ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মন্ত্রী-এমপি হলেই কি নেতা?
সোহেল সানি
সোহেল সানি

"সবাই নেতা" কথাটা বাস্তব সত্য থেকে বহু দূরে। অথচ, সরকারের মন্ত্রিসভায় নেতা নামধারী লোকের সংখ্যা প্রচুর। কিন্তু প্রশ্ন এর মধ্যে পথ দেখাতে পারছেন এমন নেতা বা লিডার ক'জন? করোনার এই শোচনীয় ও ভয়ঙ্কর পরিবেশে নেতা মন্ত্রীদের মন্তব্যের সারকথা যেন এমনই, "যা হবার তা তো হবেই। সব ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দাও। নিশ্চিন্ত ঘুমাও, শেষ দিনটার জন্য প্রতীক্ষা কর।"  

সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের বিবেক বুদ্ধি, কর্মকাণ্ড আর লাগামহীন দায়সারা  কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে  "ভাগ্য" বদলানো যায় না, ভাগ্যই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। তাই সব স্বপ্ন আশা আকাঙ্ক্ষা আমাদের ভুলে যেতে হবে। আত্মা, বিবেক, মূল্যবোধ জলাঞ্জলি দিতে হবে। আর তা আমাদের অথর্ব কোন কোন মন্ত্রীর সাফল্যের আশায় বসে থেকে?   করোনাকালীন পরিস্থিতিতে নিশ্চিত উপলব্ধি করা যাচ্ছে যে,  চারদিকের পরিবেশ শুধুই আমজনতাকে পেছনে টানছে, মৃত্যুর মুখে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে।   

নিশ্চয়ই আমাদের 'নেতা' একজন আছেন। তিনি মহান। তার দেশাত্মবোধ অতুলনীয়। তিনি দেশের একমাত্র ভরসা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে তার পাশে তাকে অনুসরণ করার সহযোদ্ধা-সহকর্মী নেই। যারা আছেন তারা মনে করেন তারাও নেতা। এসব মন্ত্রী-নেতাদের স্বীয় সুখের পরিমাণ, আত্ম সন্তুষ্টির পরিমাণ বিশাল।  কিন্তু মানুষের জন্য  চিন্তা-ভাবনা ও আকাঙ্ক্ষার পরিমাণ কতটুকু?

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও হয়। এই ঘেরাও কর্মসূচিতে যদি আত্মাহুতির ঘটনাও সংঘটিত হয়ে যায়, তবুও "ওই বেটার" আক্কেল জ্ঞান হবে না - এই কথাগুলো উত্তরবঙ্গীয় ভাষায় বিড়বিড় করে বলছিল, এক রিক্সাওয়ালা।

তার কথা শুনে আমার প্রফেট ডেভিডের কথা মনে পড়ছিল, তিনি বলে গিয়েছেন 'মানুষ যেমনটি চিন্তা করবে ঠিক তেমনটি হয়ে উঠবে।' আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেমনটি চিন্তা করছেন, তেমনটিই হচ্ছে রিক্সাওয়ালাকে তা বুঝ দিতে চাইলাম।

মিল্টন তার 'প্যারাডাইস লস্ট' এ লিখেছেন, 'মনই আসল, মনই স্বর্গকে নরকে ও নরককে স্বর্গে পরিণত করতে পারে।'

আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন আছে কিনা বলবো কি করে! অদ্ভূত মননশীল ব্যক্তিত্ব শেক্সপিয়র বলেছেন, 'ভালো বা মন্দ বলে কিছু নেই, চিন্তা-ভাবনা জিনিসকে ভালো বা মন্দ করে তোলে।' তবে প্রমাণ কোথায়? কি করে বোঝা যাবে মহান বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বরা যা বলেছেন তা নির্ভুল? হ্যাঁ প্রমাণ পাওয়া  যেতে পারে। তবে যাদের নিয়ে এ প্রশ্নের অবতারণা তাদের মধ্যে বাছাই করে পাওয়া যাবে না একজনও। যে জন সফল হয়ে রাজনৈতিক জীবন সার্থক করেছেন।  

মহান দার্শনিক ডিসরেলি বলেছেন, "জীবনের মেয়াদ এতো কম যে জীবনটা তুচ্ছ নগণ্য হতেই পারে না।" অথচ, মৃত্যুর মিছিল দেখে মনে হচ্ছে আমাদের জীবন বড় তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে, আমাদের যারা বাঁচাতে এগিয়ে নেবে, তারাই পিছিয়ে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকাণ্ড আর প্রতারক সাহেদ করিম, ফয়সাল-সাবরিনা গং কাহিনী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে কি দেখিয়ে দিচ্ছে?

