ঢাকা, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মানবতার এত অভাব কেন?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

এই সেদিন ভালোবাসা দিবস গেল। আগে তেমন কেউ জানত না ভালোবাসা দিবস কী, ভালোবাসা দিবস কাকে বলে। কেউ ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করেনি। কিন্তু তখন বিস্তর ভালোবাসা ছিল। মানুষ মানুষকে তো ভালোবাসতই, পশুপাখি, গাছপালা, নদী-নালার প্রতিও মানুষের ভালোবাসা ছিল। মা সন্তানকে গলা টিপে মারত না, সন্তান পিতা-মাতার অবাধ্য হতো না, তাদের খুন করত না। একটা গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগির জন্য মানুষের চোখে পানি দেখা যেত, গ্রামেগঞ্জে এখনো কিছুটা দেখা যায়। কিন্তু এই মাতৃভাষার মাসে সংঘবদ্ধভাবে ছোটখাটো জিনিস নিয়ে শিশুদের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা শুনলে, পত্রপত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ছবি দেখলে মনটা কেমন যেন চুরমার হয়ে যায়। পাকিস্তানি পশুরা চলে গেছে, কিন্তু তাদের পশুত্ব সঙ্গে নিয়ে যায়নি বরং মনে হয় পশুত্বের সবটুকু আমাদের জন্য ছেড়ে গেছে। ১৯৭৪-৭৫-এর দিকে বঙ্গবন্ধু দুঃখ করে বলেছিলেন, ‘মানুষ পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি’। সেদিন তার আক্ষেপ তেমন বুঝিনি, আজ হাড়ে হাড়ে বুঝি।

পাকিস্তানের কত দোষত্রুটি, তার পরও তাদের সর্বোচ্চ আদালত নিয়ে এখনো কিছু কিছু গর্ব করা যায়। কিন্তু আমাদের কী দুর্ভাগ্য যে ঢাকা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী গভর্নর হিসেবে টিক্কা খানকে শপথ করাতে অস্বীকার করেছিলেন, চাকরি নয়, জীবনের পরোয়াও করেননি। কত রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলাম, সেই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে বিচারকদের কেউ কেউ যথেষ্ট সচেতন নন। নিজেরা নিজেরা অসংযত কথাবার্তা বলে জাতিকে যে কতটা হতাশ করছেন তা বলে শেষ করা যাবে না। গত কয়েক দিন সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের বকেয়া রায় জমা দেওয়া নিয়ে সারা দেশে যে তোলপাড় হলো তা মোটেই বাঞ্ছনীয় ছিল না।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার এক বুক ব্যথা নিয়ে টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম। আপনাআপনিই চোখের পানি ঝরে বুক ভিজে বেশ হালকা হয়েছি। এমনিতেই খুব একটা শারীরিক কষ্টবোধ করি না। কিন্তু তবুও কেন যেন সপ্তাহটা তো ভালো যায়ইনি, পরের সপ্তাহও না। লোকজন এবং সহকর্মীরা মাঝেসাজে যখন বলে আপনাকে স্বপ্নে দেখলাম আমি খুব একটা গুরুত্ব দিই না। কারণ স্বপ্ন দেখার তেমন বাতিক আমার নেই, দেখতেও পাই না। হয়তো জীবনে প্রথম স্বপ্ন দেখেছিলাম ১৯৭১-এর জুলাই-আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি মাঠে হাজার হাজার বিছানো অস্ত্রের মাঝ দিয়ে মঞ্চে গিয়ে তার হাতে অস্ত্র দিচ্ছি। জায়গাটা ছিল টাঙ্গাইল পার্ক ময়দান। স্বপ্নটি এমন স্পষ্ট দেখেছিলাম যা মোটেই স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল না। পরদিন শুধু মাকেই বলেছিলাম। তারপর স্বাধীন দেশে স্বপ্নটি প্রায় পুরোপুুরি বাস্তবায়িত হওয়ার পরও তেমন কাউকে বলিনি, উত্সাহ পাইনি। আজ বলার চেষ্টা করলাম। ’৭১-এর জুলাই-আগস্টে দেখা স্বপ্ন একেবারে হুবহু বা তারও চেয়ে ভালোভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল ’৭২-এর ২৪ জানুয়ারি। শুধু স্বপ্নে দেখা স্থানের অদলবদল হয়েছিল। স্বপ্নে দেখেছিলাম টাঙ্গাইল পার্ক ময়দান। কিন্তু প্রকৃত অর্থে অস্ত্র জমা দেওয়া হয়েছিল টাঙ্গাইল বিন্দুবাসিনী স্কুলের বিশাল মাঠে। জনসভা হয়েছিল টাঙ্গাইল পার্ক ময়দানে। স্বপ্নের কথা শুনে মা বলেছিলেন, ‘হয়তো ভালো কোনো লক্ষণ আছে। আল্লাহকে শুকরিয়া জানা, তেমন চিন্তা করিস না।’

