ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নগরে আগুন লাগলে দেবালয় কি অক্ষত থাকে!
শাহজাদা মহিউদ্দীন
প্রতীকী ছবি

ইস্যুটা ধর্মীয় সংবেদনশীলতার। তাই মুখ খুলে কেউ কিছুই বলতে চাচ্ছে না। সেই সাথে মসজিদ নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আবেগের প্রতিও সম্মানের বিষয়টি ও সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। কিছু কিছু গোঁড়া ধর্মান্ধ মানুষ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগও আনছে। তাছাড়া, আমরা যারা সাধারণ মানুষ। যারা সম্মানিত আলেম-ওলামা বা মুফতি নই। আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে ফতোয়া দেওয়ারও কোন এখতিয়ার নেই। বিপদটা আমাদেরই ।

একটু খেয়াল করে দেখুন, যারা এতদিন গার্মেন্টস কিংবা শপিংমল খোলার বিরোধিতা করেছে তারাও আজকে মসজিদ খোলায় আলহামদুলিল্লাহ বলছে। বিষয়টা কি এমন! শুধু শপিংমলে করোনা আসবে মসজিদে আসবে না! আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। না হলে সরকার ধীরে ধীরে অথনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক করার পথে হাঁটতেন না ।

সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইচ্ছা করলে মার্কেট শপিংমল খোলা রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন, কিন্তু  বলেননি যে এটা বাধ্যতামূলক। মার্কেট খোলার ঘোষণা এলেও বসুন্ধরাসহ অন্যান্য শপিংমল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের দেখাদেখি অনেক মার্কেটও নাকি বন্ধের ঘোষণা দিবে বলে শোনা যাচ্ছে। বসুন্ধরা শুধু দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপই নয়। বরং দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মালিকও। তারা এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, যত চেষ্টাই করুক বর্তমান পরিস্থিতিতে শপিংমল খোলা রাখা মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে। তাই সর্বাগ্রে তারা তাদের নিজেদের শপিংমলের কর্মকর্তা-কমর্চারী এবং মালিক সমিতি সর্বোপরি গ্রাহকদের জীবনের নিরাপত্তাকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। 

সরকারের কাছে অন্য কোন পথ খোলা নাই। ইতিমধ্যেই শ্রমিকরা শ্লোগান দিয়েছে “না খেয়ে মরার যন্ত্রণার চেয়ে করোনায় মরা অনেক ভাল। না খেয়ে মরলে সবাই সরকারকে দুষবে। আর করোনায় মরলে ভাগ্যকে দুষবে। সেনাবাহিনী-পুলিশ কিছুতেই মানুষকে ঘরে রাখতে পারছে না। জনগণ যেহেতু অস্থির, মুসল্লিরা যেহেতু উদগ্রীব- তাই এবার ধর্মীয় অনুভূতির বিচারে সরকার  মসজিদ খুলে দিয়েছে। যেমনটা গার্মেন্টস ও মার্কেটের বেলায় করেছে। হিসাব সহজ। খুলে দিলাম, বাঁচা-মরার সিদ্ধান্ত নিজেদের উপর।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা কিছু মুমিন-মুসলিমদের মধ্যে প্রবল ধারণা যে, যারা প্রকৃত মুমিন তারা কখনও মসজিদে গিয়ে মহামারীতে আক্রান্ত হবেন না। ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। হযরত ওমর (রা.) এর সময়কালে রোমানদের সাথে  যুদ্ধের সময় ব্যাপক মহামারী দেখা দেয়। ঐ মহামারীতে ২৫,০০০ মুমিন মুসলিম মারা যায়। যাদের মধ্যে বহুসংখ্যক সাহাবা ছিলেন। এদের একজন ছিলেন আবু উবায়দা আমর আল জার্‌রাহ (রা.)। তিনি ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ১০ জন সাহাবার মধ্যে একজন। আরও মারা যান মুয়ায ইবনে যাবাল (রা.) মত প্রখ্যাত সাহাবী। আর উনাদের মত সর্বোচ্চ তাকওয়াবান মুমিন সাহাবী যদি মহামারীতে আক্রান্ত হতে পারেন, তাহলে আমরা কেন সতর্ক হবো না? আর যেখানে খোদ রাসুলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশ আছে যে, ‘যদি তোমরা শুনতে পাও যে, কোনো জনপদে প্লেগ বা অনুরূপ মহামারীর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে তবে তোমরা তথায় গমন করবে না। আর যদি তোমরা যে জনপদে অবস্থান করছ, তথায় তার প্রাদুর্ভাব ঘটে তবে তোমরা সেখান থেকে বের হবে না। (বুখারী, আস-সহীহ ৫/২১৬৩; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৩৮, ১৭৩৯)

সাহাবারা কি করেছেন মহামারীর সময়, আর আমরা কি করতে যাচ্ছি! ইসলাম বিজ্ঞানভিত্তিক অতি সহজ এক ধর্ম। মানুষের সাধ্যের বাইরে কোনকিছুরই হিসাব নেই এখানে। কঠোরতার বদলে আল্লাহর দয়া, রহমত ও ক্ষমা প্রাধান্য পেয়েছে শত কোটি গুণ বেশি পরিমাণে। আল্লাহ সবই জানেন। সবই দেখছেন। যেহেতু এটা কেবলই ক্ষণস্থায়ী জীবনের এক কঠিন পরীক্ষা, তাই আল্লাহ আমাদের ধৈর্য, বিশ্বাস ও সতর্কতার পরীক্ষা নিচ্ছেন। আল্লাহ গাফুরুর রাহীম আমাদেরকে দৌঁড়ে ঝাঁপ দিয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে বলেননি। বরং আল্লাহ বলেন, ‘আর নিজের জীবন ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ অনুগ্রহকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা বাকারা : ১৯৫)

কাজেই নিজের জীবন রক্ষা করা যেমন অপরিহার্য। তেমনই অন্য দশজনকে যেকোনো বিপদ থেকে সুরক্ষিত রাখাও আমাদের প্রত্যেকের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ আমাদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, যাতে আমরা এটার প্রয়োগ করি। আর আল্লাহ দ্বীনকে অনেক সহজ করেছেন, আমরা যেন একে কঠিন না করি। এজন্যই বলি নগরে আগুন লাগলে মসজিদ-মন্দির কিছুই অক্ষত থাকে না।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক



এই পাতার আরো খবর