কিন্তু এই দেশে নীতিবাক্য পড়ার বা শোনার নেতা আছেন অনেক, অনুসরণ করার কেউ নেই। অর্থাৎ পথপ্রদর্শক হওয়ার সুযোগ এখানে নেই, কারণ এই দেশে সবাই নেতা, কেউ কর্মী নয়, তাই পিছিয়ে থাকাই বাঞ্ছনীয়।

সাফল্য শব্দটির বিভিন্ন, সুন্দর, গঠনমূলক ব্যাখ্যা দেয়া যায়। রাজনীতি যারা করছেন, তাদের জন্য সাফল্য হলো- জনগণের মন জয় করা, নেতৃত্ব , সবার আদর্শ হয়ে ওঠা সর্বোপরি রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি অর্জন করা। কিন্তু সাফল্য বলতে আমরা শুধু দেখতে পাচ্ছি নেতা মন্ত্রী ও তাদের চামচাদের  ব্যক্তিগত সমৃদ্ধি, অভিজাত বাড়ি অট্টালিকা, আর্থিক নিরাপত্তা, আত্মীয়-স্বজনের সুখ সমৃদ্ধি পাইয়ে দেয়া।  

মন্ত্রী নেতাদের সাফল্য যেখানে জনগণের দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, ভয়, হতাশা ও ব্যর্থতা থেকে মুক্তি, সেখানে উল্টো চিত্র। সাফল্য মানে আত্ম-সম্মান, নিজ কর্মে অবিরাম সন্তুষ্টি পাওয়া এবং নির্ভরশীল জনগণের জন্য করার ক্ষমতা অর্জন করা, সেখানের চিত্র কি দেখতে পাচ্ছি? মনে হয় যেন আসন্ন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কালেও শিশুর ন্যায় হামাগুড়ি দিয়ে আমরা পথ চলছি।

বাইবেলে বলা হয়েছে বিশ্বাসে নাকি পাহাড়কেও টলানো যায়। সেই বিশ্বাসী মানুষের সঙ্গে থাকতে হয় ঈশ্বরের আত্মার সম্পর্ক। সেই মানুষ কই? অবিশ্বাস নিরাশার চিহ্ন। যখন মনে অবিশ্বাস বা দ্বিধা জাগে, মন সেই অবিশ্বাসকে সমর্থন করার নানা 'কারণ' খোঁজে। অধিকাংশ ব্যর্থতার মূল কারণ হল দ্বিধা, অবিশ্বাস, মনের অবচেতন মনের ব্যর্থতা ও নৈতিক স্খলনজনিত চিন্তা-ভাবনা।

বিশ্বাস একটা থার্মোস্ট্যাটের মত, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর থার্মোস্ট্যাট সঠিকভাবে 'অ্যাডজাস্ট'  না হওয়ায় ক্রমশ নিজের কাছে নিজে আরও ক্ষুদ্র ও ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছেন। তার মানুষের প্রতি আচরণ, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ও মনোভাব সবকিছু অরাজনৈতিক সুলভ। তার নেতৃত্বের সুগভীর অধ্যয়ন করলে দেখা যাবে ব্যর্থতার এক ভয়ানক ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেই ব্যাধির নাম এক্মকিউসাইটিস।

সামনে অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা নেই, তিনি তাই হাজারটা অজুহাত দেখাচ্ছেন। যে কোন রোগের মতই এক্মকিউসাইটিসের যথাযথ চিকিৎসা না হলে তা তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে তো উঠবেই - করোনা আতঙ্কিত আমজনতার জন্য বয়ে আনবে মহাবিপর্যয়। তাই বলবো স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি একেবারেই অনর্থক। অপসারণের দাবি অর্থবোধক হতে পারে - কেননা সেই দাবিটি বিবেচনার এখতিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী গঠনাত্মক এবং বহুচর্চিত গুণের অধিকারী। তার জনগণের প্রতি ভালোবাসা ও বিশ্বাসের আয়তন সুদীর্ঘ- সীমাহীন।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত



এই পাতার আরো খবর