ঢাকা, রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪

আজকের পত্রিকা

সরকার সব কালেই আমলা নির্ভর অতএব...
হাসিনা আকতার নিগার
হাসিনা আকতার নিগার

ক্ষমতার পালাবদলে সরকার আসে সরকার যায়। কিন্তু সরকারি সচিব-আমলা কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আসন স্থায়ী। অবসর নেওয়া পর্যন্ত তারা হলো দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। 'মন্ত্রণালয় চালায় সচিব, মন্ত্রী নয়- এ প্রচলিত কথাটি বাস্তবিকভাবেই শতভাগ সত্য। একটা সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে। সংসদ, মন্ত্রী, এমপি সবাই জনপ্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে। তবে এ জনপ্রতিনিধিদের চালক হলেন সচিব-আমলারা। জাতীয় সংসদে জনগণের কথা বলেন সাংসদগণ। সেখানে আইন প্রনয়ণ, বাজেট থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রকল্পের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। আর এসব বিষয় বাস্তবায়ন করতে হলে সবার আগে যাদের প্রয়োজন তারা হলেন আমলা-সচিবরা। মন্ত্রী, এমপিরা প্রকল্পের চূড়ান্ত স্বাক্ষরদাতা কেবল। যদি আরও সহজ করে বলতে হয় তাহলে বলতে হয়, 'কোন প্রকল্প বা সরকারি কার্যক্রম জনপ্রতিনিধিদের এককভাবে করার সুযোগ নেই। কারণ সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক বিধিবিধান কারণে জনপ্রতিনিধিরা আমলা নির্ভর। যেমন একজন মন্ত্রী তার ইচ্ছে মত ফাইল স্বাক্ষর করে দিলেই কাজ হয় না। বরং তার চিন্তা কতটা যুক্তিযুক্ত  হবে তা ব্যাখ্যা করেন সরকারের সচিব-আমলা, কর্মকর্তা কর্মচারীরা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে। এ কারণে প্রশাসনিক ব্যবস্থা একজন সচিবের বিচক্ষণতা অনেক বেশি প্রাধান্য পায় সরকারের উদ্দ্যেশকে ফলপ্রসূ করে তুলতে। 

বর্তমান সরকার দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতাসীন হলেও জনগনের কাছে একমাত্র নির্ভরতার স্থল হলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এলাকার নির্বাচিত মন্ত্রী এমপিদের নিয়ে মানুষের রয়েছে নানা ধরনের ক্ষোভ আক্ষেপ। আবার দলের ত্যাগী নেতা কর্মীরা যথাযথ মূল্যায়ন পায় না বলে নিরব ভূমিকা পালন করে। আর সে সুযোগে দলে ভিড় করছে সুবিধাবাদী চরিত্রের ব্যক্তিরা। তারা আওয়ামী লীগের সিল লাগিয়ে ফায়দা নিচ্ছে সরকার থেকে আমলা মন্ত্রী এমপিদের হাত করে। এ অবস্থায় সরকার নিজের অবস্থানকে টিকিয়ে রাখতে আমলা নির্ভর হয়ে পড়েছে  মাত্রারিক্তিভাবে। দল এবং দলীয় কর্মীদের দুর্নীতি মুক্ত রাখতে গিয়ে আমলাদের দুর্নীতি যে সীমাহীন আকারে বাড়ছে তার প্রমান জনগণের কাছে আছে বহুভাবে। স্বাস্থ খাত থেকে শুরু করে প্রতিটি সেক্টরে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের দুর্নীতির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সরকার ও জনগণ। অথচ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হচ্ছে বারবার। অন্যদিকে দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে মামলা হামলার স্বীকার হতে হয় মানুষকে। কারন সরকার আমলা নির্ভরশীল। আমলাদের অনিয়ম দুর্নীতি যে সরকারের জন্য বড় দুর্বলতা। 

গ্রামের প্রবাদ 'শেয়ালের কাছে মুরগী ভাগা' দেয়ার মত ঘটনা ঘটেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন "আশ্রায়ন প্রকল্প।" সরকারি কর্তাব্যক্তিরা কতটা দুঃসাহসী হয়েছে তার প্রমান আশ্রায়ন প্রকল্পের দুর্নীতি। যদিও এখন প্রকল্পের বাজেট স্বল্পতার কথা বলা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে  তাদের উচিত ছিল বাজেট অনুযায়ী প্রকল্প গ্রহণ করা। এ প্রকল্পের একটি সেমি পাকা ঘর শুধু ঘর নয় এ ঘরের সাথে জুড়ে আছে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন সে কথাটা তোড়াই কেয়ার করেছে তারা। সারা দেশ জুড়ে যেনতেন ভাবে ঘর নির্মাণ করে সরকার প্রধানের বাহবা পেতে গিয়ে জনগণের সাথে তারা যে অন্যায় করেছে তা সত্যি নিন্দনীয়। আর অন্যদিকে তাদের এহেন কাজের কারণে সরকারের প্রতি জনগণের বিরূপ প্রভাব পড়ছে। তাই সরকারের উচিত আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় লাগাম টানা। তা না হলে জনগণ দীর্ঘ মেয়াদি এ সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে। 

বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের অন্য দেশের মত বাংলাদেশ ও করোনা ভাইরাসের সাথে লড়াই করছে। লকডাউনের কারণে মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে। করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে কথা বললেই স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম দুর্নীতির কথা চলেই আসে। সরকার থেকে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা ও সচেতনতা কার্যক্রমে জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার কথা বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন কতটা সমন্বিত হয়ে সততার সাথে কাজ করে তা আগামীতে দেখার বিষয়। 

সরকার যেমন জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ ও মানুষের সেবায় কাজ করে, তেমনিভাবে সরকারি আমলা, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তারা বেতন ভাতা সহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে জনগণের করের অর্থ থেকে। তাই সরকারকে আমলা নির্ভর হবার আগে ভাবতে হবে জনগণের ন্যায্য অধিকার পাওয়ার কথা। অতএব জনগণের মতামতের মূল্যায়ন করে সুষ্ঠু ভাবে দেশ পরিচালনা করতে হলে সবার আগে আমলাদের দুর্নীতিকে রোধ করতে হবে। তা না হলে 'আশ্রায়ন প্রকল্পের' ধসে পড়া ঘরগুলো বলবে 'আমলারা শুধু দেশে চালায় না, তাদের কাছে জিম্মি সরকার।'

সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে কেবলমাত্র জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সরকারের পক্ষে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করা সম্ভব নয়। আবার জনপ্রতিনিধিদের মাঝেও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। তাই দেশের উন্নয়নের ধারায় আমলা ও জনপ্রতিনিধি উভয়কেই দুর্নীতির রাহুমুক্ত হতে হবে। সরকারকে একটা চেইনের মাধ্যমে কাজ করতে হয়। সে চেইনে যদি অনিয়ম, দুর্নীতির মরচে ধরে তবে তার মেরামত করতে হবে সরকারকেই।কারন দিন শেষে সকল দায়ভার নিতে হয় জনগণের নির্বাচিত সরকারকে। সেখানে আমলারা আড়াল হয়ে যায় কারণ তারা জনগণের প্রতিনিধি নয়। সুতরাং আমলা নির্ভর সরকার না হয়ে জনগণের সরকার হলে দেশ এবং জনগণের জন্য উত্তম।

লেখক: কলামিস্ট 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন



এই পাতার আরো খবর