কিন্তু কেন জানি না, এই দুই সপ্তাহ স্বপ্ন আমার পিছু ছাড়ছে না। কখনো মা-বাবাকে, কখনো বঙ্গবন্ধুকে, কখনো বড় ভাইকে আবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ জয়-পুতুল-রেহানা-ববি-টিউলিপ-অবন্তী আরও কত নেতানেত্রী, ভাতিজা-ভাতিজি, ভাগিনা-ভাগ্নি স্বপ্নে ধরা পড়ছে। আলামত কী বুঝতে পারছি না। জেনারেল এম এ জি ওসমানী, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সৈয়দ আশরাফ এদের স্বপ্নে দেখার কী আছে? কিন্তু একবার নয়, দুবার নয়, কেন যেন বার বার দেখে দেহমন ভাবিয়ে তুলছে। তবে কি যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে, নাকি কদিন হলো জনাব মাইদুল হাসানের ‘মুক্তধারা ’৭১’ পড়ছি বলে সেই ঘটনাগুলোই ঘুরেফিরে বার বার সামনে আসছে। কারণ স্বাধীনতা তো সরলরেখায় আসেনি। আজ যে যেভাবেই বলুক, সফলভাবে নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব করতে না পারলে আমাদের অবস্থা তিব্বতের ধর্মগুরু দালাইলামার চেয়ে অন্য কিছু হতো না। কারও কারও অভিমত ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে এত লোকক্ষয় হতো না। সকালে ঘোষণা, বিকালে স্বাধীনতা— বাঃ কী মজা! এ যেন ছেলেমেয়ের হাতের মোয়া। ২৬ মার্চের এক দিন আগেও যদি স্বাধীনতা ঘোষণা দেওয়া হতো তাহলে তো জিয়াউর রহমান, অলি আহমদ বাইরে পড়ে যেত। খালেদ মোশাররফ, সাফায়েত জামিলরা না হয় ২৩-২৪ তারিখ তাদের কোম্পানির অবাঙালি অফিসার, জোয়ানদের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের বন্দী করেছিলেন অথবা শাস্তি দিয়েছিলেন। মেজর রফিক চিটাগাংয়ে তার বিডিআর নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। ২৫ মার্চের আগে বার বার জিয়াউর রহমান এবং বেঙ্গল রেজিমেন্টের অন্যান্য অনেক অফিসারের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন তারা কি সেদিন তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছিলেন? কেউ দেননি। ২৫ মার্চ হানাদার বাহিনী ওভাবে আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়লে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানার ইপিআর ব্যারাক, চট্টগ্রামের ইবিআরসি ট্রেনিং সেন্টারে নির্দয়ভাবে হত্যা না করলে যারা বেঁচে ছিলেন তারাও কি সবাই আমাদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতেন? এত বর্বরোচিত আক্রমণের পরেও কি সব সশস্ত্র বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল? নাকি ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনেক বাঙালি আর্মি, ইপিআর-পুলিশ-আনসার পাকিস্তানের অনুগত থেকে খুন-খারাবিতে অংশ নিয়েছে। কোনো থানায় একজন অবাঙালি পুলিশ ছিল না, সব কটাতেই ছিল বাঙালি পুলিশ। পাকিস্তানের সঙ্গে থেকে শুধু রাজাকার-আলবদররাই খুন-খারাবি করেনি, তারাও করেছে। তাই সেই ৭ মার্চেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিলে সব আমাদের পক্ষে এসে যেত, এটা ভাবা সহজ কিন্তু বাস্তবোচিত নয়। যারা বঙ্গবন্ধুকে ছোট করা, মুক্তিযুদ্ধকে ছোট করার জন্য এসব বলেন তারা বলতে পারেন। কিন্তু সেখানে বাস্তবের কোনো লেশ নেই। সেনাবাহিনীর যারা ২৫ মার্চের পর সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন, তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর লোক হিসেবে ভারতের সীমান্তে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে জামাই আদর পেতেন না। তাদের স্থান হতো কারাগারে। অবৈধ  সীমান্ত অতিক্রমের কারণে ১২ বছর কোর্ট মার্শাল করে জওয়ানকে বৃদ্ধ বানিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিত। বঙ্গবন্ধু আগে থেকে কোনো ব্যবস্থা করেননি এ কথা খুব একটা ধোপে টেকে না। এসব নিয়ে পরের সংখ্যায় লেখার আশা রাখি। অস্ত্র জমা নেওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জনসভায় টাঙ্গাইলে যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা জানাতে চেয়েছিলাম। টুঙ্গিপাড়ায় পিতার কবরে যাওয়ায় সে অংশ গত পর্বে আর দেওয়া হয়নি। তাই এ পর্বে তুলে দিচ্ছি।

