ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

তারাই সরকারের ঘনিষ্ঠ, উপর মহলে তাদেরই যাতায়াত
বাণী ইয়াসমিন হাসি
বাণী ইয়াসমিন হাসি

ছোট্ট একটা নিউজ পোর্টালের খুব ছোট সম্পাদক আমি। এটা যতটা আমার পেশা তার চেয়েও বেশি নেশা। প্রতিমুহূর্তে নতুন কিছু করার যে চ্যালেঞ্জ সেটাকে আমি উপভোগ করি।

ছাত্রলীগ আমার প্রথম প্রেম। ২০০০ সালের শেষের দিকে আমি ক্যাম্পাসে আসি। তার কিছুদিন পরই আমরা বিরোধী দলে চলে গেলাম। আমার সব বন্ধুরা রাতারাতি ছাত্রদল আবার কেউবা একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল। বন্ধুরা যখন ক্লাসরুম আর প্রেম করে কাটিয়েছে তখনও আমার সবপ্রেম ছাত্রলীগ। মধুর আড্ডা আর ক্যাম্পাসের মিছিলের চেয়ে কোনকিছুই বেশি প্রিয় ছিল না।

মাসে দুয়েকবার সুধাসদনে যেতাম। আপাকে সামনে থেকে দেখতে পাওয়া, মন্ত্রমুগ্ধের মত আপাকে শোনা। ফেরার সময় আপার আশীর্বাদের হাতটা যখন মাথায় কাঁধে বা পিঠ ছুয়ে যেতো, সেটা টনিকের মত কাজ করতো।

২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বুঝেছিলাম আপাকে কতটুকু ভালোবাসি। সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে রাস্তায় ছিলাম, আপার মুক্তি আন্দোলনে ছিলাম। সেদিন যারা গর্তে ছিল তারাই এখন যেমন ইচ্ছে ইতিহাস লিখছে। দেখি আর হাসি।

ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। অন্য যেকোন পরিচয়ের চেয়ে আমি এটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। একই সাথে এটা আমার অনেক বড় গর্বের জায়গায়ও। আমি সুশীল না, আর কোনদিন সেটা হতেও চাই না। 

গত কয়েকদিন ধরে দেশের সবচেয়ে আলোচিত শব্দ: সাবরিনা, জেকেজি, রিজেন্ট, সাহেদ। আচ্ছা বলেন তো, এরা কি রাতারাতি পয়দা হয়েছে নাকি আকাশ থেকে পড়েছে? এদেরকে জন্ম দিলো কারা? এমন একটা সিস্টেম তো একদিনে গ্রো করে নি। 

গতবছর ডেঙ্গুর সময়ে একদিন রাত তিনটায় অপরিচিত একটা নাম্বারের কলে ঘুম ভাঙে। ফোনের ওপাশে হাউমাউ কান্না। কোলের বাচ্চা ডেঙ্গু আক্রান্ত কিন্তু কোন হাসপাতালে সিট পাচ্ছে না। সেই রাতে আমি সাহায্য চেয়ে আমার টাইমলাইনে একটা পোস্ট করি। আমার পোস্টটা দেখে ছোটভাই শাকিল সেটা শেয়ার করে। তারপর মো. সাহেদ ওর সাথে যোগাযোগ করে তার হাসপাতাল থেকে এ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। আমি গদগদ হয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে একটা পোস্টও করি পরবর্তীতে। মিডিয়া তার একটা মানবিক ইমেজ তৈরি করে দিয়েছিলো আমাদের চোখের সামনে। সেও হিউম্যান সাইকোলজি খুব ভালো করে পড়ে ফেলেছিলো। তাই তার ব্যবসা জমাতে সময় লাগেনি।

সোশ্যাল গেদারিংয়ে কে কার সাথে ছবি তুললো সেটা নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। তবে কেউ কাউকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ালে সেটা অবশ্য আলাদা হিসেব। সাধারণত ঘরের লোকদেরকেই মানুষ ঘরে ডাকে। আর একটা কথা যারা তাকে টিভি চ্যানেলগুলোর টকশোর গেস্ট হিসেবে সুপারিশ করেছে, নিতে বাধ্য করেছে তাদের তালিকা প্রকাশটা খুব জরুরি।

