ঢাকা, রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

পুলিশ সার্ভিস শুধু একটি পেশা নয়, মানবিক সেবা
মোহাম্মদ খোরশেদ আলম
মোহাম্মদ খোরশেদ আলম

সমগ্র বিশ্ব এক অচলায়তন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেশ ও এর ব্যাতিক্রম না। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে, দুর্যোগে আমার সাধ্যমতো, সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে যাচ্ছি আপনাদের ভালো রাখতে। ইনভিজিবল টেরর অর্থাৎ এক অদৃশ্য শত্রু তাড়া করছে আমাদের। আমরা জীবনের মায়া ত্যাগ করে আপনাদের জন্য বাইরে আছি। আপনারা প্লিজ ঘরে থাকুন। সরকারের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।

বাড়িতে আমার মা আছেন। বাসায় আমার স্ত্রী আর দু'টো সন্তান। আমি জানিনা আমি কি তাদের কাছে সুস্থ ভাবে ফিরতে পারবো কিনা। আসলেই ফিরতে পারবো কিনা এক অজানা আতঙ্ক!

পুলিশের চাকরিতে যখন যোগদান করি তখন থেকেই মানবিক কাজের জন্য, যেকোনো দুর্যোগে দেশের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে বদ্ধপরিকর হয়েই নিবেদিত। আমি জানি না এই নিস্তব্ধতা, এই অশান্ত প্রকৃতি, এই স্থবিরতা কবে কাটবে? আমি বিশ্বাস করি মানবিকতায়। আমি অন্তরে লালন করি একটা মানবিক পৃথিবীর। যেখানে মানুষ মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে।

বেদে পল্লীর ঐ পরিবার গুলো যখন না খেয়ে ছিল৷ যখন আমাকে ওদের সর্দার ফোন করে। বিশ্বাস করুন; আমি কিছু ভাবতে পারছিলাম না। শুধু মনে হল, আমার উচিৎ যেভাবেই হোক ওদের কাছে খাবার পাঠানো।

যখন দেখলাম অসচেতন নাগরিক ভাই বোনেরা যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাস্ক, গ্লাভস বিহীন পর্যাপ্ত করোনা প্রতিরোধ ছাড়া জনসমক্ষে। ওরাও জীবিকার টানে ছিল। কি বলবো ওদের? নিজের সাধ্যমতো, সামর্থ অনুযায়ী পেশাগত দায়িত্বের বাইরে যতটুকু পেরেছি অংশীদার হয়েছি ওদের একজন হয়ে। আমার নিজ এলাকায় ও যতটুকু সম্ভব আমার মা-ভাই করে যাচ্ছেন সাধ্যমতো। আমি ভাবি, আমি আমার না। আমি চাই আমি সব অবহেলিত পরিবারের সদস্য হতে। যতটুকু পারছি করে যাচ্ছি নিজের অবস্থান থেকে।

কখন সকাল হচ্ছে, কখন রাত কেটে যাচ্ছে। কখন ঘুমাচ্ছি। কখন এই জায়গা থেকে ঐ স্পটে৷ হাইওয়ে নিরাপত্তা, পাবলিকদের দোরগোড়ায়। এই ওয়ার্ড থেকে ঐ ওয়ার্ড ছুটে বেড়াতে জীবনের রুটিন এলোমেলো হয়ে গেছে। ভিডিও কলে যে নিজের অবুঝ বাচ্চাদের  একটু দেখবো সেটাও করতে পারছিনা।

আমার দায়িত্ব প্রাপ্ত নারায়ণগঞ্জ এলাকাকে ডেঞ্জার জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক পরিবার ঘরবন্দি। যখনি সংবাদ পাচ্ছি, যতটুকু পারি রেসপন্স করার চেষ্টা করছি। শুধু আমি না বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্য এখন তাই করে যাচ্ছেন।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই করেছিলেন। এই ক্রাইসিস মোমেন্টে সবচেয়ে বড় রিস্ক নিয়ে পুলিশ বাহিনীই মাঠে। শুধু আপনাদের ভালো রাখতে। আপনাদের জন্য। প্লিজ আপনারা ঘরে থাকুন। আপনাদের ভালো রাখতে নিজের পরিবার, নিজ স্ত্রী সন্তান থেকে দূরে থেকে রিস্ক নিয়ে মাঠে আছি।

একদিন একটা সুন্দর সকাল আসুক। সেই সকালের জন্য জীবনের মায়া ত্যাগ করে, পরিবার বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনাদের নিরাপত্তা দিতে, ভালো রাখতে আপনাদের দ্বারপ্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছি। নারায়ণগঞ্জ এলাকার একটা পরিবার ও না খেয়ে থাকবে না ইন শা আল্লাহ। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সর্বোচ্চ ভাবে সতর্ক ও সচেতন হয়ে দৃষ্টি রেখে কাজ করে যাচ্ছে।

আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদের ভালো রাখা। আপনারা ঘরে থাকুন। ৯৯৯ এ ফোন দেন। আমাদের সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করুন। সাধ্যমতো আপনাদের সেবায় নিয়োজিত। পুলিশ সার্ভিস শুধু একটা পেশা না। মানবিক পেশা। ডিফেন্স সিস্টেম অফ এনি ক্রাইসিস মুভমেন্ট। এই অনুপ্রেরণা, কাজের প্রতি স্পীহা, গতিশীলতা সবসময় পেয়ে যাচ্ছি আমার শ্রদ্ধেয় অভিভাবক  বাংলাদেশ পুলিশের জীবন্ত কিংবদন্তী, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, জনাব হাবিবুর রহমান বিপিএম(বার), পিপিএম(বার) মহোদয় এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ জায়েদুল আলম,পিপিএম(বার) মহোদয়ের কাছ থেকে।

মানুষে মানুষে পরিপূর্ণ হয়ে উঠুক পৃথিবী। ভালোবাসা আর মানবিকতায় হার মানুক করোনা ভাইরাস।

আপনাদের জন্য পরিবার, জীবনের মায়া ত্যাগ করে সবসময় সর্বোচ্চ সার্ভিসটা নিঃস্বার্থভাবে দিতে চাই যার বিনিময়ে শুধু চাই ঘরে থাকুন। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হবেন না। এই ভাইরাস এতটাই সংক্রামিত করে যে, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে জ্যামিতিক হারে কয়েকশ জনকে নিমিষেই আক্রান্ত করে। সুস্থ লোক ও মূহুর্তে আক্রান্ত হতে পারে।

আপনারাও আমাদের ফ্যামিলি। সেই হিসেবে আমাদের ফ্যামিলি ও আপনাদের ফ্যামিলি। ফ্যামিলির নিরাপত্তার জন্যই আপনাদের ঘরে থাকতে হবে এই ক্রাইসিসে। সবাই ভালো থাকুন; সুস্থ থাকুন, নিরাপদে ঘরে অবস্থান করুন ।

লেখক: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি-প্রতিদিন/সিফাত আব্দুল্লাহ



এই পাতার আরো খবর