দেড় কিলোমিটার লম্বা, এক কিলোমিটার পাশ টাঙ্গাইল পার্ক-ময়দান লোকে লোকারণ্য। সভার সভাপতি জননেতা আবদুল মান্নান। পিতাকে আহ্বান জানাতে গিয়ে বললাম, ‘আমরা আজ গর্বিত, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে উপস্থিত। পিতার হাতে দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনে আমরা অস্ত্র তুলে দিয়েছি। শ্রদ্ধাবনতচিত্তে স্মরণ করছি তাদের, যারা হানাদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে অমূল্য জীবন দিয়েছেন। সালাম জানাচ্ছি সেই ভারতীয় সৈন্যদের, যারা আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে আত্মাহুতি দিয়েছেন। মাগফেরাত কামনা করছি সেসব বিদেহী আত্মার, যারা হানাদারদের হাতে নিহত হয়েছেন। আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করছি। বঙ্গবন্ধু, বাংলার মানুষ আজ আপনার কাছে ন্যায়বিচার চায়, নিরাপত্তা চায়, প্রাপ্য মর্যাদা চায়। স্বাধীনতার পর মাত্র এক মাস কয়েক দিন আমাদের প্রতিনিয়ত নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে, নানাভাবে গুজব ছড়ানো হয়েছে। আমরা গুজবের অবসান চাই। মুক্তিযুদ্ধে যারা হঠকারিতা করেছে, ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের সম্পর্কেও আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে। বাঙালিরা হঠকারীদের বরদাস্ত করতে চায় না। যারা আমাদের মা-বোনদের হত্যা করেছে, ইজ্জত লুট করেছে, তাদের বিচার করতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা, আজ বঙ্গবন্ধুর হাতে অস্ত্র জমা দিয়েছ। বঙ্গবন্ধু আমাদের নেতা। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে অস্ত্র ধরেছিলাম। তার আহ্বানে ত্যাগ করলাম। এর অর্থ এই নয়, যে জনসাধারণ গত নয় মাস আমাদের সাহায্য করেছে, বাঁচিয়ে রেখেছে, তাদের থেকে দূরে সরে গেলাম। যুদ্ধের সময় আমার আশা ছিল, স্বাধীন বাংলায় আমাদের হাতের অস্ত্র দিয়ে লাঙল, কোদাল, কাঁস্তে, হাতুড়ি, দা বানানো হবে। জানি না আমার সেই আশা সফল হবে কিনা। বঙ্গবন্ধু, আপনার কাছে আমাদের অনুরোধ, সকল মারণাস্ত্রের লোহা গলিয়ে লাঙল, কোদাল, গাঁইতি, শাবল তৈরি করুন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় মুক্তিবাহিনী, ভারত-বাংলা মৈত্রী অমর হউক।’

আমিই বঙ্গবন্ধুকে আহ্বান জানালাম। বঙ্গবন্ধু মাইক্রোফোনের সামনে আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন— ‘আমি আপনাদের সালাম জানাই। আমি প্রতিটি শহীদ আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। সালাম জানাচ্ছি আপনাদের, টাঙ্গাইলবাসীদের, যারা কাদেরের মতো সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। টাঙ্গাইলের মানুষ যা করেছে তার তুলনা হয় না। আমি তাই আপনাদের সম্মান জানাতে সবার আগে টাঙ্গাইল এসেছি। আমার তিনশ বছরের পুরনো বাড়ি হানাদাররা ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে, আমি সেই বাড়ি দেখতে যাইনি। টাঙ্গাইলে এসেছি। আপনারা যা করেছেন, টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধারা, স্বেচ্ছাসেবকরা যা করেছে, সে জন্যই তাদের এই সম্মান পাওয়া উচিত। এই সম্মান না দেখানো হলে অন্যায় করা হবে। আমি তাই আপনাদের মাঝে আপনাদের সালাম জানাতে এসেছি, শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আমার দেশে এমন কোনো গ্রাম নেই, যেখানে পাকিস্তানি নরপশুরা অন্তত ১০ জন লোককে হত্যা করেনি। আপনাদের এখানে অসংখ্য লোক মারা গেছেন। টাঙ্গাইল নিয়ে আমার গর্ব হয়। সারা দেশে প্রতিটি জেলায় যদি একজন করে কাদেরের জন্ম হতো তাহলে আমাদের নয় মাস যুদ্ধ করতে হতো না। আমাকে সাড়ে নয় মাস ফেরাউনের জিন্দানখানায় বন্দী থাকতে হতো না। অনেক আগেই আমার দেশ স্বাধীন হতো। ১০টা কাদেরও যদি থাকত তাহলে হয়তো ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহায্যের প্রয়োজন হতো না।