সাংবাদিক দেখলেই আমাদের নেতাদের ঢলে পড়াটাও বন্ধ হওয়া উচিত। শেখ হাসিনাকে ৩ বেলা গালি দেওয়া লোকজনই এখন সবচেয়ে বড় শেখ হাসিনা প্রেমী।

চরম সত্যিটা কি জানেন, সরাসরি ছাত্রলীগ করা অথবা আওয়ামী মতাদর্শের যারা সাংবাদিকতা পেশায় আছেন তারা চরম কোনঠাসা। চরম আওয়ামী বিদ্বেষী লোকজন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারাই সরকারের ঘনিষ্ঠ, উপর মহলে তাদেরই যাতায়াত। ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ডের কেউ নির্বাচনে দাঁড়ালে তারা একজোট হয়ে হারায়ে দেয়। তার একটা উদাহরণ সর্বশেষ ডিআরইউ নির্বাচনে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহনেওয়াজ দুলালকে হারিয়ে দেওয়া। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো ষড়যন্ত্রের সব তথ্য প্রমাণ থাকার পরও খলনায়কদের কোন বিচার হয় নি। এদের হাত এতটাই লম্বা। গতকাল এক বড় ভাইয়ের সাথে কথা হচ্ছিলো। উনার বক্তব্য, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এদের কিছুই করতে পারবো না। তবে আমি গ্রামে ফিরে যাওয়ার আগে হকিস্টিক দিয়ে পেটাবো এবং ন্যাংটা করে দিয়ে যাবো।

ভাই শহর ছেড়ে চলে যাক, সেটা কিছুতেই চাই না। কিন্তু এদের সত্যিকারের চেহারাটা সত্যিই খুব দেখতে ইচ্ছে করে।

শাহনেওয়াজ দুলাল ভাইকে চিনি সেই ভার্সিটির প্রথম দিনগুলো থেকেই। উনি আরটিভির বেশ বড়কর্তা ছিলেন। ১/১১ তে চাকুরি হারান ভাই। উনার অপরাধ কি ছিল জানেন? ৭ই মার্চের আগের রাতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের উপর বানানো একটা প্যাকেজ লিড করা। দুলাল ভাই ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। উনি যদি বাম করতেন বা শিবির করতেন এতদিনে নি:সন্দেহে মিডিয়ার মালিক হতেন।

একাত্তরে যুদ্ধে গিয়ে উনার বড় ভাই আর ফিরে আসেন নি। উনার মা প্রতিমুহূর্তে অপেক্ষা করতেন ছেলের ফিরে আসার। কোথাও উনার ভাইয়ের বয়সী কোন পাগলের খোঁজ পেলে তা সেটা দেশের যে প্রান্তেই হোক না কেন উনারা ছুটে যান, হারানো ভাইকে ফিরে পাওয়ার আশায়। দেশ, আপা, দল আর পেশার প্রতি দুলাল ভাইয়ের কমিটমেন্ট ই হয়তো আজ দুলাল ভাইয়ের সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা !

এই শহরে টিকে থাকার লড়াইয়ে শাহনেওয়াজ দুলাল ক্লান্ত। কিন্তু যারা সেদিন শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলো তারাই এখন সবচেয়ে বড় আওয়ামী ঘরানার সাংবাদিক, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী।

অনেক মানুষের দেশের একটা সুবিধা হলো, এখানে কোনকিছু ধামাচাপা দিতে হয় না। প্রতিদিন নিত্যনতুন ইস্যু। একটার ভিড়ে অন্যটা আপনাআপনিই হারিয়ে যায়। 

মিছিলের সব কর্মী নেতা হতে পারে না, কখনো বা আবার নূন্যতম স্বীকৃতিটুকুও মেলে না। চোখের জলে সংগঠন থেকে বহুদূরে চলে গেছে এমন কর্মীর সংখ্য লক্ষ হাজার।

সোনা ফেলে চকচকে পিতলের মোহ কাটানোটা সত্যিই খুব জরুরি।

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট

বিডি প্রতিদিন/হিমেল



এই পাতার আরো খবর