ঢাকা, সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

শেখ হাসিনার আরেকটা সৈয়দ আশরাফ কই?
বাণী ইয়াসমিন হাসি
বাণী ইয়াসমিন হাসি

বেশ সকালে ঘুম ভেঙেছে। আজ বের হওয়ার তাড়া নেই। আলসে সময়। দিনরাত এমন দৌড়ের উপর থাকি, কোনকিছুই খুব বেশিক্ষণ মাথায় থাকে না। আজ হাতে একটু সময় থাকায় ভাবনারা এলোমেলো। যেকোন ‘না’ বেশ যন্ত্রণার। আমি যখন কাউকে ‘না’ বলি তার ও তখন নিশ্চয়ই অনেক পেইন হয়!

কোনকিছুতে কোন তাড়াহুড়ো নেই আমার। মামা খালুর জোর নেই। বিশেষ কারো আশীর্বাদও নেই। ছোট ছোট পায়ে আগানোর চেষ্টা করছি। রাস্তটা খুব দূর্গম। জিদ আর আত্মবিশ্বাসের উপর ভর করে ‌অনেকটা খালি হাতেই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এটাও সত্যি এত মানুষের ভালোবাসা আর দোয়া পেয়েছি; যা আমি ডিজার্ভই করি না।

নয় বছর আগে যখন ‘বিবার্তা’র পথচলা শুরু হয় অধিকাংশ মানুষ অনুৎসাহিত করেছিলো। কিন্তু আমার মা চেয়েছিলেন চাকুরি নয়; আমি নিজে কিছু একটা করি। পথ চলতে চলতে অসংখ্য স্বজন পেয়েছি। তবে আমার হারানোর তালিকাটাও বেশ লম্বা। 

আমার প্রচুর দম। আমাকে হারানোটা এত সহজ নয়। লড়াইটা আমি মাঠে দাঁড়িয়েই করি। কারো পেছন থেকে ছুরি চালাই না আমি। আমার যা বলার তা আমি সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে সীনা টানটান করেই বলতে পারি। শক্ত প্রতিপক্ষ ছাড়া খেলে মজা পাই না আমি। একঘেয়ে পানসে জীবন পছন্দ না আমার। দ্রোহ আর বিপ্লবই আমার প্রেম।

গত ১৮ দিন ধরে লেখার চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই পারছি না। মাথায় অনেককিছু ঘুরছে অথচ লিখতে বসলেই সব হারিয়ে যাচ্ছে। এই শীতে ভাঙা হাত পায়ের ব্যথারা সব দলবেঁধে ফিরে এসেছে; বেশ ভোগাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে এই লিখতে না পারা টা।

একটা দীর্ঘ লড়াই সংগ্রাম ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা ১২ বছর ক্ষমতায়। দীর্ঘ লড়াইয়ের সময়টা কতজনের মাসের পর মাস ঘরে ফেরা হয়নি। বাবার সাথে ঈদের নামাজটা পর্যন্ত পড়া হয়নি। জীবিত মায়ের মুখটা দেখা হয় নি। জেলের অন্ধকারে কেটে গেছে বছর মাস। পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে।

এতো গেলো মাঠের খবর। এবার আছি প্রশাসনে - সামান্যতম আওয়ামীগন্ধ আছে বা ছাত্রলীগ এমন কেউ কি বিএনপি জামায়াতের আমলে ভালো কোন পোস্টিং পেয়েছে? মানসিক নির্যাতন আর হয়রানির কথা না হয় বাদই দিলাম! শেখ হাসিনার আমলে সবাই সুশীল, কেন রে বাবা? শেখ হাসিনা কি বাতাসে ভর করে ক্ষমতায় এসেছেন? লাখো কর্মীর ঘাম রক্ত আর আত্মত্যাগের বিনিময়েই আজকের আওয়ামী লীগ। আমি যখন রাস্তায় পুলিশ আর ছাত্রদলের মার খেয়েছি তুমি তখন এটা ওটা করেছো কিন্তু ভুলেও জয় বাংলা বলোনি। আজ তুমি বড় লীগার, বিশাল তোমার ত্যাগ। আমার চোখে তুমি নিকৃষ্ট সুবিধাবাদী। তোমার জন্য করুণা !

আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়টাতে আমি ছাত্রলীগ করতাম। ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম; এই পরিচয়টা একই সাথে আমার গর্ব এবং অহংকারের। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার সাথে আমার গভীর প্রেম। ভালোবাসি বলেই হয়তো প্রত্যাশার পারদটা আকাশছোঁয়া।

২১, বেইলী রোড ... সবকিছু আগের মতনই রয়ে গেছে শুধু আপনি নেই ভাই। চারপাশে নিত্য নতুন সার্কাস। আপনাকে ভীষণ মিস করছি আশরাফ ভাই। দামী পারফিউম, কালো চশমা আর গাঢ় মেকাপের আড়ালে রাজপথের নির্যাতিতরা যেন হারিয়ে না যায়।

ক্ষমতার রাজনীতিতে সৈয়দ আশরাফ ছিলেন বিরল এক ক্লাস। তাঁর মত স্বল্পভাষী-মিষ্টভাষী, পরিমিতিবোধসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবান মানুষ রাজনীতিতে বিরল। সৈয়দ আশরাফ দলের বাইরেও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। দেশ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার প্রতি সৈয়দ আশরাফের কমিটমেন্ট ছিল সব কিছুর ঊর্ধ্বে। কর্মীদেরকে উনার মত করে ধারণ করতে খুব কম নেতাই পেরেছেন। দলের ভেতরে বাইরে কাউকেই তিনি ব্যক্তিগত আক্রমণ বা আঘাত করে কথা বলেননি। আদর্শিক রাজনীতিতে পূর্বসূরিদের উত্তরাধিকারীত্ব বহন করে পথ হাঁটা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ঈর্ষণীয় ইমেজের পর অন্যান্য নেতাদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। কত নেতার কত রকম দৌড়-ঝাঁপ! নানা রকম কায়দা-কৌশলে বিভিন্ন মিডিয়ায় সৈয়দ আশরাফকে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অযোগ্য প্রমাণিত করার জন্য প্রচারণা চালানো হলো। কিন্তু যাকে সরানোর জন্য এত কিছু, সেই মানুষটি নির্বিকার। বরাবরের মতই নির্বিকার। কাউকে কিছু বলেননি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাউন্সিল অধিবেশনে বক্তৃতার জন্য যখন তাঁর নাম ঘোষিত হলো, মিতভাষী এই জ্ঞানতাপস, মুক্তিযোদ্ধা এবং আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতির ঋষিপুরুষ ধীরস্থির পায়ে মাইকের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তার পক্ষে-বিপক্ষের লাখো জনতা পিনপতন নীরবতায় অপেক্ষমাণ। সবার চোখেমুখে একটাই প্রশ্ন-তিনি কী বলবেন? 

তিনি অত্যন্ত আবেগ জড়ানো কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম’। এমন গভীরতর মর্মস্পর্শী শব্দাবলী বঙ্গবন্ধু ছাড়া আর কোন নেতার মুখে বাঙালি জাতি কখনো শোনেনি।

বিপুল অর্থায়নে নির্মিত আল জারিরার বাংলাদেশ বিরোধী নাটকটি অস্পষ্টতায় ভরা। শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র নতুন কিছু নয়। দেশী বিদেশী চক্র সমানভাবে সক্রিয়। ফেসবুক প্রোফাইলে আমি শেখ হাসিনার লোক/ আমরা শেখ হাসিনার লোক ফ্রেম খুব সহজ। একটা মাত্র ক্লিকের ব্যাপার। তবে শেখ হাসিনার সত্যিকারের ‘লোক’ হওয়া খুব কঠিন। চক্রান্তটা শেখ হাসিনার বিরূদ্ধে অথচ দলের কোন দায়িত্বশীল নেতাকে মুখ খুলতে দেখলাম না! 

যেকোন সংকট বা প্রোপাগান্ডার জবাবে কারো মুখের দিকে না তাকিয়ে আশরাফ ভাই দ্রুত উনার বক্তব্য বা মতামত জানিয়ে দিতেন। তাঁর ঐ পদক্ষেপ গুলো ছিল কুটচালের বিরূদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব। উনার মতন এমন বিচক্ষণ হৃদয়বান নেতা বিরল। শেখ হাসিনার আরেকটা সৈয়দ আশরাফ কই?

লেখক: সম্পাদক, বিবার্তা২৪ডটনেট।

বিডি-প্রতিদিন/ সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর