ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

নিজের যত্ন নিন
আহমেদ আল আমীন
আহমেদ আল আমীন

বহু দূরের পথ পেরিয়ে, নদী-সাগর সাঁতরে পাড়ি, বন মাড়িয়ে, হামাগুড়ি দিয়ে এসেছি। এতোটা পথ হেঁটেছি কতদিন, আপনারে কিছু কথা বলবো বলে। এই যে, শুনুন! হ্যাঁ, আপনাকে বলছি। অনেক তো হলো, এবার ক্ষান্ত দিন। নিজের যত্ন নিন। 

নিজের দিকে খেয়াল করুন। একটু ফিরে তাকান নিজের দিকে। আয়নার সামনে একটু দাঁড়ান না! নিজের চেহারাটা দেখুন, কি হালই না হয়েছে আপনার, দিনে দিনে! ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর ব্যস্ততায় এতো দিন নিজের দিকে খেয়ালই করতে পারেননি, জানি। এবার নিজেরে কিছুটা সময় দিন। 

পরিষ্কার শরীরে, পরিপাটি পোশাকে, পরিচ্ছন্ন জীবনে অভ্যস্ত হোন। ঘর কিংবা বাড়ির চারপাশটা পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার। নিজের কাজ নিজেই করুন এখন। ঘরেও কিছুটা ব্যস্ততার সঙ্গে থাকুন। কোনো ভালো কাজে লজ্জা নেই। কাজও শরীরের খোরাক। কাজে না থাকলে দেহে বাসা বাঁধে রোগ। বদ্ধ পুকুরে পোকামাকড়ের আখড়া, শ্যাওলা জন্মে, জাল বুনে ডিম পাড়ে মাকড়শা। 

বড় যত্ন নিয়ে নির্মাণ করুন শরীরটাকে। না, পাহাড়সম দেহ না হলেও চলবে, কিন্তু বিলেতি গাব গাছের মতো মেদহীন, পেটানো, নীরোগ একটি শরীর চাই আপনার। রাতে নিয়ম করে ঘুমুতে যান, আরামসে। পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। কোলাহল এড়িয়ে চলুন দিনে। ভোরে অনুভব করুন আকাশের নিচে স্নিগ্ধ হাওয়ার শিরশিরে ছোঁয়া। শিশির ভেজা ঘাসের ওপর, একা হাঁটতে হবে খানিকটা সময়। কোনো পাখি ঘরে নেই। আড়মোড়া ভেঙেছে আগেই। এবার পুবের সূর্যটার দিকেও তাকান। আপনার জন্যই জেগে উঠেছে সে। তার হাতে অনেকগুলো মোমবাতি। কেমন লাগছে, বলুন তো? 

সুস্থতায় চাই নিয়মিত পুষ্টিকর ও সুষম খাবার। মাছ, গোশত বেশি নয়, সবজি হলে ভালো হয়। আদা, রসুন, কালোজিরা, লবঙ্গ ও দারুচিনি। দিনে অন্তত ত্রিশ মিনিটের ব্যায়াম। কালোজিরার মতো ঝরঝরে, কবুতরের মতো ফুরফুরে আর পুঁইয়ের ডগার মতো সতেজ একটি শরীর চাই আপনার।  

পরিবারেও একটু সময় দিন, নিবিড়ভাবে সঙ্গ নিন। পরিবারে আপনার পরিচয়। আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা থাকা দরকার। পরিচ্ছন্ন আয়, সৎ পথে ব্যয়। অন্যের জন্য খরচ; অল্প কিছু সঞ্চয়।  

একেবারে নিজের জন্য কিছুটা সময় বের করুন। ধ্যানে বসুন ঘরের কোণে। দেখুন, দেহের ভেতরে মন বলে কিছু একটা আছে কিনা, আপনার! থাকার তো কথা, নাও থাকতে পারে অবশ্য। যদি দেখা মেলে, একটু তার পরিচর্যা করুন। মন হলো গাছের মতো, নিয়মিত পরিচর্যা না হলে মরে যায় ধীরে ধীরে। কোন অবস্থায় আছে সে, নিকোটিনে ভরপুর, ধুলোময়, আগাছায় পরিপূর্ণ সে কি অন্ধকার কোনো জীর্ণ কুটির? তাহলে কাঁচি দিয়ে কেটে, নিড়ানি দিয়ে ছেঁটে, পরিষ্কার করে ফেলুন। সজীব ও সতেজ একদম। হৃদয়ের এই সুড়ঙ্গ পথে স্রষ্টার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ। আপনারে চিনতে হবে, জানতে হবে। 

নিজের সব দুর্বলতা খুঁজে বের করুন। অনুভব ও কল্পনাশক্তি দরকার। প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিন তো একবার, বারবার। শেষ কবে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিয়েছেন, মনে আছে তো? সবুজ গাছ ও ঘাসের ছোঁয়া নিয়ে আসা বাতাস হৃদপাড়াতে যে খুব দরকারি। হৃদয়ের প্রশস্ততা বাড়াতে হবে। সম্মুখের দিগন্তজোড়া আকাশের মতো একটি সুস্থ মন চাই আপনার জন্য। নইলে অন্তত দুশো মাইলের একটি সবুজ মাঠ কিংবা বাড়ির পাশের খরস্রোতা বড় নদীর মতো প্রশস্ত একটি হৃদয় আপনার জন্য অবশ্যই চাই।

বড় যত্ন নিয়ে মনের মন্দিরকে গড়ে তুলুন। সততা, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য, ভালোবাসা, সাহস আর অহংকার ও ঈর্ষাহীনতার চাষ করতে হবে সেখানে।

আপনি সুস্থ থাকলে আমরা ভালো থাকি, সুস্থ থাকে আমার দেশ। কারণ আপনাকে নিয়েই সমাজ ও দেশ, এই সোনার পৃথিবী। আপনার ভালো থাকার ফলেই ভালো থাকি আমরা। অন্যের জন্য না, এবার নিজের জন্য কিছু করুন। সত্যি বলছি, নিজের জন্যই আপনার কিছু করা দরকার। আপনি নিজের জন্য কিছুু করলেই পরের জন্য করা হবে এবার। নিজেকে ভালোবাসুন, পরিবারের জন্য আপনার বাঁচতে হবে। নিজে ভালো থাকুন, দেশকে ভালো রাখুন। ভালো থাকতে দিন। 

লেখক: সাংবাদিক

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন



এই পাতার আরো খবর