ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড আর বাংলাদেশের নিখিল তালুকদার হত্যা
রুমানা রাখি, যুক্তরাজ্য

কি নির্মম বর্বরতা। ৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের এক ভিডিও। গাড়িতে থেকে বের করে কীভাবে অমানবিকভাবে হত্যা করা হলো একজন মানুষকে। গত ২৫ মে যুক্তরাজ্যের মিনেসোটা রাজ্যের মিনিয়াপোলিস শহরে পুলিশি নির্যাতনে মারা যান ৪৬ বছরের জর্জ ফ্লয়েড৷ যিনি হিউস্টনে একটি বারে বাউন্সার হিসেবে কাজ করতেন। ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের পর, মে’র ২৬ তারিখে প্রথমে আন্দোলন শুরু হয়। যে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অনেক দেশে।

শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চৌভিন কনেল্ট ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড হাঁটু দিয়ে ফ্লয়েডের গলা চেপে ধরেছিলেন। এ সময় ফ্লয়েড বারবার বলছিলো ‘আই কান্ট ব্রিথ’ ( আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না)। এ সময় চৌভিনের সাথে সহায়তা করেছেন আরও তিনজন পুলিশ অফিসার। যদিও তাঁরা সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এই অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন। ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গদের আন্দোলনের মুখে এরই মধ্যে ডেরেক চৌভিনকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি হত্যার চার্জ গঠিত হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই পুলিশ অফিসারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। আর অন্য তিনজন অফিসারের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন চার্জ আনা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সম্ভবত: সবারই বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি হবে।

ফ্লয়েডের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন বিশ্বের বড় বড় দেশ সরব তখন, বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকাগুলো ৪ জুন ‘গোপালগঞ্জে এএসআইয়ের পিটুনিতে যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ’ শীর্ষক একটি খবর ছেপেছে। সংবাদটিতে বলা হয়েছে, কোটালিপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের রামশীল গ্রামের নীলকান্ত তালুকদারে ছেলে নিখিল তালুকদার, ২ জুন অপর তিনজনের সাথে বসে তাস খেলছিলেন। পুলিশ অফিসার শামীম উদ্দিন একজনকে নিয়ে সেখানে উপস্থিত হয়। তারা গোপনে তাস খেলা ভিডিও করেন। এ সময় খেলোয়াড়রা তা টের পেয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তিনজন পালাতে সক্ষম হলেও, নিখিল ধরা পরে পুলিশ অফিসার শামীমের হাতে। এ সময় পুলিশ অফিসরা নিখিলকে হাঁটু দিয়ে আঘাত করে তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর পরিবার। এ বিষয়ে নিখিলের স্ত্রী ইতি তালুকদার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, এএসআই শামিমের আঘাতে আমার স্বামীর মেরুদণ্ডের তিনটি হাড় ভেঙে যায়। তাকে প্রথমে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাই আমরা। সেখানে বুধবার তিনি মারা যান।’ চাঞ্চল্যকর এই হত্যার পর গত ৮ জুন এএসআই শামীম হাসানকে গ্রেফতার করেন পুলিশ।

যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড এবং বাংলাদেশে নিখিল হত্যাকাণ্ডের একটি আশ্চর্য মিল রয়েছে? দু’টি ভিন্ন রাষ্ট্রে দু’জন পুলিশ অফিসার হাঁটু দিয়ে দু’জনকে হত্যা করলেন। অফিসার শামীম কি মিনিয়াপলিসের ডেরেক চৌভিন কনেল্ট এর অপকর্মে উদ্বুদ্ধ হয়ে এমন একটি অপকর্ম করতে পারলেন? নিখিল একজন সাধারণ কৃষক। তার অপরাধ তাস খেলা। ফ্লয়েডের অপরাধ ছিলো তিনি একটি জাল নোট দোকানিকে দিয়েছিলেন। বিনা অপরাধ বা সামান্য অপরাধে দু’জন প্রাণ হারালো।

মিনিয়াপলিসে ফ্লয়েড হত্যার পর পুলিশ প্রধান এই হত্যাকাণ্ডের জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন। অনেক শহরে পুলিশ হাঁটু গেড়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বিভিন্ন শহরে মার্কিন পুলিশ স্পষ্টত: প্রমাণ করেছেন, একজন ডেরেক চৌভিন কনেল্ট’র অপকর্মের দায় তারা নেবেন না। কিন্তু বাংলাদেশের পুলিশের নির্মম নির্যাতনের ফলে প্রাণ হারানোর দায় কে নেবে? পুলিশ? প্রশাসন না সরকার? বাংলাদেশের পুলিশ কেন একজন অফিসার শামীম উদ্দিনের অপকর্মের দায় নেবে? একজন অফিসারের জন্যে পুরো পুলিশবাহিনী’র ভাবমুর্ক্তি ক্ষুন্ন হতে পারে না। 

একজন পুলিশ কর্তা অপকর্মের দায় পুলিশ বাহিনী বহন করবে না। যে কারণে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী ছড়িয়ে পড়ার শুরু থেকে বাংলাদেশ পুলিশ ত্রাণকর্তার ভূমিকায় নেমে পড়ে। অভুক্ত মানুষের মুখে চুপিচুপি খাবার তুলে দেওয়া থেকে মৃতের সৎকার- কি করেনি পুলিশ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে বিস্তর লেখালেখিও হয়েছে। স্বজন যখন করোনার ভয়ে প্রিয়জনের লাশ ফেলে পালিয়েছে তখন পরম মমতায় কাছে এগিয়ে গেছে পুলিশ। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য সৃষ্টি হওয়া আইনে চলা পুলিশের এই পরিবর্তন ইতোমধ্যে হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে জনতার। পুলিশ এখন এ দেশে সুপার হিরো। তবে ভুলে গেলে চলবে না, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। কাজেই একজন শামীম উদ্দিনের অপকর্মের দায় ব্যক্তির অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে পুলিশের গায়ে কোন দাগ পড়তে দেবে না কর্তৃপক্ষ- এমনটাই আশা করে সাধারণ মানুষ।

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর