ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মুরগি আগে না ডিম, মানুষ আগে না অর্থ
আবু তাহের খোকন

করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বেই অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা বিরাজমান। রাষ্ট্রপ্রধানরা জীবনের নিরাপত্তার কথা বললেও অর্থনীতিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বেশি। অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় রাখতে চাইছে সবাই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন মন্দার ঘরে অবস্থান করছে বলে মন্তব্য করেছেন। তবে এই মহাবিপদের মধ্য দিয়েই পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বর্তমান সঙ্কট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব- বিশ্বনেতাদের কাছ থেকে এমন উপলব্ধির আশাও প্রকাশ করেছেন তিনি।

অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা থেকে উত্তরণ এবং ভাইরাস মোকাবেলা- উভয় দিক থেকেই পারস্পরিক সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই বলে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতা সংস্থাটির প্রধান। জর্জিয়েভা বলেন, বিশ্ব এখন মন্দার ঘূর্ণাবর্তে পড়েছে- এ কথা আমরা আগে থেকেই বলে আসছি। কোভিড-১৯ মন্দাকে স্রেফ বাস্তবতায় রূপ দিয়েছে। এখান থেকে উত্তরণ দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। প্রথমটি হলো সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিতে পুরো বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ। সিএনবিসির প্রতিনিধি সারা আইসেনকে তিনি আরও বলেন, আমি বর্তমান পরিস্থিতির মাঝেও কিছুটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। দেখতে পাচ্ছি, অনেক বিশ্বনেতা এখন সহযোগিতার গুরুত্ব অনুধাবন করতে শুরু করেছেন। একমাত্র পুরো বিশ্বে ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা গেলেই এর বিপর্যয়কর থাবা থেকে বিশ্ব অর্থনীতি মুক্তি পাবে। এ সময় জর্জিয়েভা আরও বলেন, এই মুহূর্তে ছোটখাট পদক্ষেপ নেওয়া আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের উচিত হবে না। কারণটা আমরা সকলেই জানি, এটা নিঃসন্দেহে এক মহাবিপদ। বিশ্ব অর্থনীতির এমন স্থবির ও প্রাণচাঞ্চল্যহীন অবস্থা আগে কেউ কখনই দেখিনি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির শুরুর দিকে সাধারণ মানুষকে খুব সাহস দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীরা বলেছেন, করোনার জন্য আমরা পুরোপুরি প্রস্তুত। কানাডা এবং সিঙ্গাপুর থেকেও আমাদের প্রস্তুতি ভালো। চীনের মতো হাসপাতাল তিন দিনে করবার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। বিখ্যাত ডাক্তার, রাজনীতিবিদ, জ্ঞানীগুণী জন করোনাকে সাধারণ সর্দি-জ্বর বলে সাহস দিয়েছেন। বলেছেন, একটু সচেতন থাকতে হবে। অথচ তখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারা পৃথিবীতে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। দুই মুখো আচরণ করে রাষ্ট্র একদিকে বলছে ঘরে থাকতে, অন্যদিকে সবকিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার গার্মেন্টস শ্রমিকদের কাজের কথা বলে ডেকে আনা হয়েছে। আবার কাজ না দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি অফিস পর্যন্ত খুলে দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রের কাছে জীবনের চেয়ে অর্থ অনেক মুল্যবান। তাই তারা অর্থনীতি সচল রাখতে সব কিছু খুলে দিয়েছে। এখন মানুষ কর্মের কারণে ঘরের বাহিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখা বাড়তে শুরু করার পর বলা হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা যায়নি। সাধারণ মানুষ সচেতন না হওয়ার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এবার শুরু হলো লকডাউন। তাও আবার এলাকা ভিত্তিক। কিন্তু পরিস্থিতি যে পর্যায়ে চলে গেছে তাতে এলাকাভিত্তিক লকডাউন দিয়ে কাজ হবে না। এখন প্রয়োজন কারফিউ জারি করা। আর এটা হতে হবে এলাকা ভিত্তিক নয়, এক একটা জেলা ধরে। অর্থকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে দেশের সাধারণ ব্যক্তির সাথে অনেক মূল্যবান ব্যক্তি হারিয়েছি। হারিয়েছি মন্ত্রী, এমপি, ভাষা সৈনিক, পুলিশ ও সাংবাদিকসহ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান, ইমপালস হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান, বিআরবি হাসপাতালের আইসিইউ প্রধান, ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের আইসিইউ প্রধানসহ আজ পর্যন্ত ৪৭ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। দেশে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অক্সিজেনের জন্য কাঁদছে মানুষ, শ্বাস নিতে পারছে না, তীব্র যন্ত্রণায় কাতর।সাহায্যের আকুতি। চোখের সামনে ছটফট করতে করতে মারা যাচ্ছে মানুষ। হাসপাতালে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা নাই। সরকারি বেসরকারি কোন হাসপাতালে রোগী ভর্তি নিচ্ছে না।

হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে চিকিৎসা না পেয়ে রোগী পথেই মৃত্যু হচ্ছে। এখনও বুঝতে পারছি না মানুষ আগে না অর্থ আগে। মানুষের জীবনের চেয়েও কি বেশি মূল্যবান অর্থ!

এটা ঠিক যে অর্থনীতি সচল না থাকলে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। কিন্তু সেই অর্থ দিয়ে কী হবে যদি অর্থ খরচ করার মতো মানুষই না থাকে! মুরগি আগে না ডিম আগে বিতর্কের মতোই আমাদের কাছে আজ অর্থ আগে না মানুষ আগে বিতর্কটা খুব অস্পষ্ট হয়ে পড়েছে।

লেখক: ফটো সাংবাদিক   বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর