ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

ওয়ান-ইলেভেনে রাজনীতিবিদদের দায় কম নয়
কাজী সিরাজ
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ভূখণ্ডে যত মহৎ অর্জন, তাতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা ও অবদান ইতিহাসের স্বীকৃত বিষয়। পীড়াদায়ক ব্যাপার হচ্ছে, এখানে কখনো কখনো রাজনৈতিক বিপর্যয়ে এবং শাসন-ক্ষমতায় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনেও রাজনীতিবিদরাই গণআকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে, হিংসা-হানাহানি আর ষড়যন্ত্রের জাল বুনে অনির্বাচিত, অরাজনৈতিক শাসনকে অপরিহার্য করে তুলেছেন। ক্ষমতায় থাকার জন্য অথবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজনীতিবিদরা আমাদের দেশে এমন কিছু কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যান যাতে কখনো কখনো জাতীয় স্বার্থও বিঘ্নিত হয়।  আবার একটি গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতির স্বাভাবিক গতি যখন অবরুদ্ধ থাকে, তখন সমগ্র জাতির জীবনেই বিরাজ করে এক শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা।

সম্প্রতি দুটি ঘটনা দেশের বন্ধ্যা রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ১. প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের আক্রমণাত্মক ও রাজনৈতিক বক্তব্য ২. ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী ভূমিকার জন্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে সংসদের ভিতরে-বাইরে শাসক লীগের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আক্রমণাত্মক বক্তব্য এবং তার গ্রেফতার দাবি।

আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থার নানা ত্রুটি, সীমাবদ্ধতা, কখনোবা বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন সময় আলোচনা হয়েছে, তবে তা কখনো সীমা লঙ্ঘন বা আদালত অবমাননার পর্যায়ে পৌঁছেনি। এমন কোনো বিতর্কও সৃষ্টি করেনি যা বিচার বিভাগের প্রতি, আদালত, বিশেষ করে উচ্চ আদালতের প্রতি মানুষের মনে অনাস্থার ভাব সৃষ্টি করে। উচ্চ আদালত তো সর্বদাই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের স্থল। তাই আদালত, বিচারক এবং বিচার নিয়ে বক্তব্য প্রদানে সব মহলই সর্বদা সতর্কতা অবলম্বন করে। সম্প্রতি সংসদে এবং সংসদের বাইরে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্য নিয়ে যেভাবে আক্রমণাত্মক ও বিদ্রূপাত্মক বৈরী সমালোচনা হয়েছে তা অপ্রত্যাশিত, অকল্পনীয়ই শুধু নয়, অনেকে মনে করেন তা সমগ্র বিচার ব্যবস্থার জন্য মর্যাদাহানিকরও বটে। এস কে সিনহা একজন অজ্ঞ ও মামুলী কোনো মানুষ নন, তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি। পার্লামেন্টে যেসব ‘আইনপ্রণেতা’ তাকে ‘সাবধানে’ কথা বলার পরামর্শ দিয়েছেন, আইনজীবী হিসেবে তাদের কারও একটা ভালো মামলা পরিচালনায় দক্ষতার স্বাক্ষরও নেই। তাছাড়া প্রধান বিচারপতির সংসদে জবাব দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দলীয় ব্যক্তিদের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের ব্যাখ্যাটা এভাবেই কোনো কোনো পর্যবেক্ষক দিতে চান যে, প্রধান বিচারপতির নির্মোহ বক্তব্যে তারা হয়তো তাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার স্বার্থহানির আশঙ্কা করছেন। প্রধান বিচারপতির বক্তব্য এ প্রসঙ্গে প্রণিধানযোগ্য। সম্প্রতি তিনি দুটি মন্তব্য করেছেন। ১. নির্বাহী বিভাগ বিচার বিভাগের ক্ষমতা কেড়ে নিতে চাচ্ছে, ২. অবসরের পর বিচারপতিদের রায় লেখা সংবিধানের পরিপন্থী। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এতে শাসক লীগের ‘পিলে চমকানোর’ কারণ থাকতে পারে। কিন্তু ‘একজন সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সিটিং প্রধান বিচারপতির প্রতি আক্রমণাত্মক বক্তব্যকে সেভাবে বিবেচনা করা যায় না। তার আচরণ নাগরিক সাধারণের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে যেতে পারে যে, ব্যক্তিগত স্বার্থে আঘাত লাগলে; কোনো কারণে সংক্ষুব্ধ হলে, বিচার বা আদালতের সিদ্ধান্ত মনঃপূত না হলে এভাবে বুঝি কোনো বিচারককে চ্যালেঞ্জ করা যায়, বিচারকের পদত্যাগও দাবি করা যায়। বিচার ব্যবস্থাকে হেয় ও প্রশ্নবিদ্ধ করার কু-চিন্তাপ্রসূত হয়ে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এমন আচরণ করছেন না তো!

