ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

আমি না হয় একটা জীবন বেহিসেবীই কাটালাম!
বাণী ইয়াসমিন হাসি

কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর প্রতিদিনের রুটিনে বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। ক্লান্তি কাটেনি। কোনকিছু ঠিকমত গুছিয়ে ভাবতে পারি না। এ কারণে অনেকদিন লেখা হয় না। আজ ঘুম ভেঙেছে বেশ সকালে। অনেককিছু লিখতে ইচ্ছে করছে। অনেকটা সময় ধরে শুধু লিখছি আর মুছছি।

আজকের দিনটা খুব স্পেশাল আমার কাছে। নিজের বা প্রিয়জনের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী বা বিশেষ কোনদিনের চেয়েও বিশেষ দিন আজ; ছাত্রলীগের জন্মদিন। আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টাতে আমি ছাত্রলীগ করতাম। ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম; এই পরিচয়টা একই সাথে আমার গর্ব এবং অহংকারের। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার সাথে আমার গভীর প্রেম। ভালোবাসি বলেই হয়তো প্রত্যাশার পারদটা আকাশছোঁয়া।

একটা সময় এবং বয়সের পর প্রেমের ধরণ পাল্টায়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের অভ্যাস পাল্টায়, রুচি পাল্টায়, পছন্দ পাল্টায়। কিন্তু কিছু ভালোলাগা, কিছু অনুভূতি, কিছু মায়া আমৃত্যু একই জায়গায় থেমে থাকে। ছাত্রলীগের প্রতি আমার এমনই ঘোরলাগা প্রেম।

গতবছর আজকের এই দিনে ছাত্রলীগের অভিভাবক প্রিয় আপার সাথে জয় লেখকের একটা ছবি শেয়ার করে নিজের টাইমলাইনে লিখেছিলাম, দূর্দান্ত একটা ছবি ... আল নাহিয়ান খান জয়; লেখক ভট্টাচার্য  প্রত্যাশার চাপে পিষ্ট করতে চাই না তোমাদের। নির্ভার আর নিঃসঙ্কচিত্তে আপার দেওয়া মহামূল্যবান আমানতকে দায়িত্বের সাথে সামনে এগিয়ে নাও। দানব হইয়ো না। আকাশে উইড়ো না। পা দুটো মাটিতেই রেখো। নিজেদের কর্মী নয়, ছাত্রলীগের কর্মীদের ভালোবাসায় সিক্ত থেকো। শুভকামনা নিরন্তর...

খুব ভালোবেসে ছাত্রলীগটা করতাম। সহমত ভাই/ ভাইলীগের যাঁতাকলে পিষ্ট আদর্শিক কর্মীরা। এসব দেখে মন খারাপ হয় বৈকি।

গতকাল নিজের টাইমলাইনে সৈয়দ আশরাফ ভাইয়ের কবরের পাশে অপেক্ষমাণ ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের একটি ছবি শেয়ার করে লিখেছিলাম- ছবিটা আজ সকালের। বনানী কবরস্থানে সাংবাদিকদের অপেক্ষা। আওয়ামী লীগের বড় কোন নেতা হয়তো সৈয়দ আশরাফ ভাইকে শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন; এই ভেবে উনারা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলেন।

না, কেউ যান নি। কারো সময় হয় নি। জীবিত সৈয়দ আশরাফের চেয়ে মৃত সৈয়দ আশরাফ আরো বেশি শক্তিশালী! লাখো কর্মীর আবেগ ‘সৈয়দ আশরাফ’। অনুভূতির আওয়ামী লীগের কর্মীরা তাদের স্বল্পভাষী, ডেডিকেটেড এবং প্রজ্ঞাবান আশরাফ ভাইকে মননে মগজে ধারণ করে। সেই নাম মোছার সাধ্যি কারো নেই।

মুহূর্তের মধ্যে পোস্টটা ভাইরাল হয়। প্রচুর ফোন আর টেক্সট আসতে থাকে আমার কাছে। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো আদারবক্সে জমা হওয়া শতশত ম্যাসেজ। এদের কাউকেই আমি চিনি না। কিন্তু ঘুরেফিরে সবার একই বক্তব্য আমি তাদের মনের কথাটিই লিখেছি। তারাও ঠিক একইভাবে ভেবেছেন, তাদের হৃদয়েও একইরকম রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি আমার ক্ষরণটা প্রকাশ করতে পেরেছি উনারা পারেননি। 

ফোনের চাপে পিষ্ট ছিলাম গতকাল। ক্লান্ত লাগছিলো খুব। তাই ফোনধরা বন্ধ রেখেছিলাম। দুপুরে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিক ভাইয়ের ব্যক্তিগত সহকারী প্রিয় ছোটভাই রিশাদ মোরশেদ বেশ কয়েকবার কল দিয়েছিলো। পরে কলব্যাক করলে ও জানালো; আমার হোয়াটসঅ্যাপে কিছু ছবি পাঠিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপ চেক করে দেখি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ভাই ও আতিক ভাই দুপুরে বনানী কবরস্থানে আশরাফ ভাইকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। ছবিগুলো দেখে ভালো লাগলো। এরপর একে একে প্রচুর ছবি আসতে থাকলো আমার হোয়াটসঅ্যাপ আর ম্যাসেঞ্জারে। ছাত্রলীগের অনেক সাবেক নেতা দুপুরের পর ছুটে গিয়েছেন বনানী কবরস্থানে। মসজিদে আশরাফ ভাইয়ের জন্য মিলাদও পড়িয়েছেন। 

সারাদিন পর বিকেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সৈয়দ আশরাফ ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটা ডিজিটাল পোস্টার বানানো হলো। দেখে ভালো লাগলো। বিকেলে হোয়াটসঅ্যাপে আরেও কিছু ছবি এলো। বিকাল ৫টায় মাহবুব উল আলম হানিফ ভাইয়ের শ্রদ্ধা নিবেদনের ৩টা ছবি  শেয়ার করে আবার লিখি, সকালে খুব মন খারাপ করে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম নিজের ওয়ালে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা আশরাফ ভাইকে শ্রদ্ধা জানাতে যাননি বলে। কিছুক্ষণ আগে পাওয়া এই ছবিগুলো দেখে আমি কাঁদছি।

যাক কেউ একজন তো লাখো কর্মীর মনের কথা আর চোখের ভাষা বুঝল। বঙ্গবন্ধুর বাঙালিদের পক্ষ থেকে সৈয়দ আশরাফকে স্মরণ করার জন্য ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা মাহবুব উল আলম হানিফ ভাই।

আমাকে যারা চেনেন তারা জানেন; আমার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়েও আমাকে দিয়ে কিছু লেখানো যায় না। আমি নিজে যেটা বিশ্বাস করি এবং আমার মন যা চাই আমি তাই লিখি। আমার কোন লেখা যখন কারো বিপক্ষে যায় বা কারো স্বার্থে যখন ঘা লাগে তখন সে বা তারা নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। আমি এসব পাত্তা দিই না একেবারে। এই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে আমার অনেক কাছের বড় ভাইয়েরা প্রভাবশালী নেতা। সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকও বেশ খাতিরের। হোসেন মনসুর স্যার, সবুর ভাই, দেলোয়ার ভাই, সুজিত দা, বিপ্লব দা বা আফজাল বাবু ভাই, নাজমা আপু, অপু দি... উনাদের যে কারো কাছেই একটা পোস্ট চাইলে আমি পাই বা পেতাম। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম: খোঁজ নিয়ে দেখেন কোনদিন কারও কাছে কিছু চেয়েছি কিনা। ছাত্রলীগ ছাড়ার পর সরাসরি রাজনীতির প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি। এই জীবনে আমার আর আগ্রহ তৈরিও হবে না। আমার পেশা এবং নেশা সাংবাদিকতা। এখানে ছোট-বড় অধিকাংশই আমাকে ভালোবাসে। আমি চাইলে পেশাজীবী সংগঠনের রাজনীতিটাও করতে পারতাম। ভোটের রাজনীতিতে যে কারো চেয়ে ভোট টানার ক্ষমতা আমার কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু আমার আগ্রহ নেই বলে কোন সংগঠনের সদস্য পর্যন্ত আমি হইনি। আমি আমার মতো করে জীবন কাটাতে পছন্দ করি।

প্রেম এবং প্রার্থণায় সমর্পণ এবং বিসর্জন দুটোই থাকে। হ্যাঁ পাশাপাশি প্রাপ্তি বা অর্জনও থাকে। তবে নিয়ম মেনে, হিসেব কষে কিছুই ঘটে না এখানে। আমি আমার জীবনে যা করেছি প্রচণ্ড ভালোবেসে করেছি। আমার জীবনে মাঝামাঝি বলে কোন শব্দ নেই। আমার না মানে না আর হ্যাঁ মানে হ্যাঁ। আমাকে জ্ঞান দান করে মিছেমিছি সময় নষ্ট করার কোন দরকার নেই। আমার পেছনে লেগে বা ভয় দেখিয়ে খুব একটা সুবিধা করা যাবে না। যতদিন বেঁচে আছি; লিখবোই। আমি না হয় একটা জীবন বেহিসেবীই কাটালাম!

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা



এই পাতার আরো খবর