কাদের পল্টন ময়দানে চারজন দুষ্কৃতকারীকে শাস্তি দিয়েছে। যারা লুটতরাজ করে, যারা বিশৃৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, তাদের হাজারজনকেও যদি শাস্তি দিত, তাহলেও কাদের আমার ধন্যবাদ পেত।’

বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণায় সারা মাঠ করতালিতে ফেটে পড়ে। দুষ্কৃতকারীদের শাস্তি দেওয়ার পুরস্কারস্বরূপ ১৯ ডিসেম্বর আমার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। আর ২৪ জানুয়ারি ’৭২ বঙ্গবন্ধু টাঙ্গাইল পার্ক-ময়দানে দুষ্কৃতকারীদের শাস্তিদানে এমনিভাবে প্রশংসা করলেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মুজিবনগর সরকারের গুণগত মৌলিক পার্থক্য এখানেই। এরপর মুক্তিযোদ্ধা ও জনগণের উদ্দেশে বললেন :

‘মুক্তিযোদ্ধারা, আমি তোমাদের তিন বত্সর কিছু দিতে পারব না। আরও তিন বত্সর যুদ্ধ চললে, তোমরা যুদ্ধ করতা না?’

মুক্তিযোদ্ধা ও জনতা সমস্বরে চিত্কারে ফেটে পড়ল, ‘করতাম, করতাম।’

‘তাহলে মনে কর যুদ্ধ চলছে। তিন বত্সর যুদ্ধ চলবে। সেই যুদ্ধ দেশ গড়ার যুদ্ধ। অস্ত্র হবে লাঙল, কোদাল।’

তিনি সরকারি কর্মচারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন,

‘স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, ঘুষ চলবে না। মুক্তিযোদ্ধারা তোমরা খবর পাঠাবা। দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারীদের একজনকেও চাকরিতে বহাল রাখা হবে না। আমার মুক্তিযোদ্ধারা, আমি অস্ত্র জমা নেওয়ার সময় বলে দিয়েছি, প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার মানসম্মান, মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব সরকারের, আমার। তোমরা যারা লেখাপড়া করতে চাইবে, তারা পুরো সুযোগ পাবে। মুক্তিযোদ্ধারা যে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে, যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, সব কিছু দিয়েও তাদের ত্যাগের সঠিক মূল্য দেওয়া যাবে না। তোমরা এই দেশেরই সন্তান। তোমরা সম্মানের সঙ্গে চিরকাল থাকবে। তোমরাই নতুন ইতিহাসের স্রষ্টা। তোমাদের কোনো অসুবিধা হলে আমাকে সরাসরি খবর দেবে। আমাকে না পাও, কাদেরকে বলবে। শহীদকে বলবে। গণপরিষদ সদস্যদের বলবে। ওরা না শুনলে আমাকে বলো। কে শুনবে না? সবাই তোমাদের কথা শুনবে।

আমি সশ্রদ্ধচিত্তে ভারতের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে সালাম জানাই। বিশ্বের এমন কোনো দেশ নেই, যেখানে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আমার মুক্তির জন্য যাননি। অনেকে বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী কবে যাবে। মতিলাল নেহেরুর নাতনি, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর কন্যা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে আমি ভালো করে চিনি। তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য আমি জানি। আমি যেদিন বলব, সেদিনই ভারতীয় সৈন্য বাংলা থেকে চলে যাবে। ভারতীয় সৈন্যরা হানাদার নয়। তারা আমার বাংলার মানুষের দুঃখের ভাগী হতে এসেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হানাদারদের পরাজিত করতে তাদের ১৪ হাজার বীর সৈনিক আমার শ্যামল বাংলার মাটিতে বুকের রক্ত ঝরিয়েছে। আমি তাদের যেদিন বলব, আপনাদের আর প্রয়োজন নেই, আমরা নিজেরাই পারব, সেদিনই তারা চলে যাবেন। (চলবে)

লেখক : রাজনীতিক

 

বিডি-প্রতিদিন/ ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬/ রশিদা



এই পাতার আরো খবর