লীগ সরকারের দায়িত্বশীলদের আতঙ্ককে কোনো কোনো পর্যবেক্ষক এভাবেও বিশ্লেষণ করছেন যে, বর্তমান সরকার নিজেদের যতই নির্বাচিত সরকার দাবি করুক না কেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনটি আদর্শ নির্বাচন না হওয়ায়, ৩০০ আসনের সংসদে ১৫৩ জন বিনা নির্বাচনে, বিনাভোটে এমপি হয়ে যাওয়ায় বর্তমান সংসদের নৈতিক বৈধতা দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ। ফলে সরকারের সোর্স অব পাওয়ার খুবই দুর্বল। রাষ্ট্র শাসনে তাই তারা শাসন বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যান্য বেসামরিক রাষ্ট্রীয় বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল। প্রশাসনের ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব এখনো নিরঙ্কুশ বলে মনে করেন এই পর্যবেক্ষকরা। এ ধরনের শাসনে আইন-আদালত তথা বিচার বিভাগই থাকে নিপীড়িত, নিগৃহীত ও প্রতিবাদী মানুষের এবং রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির একমাত্র ভরসা। বিচার বিভাগকে অনুগত প্রশাসন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব। মামলা-মোকদ্দমা, গ্রেফতার, গুম, হত্যা ইত্যাদি বিষয়ে বিচার না পাওয়া বা বিচারের দীর্ঘসূত্রতা বা বিচারহীনতার সংস্কৃতি শাসকদের জন্য এক স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে। প্রশাসন বিভাগও বিচারবিভাগের ওপর ‘হেডমাস্টারি’ করতে পারে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সামনে বাধা-বিপত্তির সাময়িক ও সমূহ বিপদের বিষয়ে প্রধান বিচারপতির উচ্চারণকে শাসক দলের লোকজন দলীয় স্বার্থে, রাজনৈতিক ক্ষুদ্র চিন্তায় ভুল ব্যাখ্যা বা অপব্যাখ্যা করতে পারেন। এখন বিএনপি যেমন ‘খাদে’ পড়েছে, বর্তমান শাসক দলও তেমন ‘খাদে’ পড়লে এ ধরনের বক্তব্যকে তারাই আবার কোরাসকণ্ঠে সাধুবাদ জানাবেন।

তবে অবসরের পর রায় লেখা সংক্রান্ত প্রধান বিচারপতির মন্তব্যের ব্যাপারেই লীগ সরকারের দায়িত্বশীলদের উদ্বেগ বেশি বলে মনে হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্য অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসংক্রান্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের অবসরে যাওয়ার ১৬ (ষোল) মাস পর লিখিত রায়টিও সংবিধানবিরোধী। কাজেই ওই রায়ের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে, সংসদ বহাল রেখে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন এবং বর্তমান সংসদ ও সরকারও তার বৈধতা হারায়। এমন আশঙ্কা সরকার পক্ষের থাকতে পারে। প্রধান বিচারপতি কিন্তু অতীতে লিখিত কোনো রায় সম্পর্কে প্রশ্ন তোলেননি। তিনি সংবিধান ও আইনের কথা বলেছেন। একজন সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ একাধিক প্রাক্তন বিচারপতি বলেছেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্য যথার্থ। তারপরও সদ্য অবসরে যাওয়া বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক, লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রমুখ কেন প্রধান বিচারপতিকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য রেখেছেন তা রহস্যময়। দেশের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের ভূমিকা নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এমন ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে যে, প্রধান বিচারপতি যেহেতু একজন ব্যক্তি বিশেষই নন, দেশের বিচার ব্যবস্থার মর্যাদার প্রতীক, তাই তাকে অবমাননা বা ‘ডিফেইম’ করার যে কোনো আচরণ দেশের বিচারব্যবস্থার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করারই শামিল। প্রশ্ন উত্থিত হওয়া স্বাভাবিক, কেন তা করা হচ্ছে?

