ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

একটি প্রদীপের প্রস্থান
আশরাফুল আলম পপলু
আশরাফুল আলম পপলু

শিল্পী হারুন অর রশীদ- ৫৩। লেখা-পড়া প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অমুষদ থেকে প্রাক বিএফএ এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগ থেকে বিএফএ ও এমএফএ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৪১২ নম্বর কক্ষের ছাত্র ছিল। আমার প্রিয় সহপাঠী ও বন্ধু হারুণ ছিল অতুলনীয় রাজনৈতিক আদর্শের অধিকারী। পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রামের মিয়াপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। বাবা মতিউর রহমান ছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য, মা রোকেয়া বেগম গৃহিণী, এলাকার স্বনামধন্য পরিবার। 

অত্যন্ত পরিশ্রমী ও কর্মঠ হারুন অধ্যয়ন শেষে নিজেই স্ক্রীন প্রিন্ট ও ডিজাইনের ব্যবসা শুরু করে। দল-মত নির্বিশেষে চারুকলার ছাত্র-শিক্ষক, শিল্পীসহ সংশ্লিষ্টদের গল্প, আড্ডা ও সহযোগিতার একটি কেন্দ্র ছিল তার অফিস। সকলের সহযোগিতার জন্য তার হাত ছিল সদা সম্প্রসারিত। তার বিনয়, অমায়িক ব্যবহার, সামাজিকতা, সততা, নিষ্ঠা, নীতি- আদর্শ সর্বদা সকলকে বিমোহিত করত। সকল মানবিক গুণাবলীর এই মানুষটি ছিল তার বিভাগসহ চারুশিল্প পরিবারের অনুজ- অগ্রজ সকলের একান্ত আপনজন। অতি অল্প সময়েই সকলে তার আপন হয়ে যেত। অনুজদের জন্য নিকট সে ছিল একটা নির্ভরতার জায়গা। ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী ও সংগঠক হিসেবেও ছিল অত্যন্ত দায়িত্বশীল ও নিষ্ঠাবান। দলীয় কর্মকাণ্ডে থাকত সকলের আগে। মানুষের জন্য কাজ করত নীরবে ও কৃতজ্ঞতায়! ছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আপোসহীন অনুসারী। ছিল সদা হাস্যোজ্জ্বল ও পরোপকারী পরিপূর্ণ একজন আদর্শবান বা সাদা মনের মানুষ। 

আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ, মুক্ত হৃদয়ের প্রাণোচ্ছ্বল এই মানুষটিকে ৩০.৯.২০২০ তারিখে বুধবার একটি বাস চাপা দিয়ে চলে যায়। সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে। ঢাকার উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের জসীমউদ্দিন মোড়ের নিকট বেলা প্রায় সাড়ে ১১টায় এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। সকালে সে তার অফিসের কাজে মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে উত্তরায় যায়। রাস্তার পশ্চিম প্রান্ত থেকে পূর্ব দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় গাজীপুর অভিমুখী ভিক্টর পরিবহন তার উপর দিয়ে চলে যায়। জ্বলন্ত প্রদীপটি তখনি নিভে যায়! 

সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অর্ক নামে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে তার, রেখে গেছে গৃহিণী স্ত্রী। বাবা-মা'র সাত সন্তানের মধ্যে ছিল সকলের বড়, পড়ে রইলো প্রিয় মানু্ষের প্রিয় পরিবার, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ! এই নিষ্ঠাবান, দায়িত্বশীল মানুষের দায়িত্ব এখন কে নিবে? অর্ক এখন কার স্নেহ নিবে, কার সান্নিধ্য পাবে? কে তাকে প্রিয় বাবার ভালোবাসা দিবে, মমতা দিবে? প্রিয় স্বজন হারানোর বেদনায় নীল হারুনের পরিবার-স্বজন, বেদনার্ত- শোকার্ত চারুশিল্প পরিবার!

আমাদের আর কত দেখতে হবে নীরব, নিষ্ঠুর এই হত্যাকাণ্ড? তাও আবার শহরের জনবহুল এলাকায়! সকলেরই বিচার হয়, কিন্তু এদের কেন বিচার হয়না, এদের কী বিচার কোনোদিন হবে না, এরা কী বার বার প্রদীপ নিভিয়েই যাবে?

সমাজের ভারসাম্য রক্ষায়, সমাজ বিবর্তনে, সমাজ সমৃদ্ধ ও আলোকিত করতে হারুনরা বার বার ফিরে আসবে এই প্রত্যাশায় আমরা অপেক্ষা করবো!

লেখক: সদস্য সচিব, স্বাধীনতা চারুশিল্পী পরিষদ।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর