ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মাদকাসক্তি
অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী
অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী

জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ২৬ জুন সারা বিশ্বে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ পালিত হয়। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় : ‘Share facts on drugs, save lives’ বাংলায় তরজমা হয়েছে। ‘মাদক বিষয়ে হই সচেতন, বাঁচাই প্রজন্ম, বাঁচাই জীবন।’ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এ দিবসটি পালনের গুরুত্ব অনেক বেশি, কারণ করোনাভাইরাস কভিড-১৯ এর এ মহামারীর সঙ্গে ধূমপান ও মাদকের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পর্কের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে। ধূমপান বহু জটিল রোগ এবং কভিড মৃত্যুর প্রবণতাকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। কমিট টু কুইট তামাকবিরোধী প্রচারে এমনই হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা। বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশের ফলে আমাদের তরুণ যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার ৪৯% ভাগ মানুষ বয়সে তরুণ। অর্থাৎ দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ। মাদকের ব্যবসায়ীরা এ কর্মক্ষম তরুণ জনগোষ্ঠীকে মাদকের ভোক্তা হিসেবে পেতে চায়। সরকার ইতিমধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। 

গবেষকরা আসক্তদের শতকরা ৮০ ভাগ কিশোর তরুণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা ৯৮% ভাগই ধূমপায়ী এবং তার মধ্যে শতকরা ৬০% ভাগই বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনসহ রাজধানীতে সংঘটিত অধিকাংশ অপরাধের সঙ্গেই মাদকাসক্তির সম্পর্ক রয়েছে। 

একটি সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে মাদকাসক্তির কারণে প্রায় ২০০ পিতা-মাতা নিজ সন্তানের হাতে খুন হয়েছে। একথা অনস্বীকার্য, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানের কারণে মাদক পাচার ও সরবরাহ অনেকটাই কমে গেছে। বর্তমান করোনা মহামারীর কারণে নজরদারির কিছুটা শিথিলতার সুযোগ নিচ্ছে কারবারিরা। ডিএমপি থেকে জানা যায়, প্রতি মাসেই ঢাকার ৫০ থানায় গড়ে দেড় হাজার মাদক মামলা হয়। করোনা দুর্যোগের মধ্যেও এ চিত্র বদলায়নি। গত তিন মাসেও একই হারে মামলা হয়েছে। করোনাভাইরাসের এ মহামারীর মধ্যে মাদকের চোরাচালান অবৈধ পাচার বন্ধ হয়নি। কভিড-১৯ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা থমকে গেছে। অথচ এ মহাদুর্যোগেও মাদক কারবারি চক্রের চোরাকারবার থেমে নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশ, র‌্যাব, বিজিপি ও সেনাবাহিনীসহ করোনাভাইরাস সুরক্ষা কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকার সুযোগ নিচ্ছে মাদক কারবারি চক্রগুলো। বিভিন্ন কৌশলে দেশে মাদকের চালান আনছে তারা। বিভিন্ন যানবাহন যেমন অ্যাম্বুলেন্স, নিত্যপণ্য পরিবহনের গাড়িতে করে ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন নিয়ে আসছে কারবারিরা। দেশের মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফের ইয়াবা কারবারিরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান বন্ধ রাখেনি। কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠানো পার্সেলে এমনকি ত্রাণ বিতরণ এবং ওষুধ কেনাসহ বিভিন্ন অজুহাতে মাধ্যমে মাদক বিক্রি করছে তারা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে পচনশীল পণ্য যেমন শাকসবজি ও ফলমূল বহনকারী যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছতে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, এ সুযোগটিকেই বেছে নিয়েছে মাদক কারবারিরা। 

জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীর কারণে বেশ কয়েকটি দেশে নির্দিষ্ট কিছু মাদকের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে এর ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি নেতিবাচক দিকও কম নয়। কভিড-১৯ করোনা মহামারীর কারণে অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রীর মতো মাদক সরবরাহের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। 

জাতিসংঘ বলছে, অনেক মাদকাসক্ত বিকল্প হিসেবে আরও মারাত্মক মাদকদ্রব্য গ্রহণ করছে। এরই মধ্যে অনেক দেশে হেরোইন স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। সেসব দেশে এখন এমন মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে, যেগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং শরীরের ওপর হেরোইনের চেয়েও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। মাদকাসক্তরা অনেকেই ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন নেশাদ্রব্য প্রয়োগ করছে এবং একই সিরিঞ্জ একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করছে। ফলে এইচআইভি বা এইডস অথবা হেপাটাইটিস বি কিংবা সি ইত্যাদি রক্তবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ, এবং উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে হেরোইন ও কোকেনের সংকট তৈরি হচ্ছে। জাতিসংঘের ‘অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম’ (ইউএনওডিসি) বলছে, দেশে দেশে লকডাউন চলার কারণে মূলত মাদকদ্রব্যের এ সংকট। এসব এলাকায় বিমান ও সড়কপথে বেশির ভাগ মাদক চালান করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে এ দুই রুটেই পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়েছে মাদক পাচারেও। করোনা মহামারীকালীন ভারত মহাসাগরে হেরোইনের একটি বড় চালান ধরা পড়ে। 