দ্বিতীয় আলোচিত ও আলোড়িত বিষয়টি হচ্ছে ডেইলি স্টার এবং এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনামকে নিয়ে সংসদে এবং সংসদের বাইরে বৈরী আলোচনা এবং পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে সম্পাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সরকারদলীয় লোকজন এবং তাদের সমর্থকরাই এ ব্যাপারে সোচ্চার। অভিযোগের মোদ্দা বিষয় হচ্ছে, ওয়ান-ইলেভেনের পক্ষে তার ও পত্রিকাটির ভূমিকা। অধিকতর আলোচনায় এসেছে একটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থার প্রেরিত সংবাদ যাচাই না করে প্রকাশ নিয়ে— যাতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। বলা হচ্ছে, সে রিপোর্টের ভিত্তিতেই বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখানে দুটি বিষয় আলোচনায় আসতে পারে। ১. ওই রিপোর্ট ছাপা না হলে কি এক-এগারোর সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করত না? বেগম জিয়াকেও বিশেষ কারাগারে নিত না? এক-এগারোর প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায়ই বলা যায় যে, নিজেদের ক্ষমতা গ্রহণের যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য (দেশে ও বিদেশে) এ কাজটি ওই সরকার করতই। ‘মাইনাস-টু’ ফর্মুলা ছিল ওই সরকার আমলের একটি বহুল আলোচিত বিষয়। সরকারটি ছিল সেনা সমর্থিত সরকার। তত্কালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমদ তার লেখা ‘শান্তির স্বপ্নে : সময়ের স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন। সেনাবাহিনীর ভূমিকাও তাতে উল্লেখ আছে। তিনি কোনো কিছু গোপন করেননি। গোয়েন্দা সংস্থাটি সশস্ত্র বাহিনীর একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। যারা রাজনৈতিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট আলোচনায় প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা নিয়ে ঘাঁটছেন, তারা অবশ্যই প্রতিষ্ঠানটির অপরিহার্যতা, কর্মকাণ্ড কর্মপ্রণালি ইত্যাদি সম্পর্কে কমবেশি অবহিত এবং এটাও অবহিত যে, প্রতিষ্ঠানটি কাজ করে সশস্ত্র বাহিনীর প্রয়োজন ও পরামর্শে, কখনোবা রাষ্ট্র বা সরকারের প্রয়োজন ও পরামর্শে। এটি একটি অতি স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানও বটে। এর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখা বাঞ্ছনীয়। ডেইলি স্টার ও মাহফুজ আনাম যে জন্য অপরাধী বলে চিহ্নিত হচ্ছেন, তেমন পরিস্থিতিতে অভিযোগকারীরা কী করতেন? কী করেছেন? আরও বিষয় আছে। মাহফুজ আনাম একাই কি করেছেন কাজটি? আর কোনো পত্রিকা আর কোনো সম্পাদক কি একই কাজ করেননি? বা করতে হয়নি? মাহফুজ আনাম তো তার দুর্বলতা, ভুল স্বীকার করেছেন। অন্যরা তো তাও করেননি। সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপি নেতাদের মধ্যেও তো কেউ কেউ আছেন যারা ওয়ান-ইলেভেনকে সমর্থন করেছিলেন, ‘মাইনাস-টু’র পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং এই উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। কারাগার থেকে কেউ কেউ বিবৃতি পাঠিয়ে আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বেকায়দায় ফেলেননি? কে না জানেন যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখি সাংঘর্ষিক অবস্থান, রাজনৈতিক হানাহানি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বালখিল্যপনা, বিএনপি-জামায়াত সরকারের অবিমৃষ্যকারী আচরণ, প্রধান বিচারপতি কে এস  হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির জন্য বিচারপতিদের চাকরির বয়স বৃদ্ধি এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে নেওয়া; লগি-বৈঠার রাজনীতি, প্রকাশ্য দিবালোকে মানুষ হত্যা করে লাশের অবমাননা, দেশে প্রায় গৃহযুদ্ধাবস্থার আতঙ্ক ওয়ান-ইলেভেনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। বলা চলে, ওয়ান-ইলেভেনের পাল্কি ছিল রাজনীতিবিদদের কাঁধে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, সরকারি দলের দায়িত্বশীলরা কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে না শেষ পর্যন্ত সাপ তুলে ফেলেন! একজন মাহফুজ আনামকে ফাঁসাতে গিয়ে স্বীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ অনেককেও না বিপদে ফেলে দেন! বুঝে শুনে যদি তারা এসব করে থাকেন তাহলে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরীর আচরণ বলুন আর সংসদে ও সংসদের বাইরে শাসক দলের নেতৃস্থানীয় কারও কথা বলুন, তাদের আচরণকে একেবারে হাল্কাভাবে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এরা আসলে কী চান?

দেশের মানুষ শান্তি চায়, স্বস্তি চায়। গণতন্ত্র ও সুশাসনই তা নিশ্চিত করতে পারে। বিগত দুই মাস অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও রাজনীতির অঙ্গনে একটা গুণগত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। শান্তিপূর্ণভাবে পৌর নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দলের অংশগ্রহণ, বিএনপির শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা এবং খারাপ হওয়া সত্ত্বেও ফলাফল মেনে নেওয়া, বড় তিন দল শাসক লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির জাতীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতি, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সম্মেলনের জন্য স্থান বরাদ্দ দেওয়া, বিএনপির কারারুদ্ধ নেতাদের জামিন জনমনে একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থা তৈরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছিল, একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে পর্দার আড়ালে বিবদমান পক্ষসমূহের মধ্যে হয়তো একটা বোঝাপড়া হয়েছে।  শাসক দলের স্বার্থান্ধ কোনো মহল কি তা বানচাল করে দিতে চাচ্ছে? উদ্ভূত সংকটকে শাসক দলের অভ্যন্তরীণ সংকটেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক। মনে হয় এরা শান্তি নয়, সংঘাতকে উসকে দিতে চাইছেন।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : kazi.shiraz@yahoo.com



এই পাতার আরো খবর