু।

সবচেয়ে আজব করা তথ্য হলো, ভালো মানুষ জীবনের যে কোনো সময়ে মন্দ হয়ে যেতে পারেন। অন্যদিকে দীর্ঘদিন দুর্নীতি, অপরাধ এবং অন্যায় করার পর কেউ আর ভালো হতে পারেন না। এ কারণেই ভালোদের সংরক্ষণ এবং পরিচর্যা অত্যাবশ্যক। যা সমাজ, রাষ্ট্র সবারই কর্তব্য হওয়া উচিত।

লেখক : কলামিস্ট

বিডি-প্রতিদিন/ ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫/ রশিদা



এই পাতার আরো খবর