এ ঘটনায় জাতিসংঘ বলছে, এ চোরাচালান প্রমাণ করে যে, নৌপথে মাদকদ্রব্য পাচারের প্রবণতা বেড়েছে। গাঁজার ক্ষেত্রে খুব একটা সংকট তৈরি হয়নি, কারণ গাঁজা স্থানীয়ভাবেই বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। 

আরও একটি ভয়ঙ্কর চিত্র হচ্ছে, ইয়াবা গ্রহণকারী ৮৫ ভাগই তরুণ যুবসমাজ। যার ফলে এ ইয়াবা গ্রহণকারী মাদকাসক্তরা নানা ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে- তার মধ্যে কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। 

একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জীবনীশক্তি ধ্বংসকারী ইয়াবা সেবনকারীরা অল্প সময়ের মধ্যেই মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন এবং যৌনশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন চিরতরে। বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ইয়াবা আসক্তদের ওপর পর্যবেক্ষণ করে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। 

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রে প্রায় ১৫ হাজার মাদকাসক্ত চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে প্রায় নয় হাজার ইয়াবাসেবী। টানা দুই-আড়াই বছর ইয়াবা সেবনের ফলেই তারা মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাদের নার্ভগুলো সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই দেশে ইয়াবা আসক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে ধারণা করছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।   মাদক গ্রহণকারীদের কাছে ইদানীং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সিসা। সিসা সেবন সিগারেটের মতোই ক্ষতিকর। সিসা অথবা হারবাল তামাকের কারণে মানুষ উচ্চমাত্রার কার্বন মনোক্সাইডজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, একবার সিসা সেবনে একটি সিগারেটের চেয়ে চার/পাঁচগুণ বেশি কার্বন মনোক্সাইড গ্রহণ করা হয়ে থাকে। উচ্চমাত্রার কার্বন মনোক্সাইডে মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে এবং অচেতন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইতিমধ্যে অনেকে ই-সিগারেটে আসক্ত হচ্ছে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, ই-সিগারেটের মধ্যে রয়েছে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং পরবর্তিতে মাদকের নেশায় আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। 

বর্তমান সরকার ২০১৯ সালের প্রথম দিন থেকেই মাদকবিরোধী যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের প্রথম দিন থেকেই সারাদেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলছে এবং প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবে। 

তাই, এমনি একটি সময়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ এবং মাদকাসক্তির করাল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করতে এ বছরের আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী এ দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের উন্নয়ন যেভাবে চলছিল তাতে মাদক দেশের উন্নয়নে অন্যতম বাধা বলে মনে করছে বর্তমান সরকার। এ বাধা দূর করতে মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলার কথা ঘোষণা দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। মাদকসহ গ্রেফতারকৃতরা এবং মাদক ব্যবসায়ীরা যাতে জামিনে ছাড়া না পায়, এজন্য নানা কৌশল নেওয়া হচ্ছে। সেইসঙ্গে মাদক বিক্রেতা, মাদকের বড় বড় ব্যবসায়ী ও আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যদের পৃথক পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতিপূর্বে তালিকাভুক্তদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হয়েছে এবং হচ্ছে। লক্ষ্য করা গেছে মাদকের সঙ্গে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার যোগসূত্র রয়েছে। তাই মাদকের বিষয়টি বর্তমান সরকারের জন্য বিশেষভাবে জরুরি। ইতিমধ্যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে হাজারখানেক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারও হয়েছে। সেইসঙ্গে লাখ লাখ ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক উদ্ধার হয়েছে। 

সম্প্রতি সরকারের একটি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, বিষয়টি হচ্ছে, এখন থেকে সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষা করা হবে। যাদের ডোপ টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হবে, তিনি চাকরির জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। আমাদের হিসাব মতে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। মাদকসেবীর অধিকাংশই বয়সে তরুণ, ধারণা করা হয়, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। দিনকে দিন মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ (সংশোধন) আইন-২০১৮-এর খসড়া/প্রস্তাবিত আইন সংশোধন; সময়ের সঙ্গে সংগতি রেখে ইতিমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ প্রণীত হয়েছে এবং আইনটি ইতিমধ্যে কার্যকর হয়েছে। নতুন এ আইন মাদক ব্যবসার নেপথ্যে ভূমিকা পালনকারীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। এ আইনে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সঙ্গে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ অন্য বাহিনীগুলোও এখন মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়, যে কারণে কমে এসেছে মাদকের চোরাচালান ও ব্যবহার। 

আমাদের দেশে মহিলাদের মধ্যে ও মাদকাসক্তের সংখ্যা বাড়ছে। এটা উদ্বেগের কারণ। নারী আসক্তদের ৯০ ভাগের বয়স ১৫-৩৫ বছরের মধ্যে। বাদ বাকি ৩৫-৪৫ বছরের মধ্যে। মাদকাসক্তদের মধ্যে শতকরা পাঁচজন নারী। তাদের মধ্যে ছাত্রী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী রয়েছেন। 

শুধু ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ মাদক উৎপাদনকারী দেশ না হওয়া সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে এদেশে মাদক প্রবেশ করে। ভৌগলিকভাবে গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেল রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রূপকল্প ২০২১ এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ২০৪০ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ যুবসমাজকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে মাদকমুক্ত পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। দেশকে মাদকমুক্ত করার জন্য প্রয়োজন ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি, বিশেষ করে ছাত্রসমাজকে টার্গেট করে মাদকবিরোধী প্রচারের কাজ করতে হবে ঐক্যবদ্ধভাবে। আমাদের সংগঠন মানস ৩০ বছর যাবৎ এদেশে যুবসমাজের মধ্যে মাদকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। 

মাদকাসক্তির পেছনে বিজ্ঞানীরা ও গবেষকরা বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করেছেন- কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো; ১) সমবয়সীদের চাপ ২। হাতের কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়া অর্থাৎ মাদকের সহজলভ্যতা, ৩) বেকারত্ব ও কর্মক্ষেত্রে ব্যর্থতা, ৪) আর্থসামাজিক অস্থিরতা, ৫) মাদকের কুফল সম্পর্কে অজ্ঞতা ৬) সমাজে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ৭) পারিবারিক কলহ ৮) চিকিৎসা সৃষ্ট মাদকাসক্তি ৯) কৌতূহল ১০) ধূমপান ইত্যাদি। 

মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তি স্বভাবতই চিকিৎসা নিতে চায় না। কারণ সে বুঝাতেই পাওে না যে, তার চিকিৎসার প্রয়োজন। আবার অনেকেই শারীরিক যন্ত্রণার ভয়ে মাদক চিকিৎসায় অনীহা পোষণ করে। এক্ষেত্রে পরিবারের স্ত্রী, বাবা- মা’দের নেশার নেতিবাচক দিক এবং জীবনের সম্ভাবনাময় বিষয়গুলোকে তুলে ধরে প্রতিনিয়ত সহমর্মিতামূলক আচরণের মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী করে তুলতে পারেন। এমনভাবে আচরণ করতে হবে যাতে সে বুঝতে পারে যে, আমরা তাকে ভালোবাসি, তার সুন্দর ও সুস্থ জীবনের জন্য আমরা সহযোগিতা করতে চাই। বেশিরভাগ মাদকাসক্তির Relapse হয় পরিবারের বৈরী এবং সন্দেহমূলক আচরণের কারণে। মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তিকে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে না পারলে যে কোনো সময় তার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। মাদকাসক্তি চিকিৎসায় ব্যক্তির নিজ ও তার পরিবারের সার্বিক সহযোগিতাসহ সেবা প্রদানকারী সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভালো করা যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে পরিবারের ভ‚মিকাই সবচেয়ে বেশি। মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তির চিকিৎসার সব পর্যায়ে পরিবারের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। 

একটি কথা না বললেই নয়, মাদকাসক্তির নাটের গুরু হচ্ছে সিগারেট। অর্থাৎ ধূমপান দিয়ে তারা তাদের নেশা শুরু করে। পরবর্তিতে তারা গাঁজা ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও কোকেনে আসক্ত হয়। 

করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আমরা যেমন মাস্ক ব্যবহার করি, হাত সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড ধুই এবং সেইসঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখি তেমনি অন্যান্য ঝুঁকি থেকেও আমাদের দূরে থাকতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে জীবনব্যবস্থার পরিবর্তন করা এখন জরুরি।  সুতরাং, করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে ধূমপায়ী ও মাদকাসক্তদের নেশা ত্যাগ করার জন্য চিকিৎসার মাধ্যমে (কাউন্সিলিং/রিহ্যাব) সুস্থ করা এখন সময়ের দাবি। আজকের দিনে এই আমাদের প্রত্যাশা। 

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানস, সদস্য, জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটি ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কর্ফোস, অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ডেন্টাল সার্জারী, বারডেম হাসপাতাল। prof.arupratanchoudhury@yahoo.com

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন 



এই পাতার আরো খবর